১৯৭২ সালের পর আবার চাঁদে যাচ্ছে মানুষ। ৩ এপ্রিল সোমবার এই অভিযানের চার নভোচারীর নাম প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি সিএসএ। তবে এই নভোচারীরা সরাসরি চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবেন না। চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আবার ফিরে আসবেন পৃথিবীতে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আর্টেমিস ২ মিশনে এই চার নভোচারী চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আসবেন।
ঐতিহাসিক আর্টেমিস ২ মিশনে প্রথমবার কোনো নারী নভোচারী চাঁদের উদ্দেশ্যে যাবেন। চার নভোচারীর মধ্যে একমাত্র নারী যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস্টিনা হ্যামক কোচ। এ ছাড়া বাকি তিনজনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নভোচারী ভিক্টর গ্লোভার ও রিড ওয়াইজম্যান। অন্যজন কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির ফাইটার উড়োজাহাজের সাবেক পাইলট জেরেমি হ্যানসেন। তাঁরা মোট ১০ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ফিরে আসবেন পৃথিবীতে। নভোচারীদের চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাবে নাসার এসএলএস রকেট। এটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট।
আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে মোট তিনটি মিশন পরিচালনা করা হবে। এ প্রোগ্রামের লক্ষ্য মানুষকে চাঁদে ফিরিয়ে নেওয়া এবং মঙ্গলে পাড়ি দেওয়া। এ প্রোগ্রামের প্রথম ধাপ অর্থাৎ আর্টেমিস ১ উৎক্ষেপণ করা হয় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর। এটা ছিল একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট। এ মিশনে কোনো মানুষ ছিল না। বরং মানুষের পরিবর্তে ছিল তিনটি পুতুল। পরীক্ষামূলক পুতুলগুলোকে পাঠানো হয়েছিল। আর্টেমিস ২ মিশনও অনেকটা আর্টেমিস ১ মিশনের মতোই সম্পন্ন হবে। শুধু পুতুলের পরিবর্তে নভোযানে থাকবেন চার নভোচারী। ২০২৫ বা ২০২৬ সালে চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে আর্টেমিস ৩। এ মিশনে চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন প্রথম কোনো নারী। আর্টেমিস ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে। ইতিমধ্যে অবতরণের সম্ভাব্য ১৩টি স্থানের নামও প্রকাশ করেছে নাসা।
আর্টেমিস ২ মিশনের নভোচারীদের নাম ঘোষণার সময় নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের অনুসন্ধানের জন্য আমরা আরও একটি নতুন যুগের সূচনা করেছি আর্টেমিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে। আমরা একসঙ্গে চাঁদে, মঙ্গলে এবং এর বাইরেও যাব।’
মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন রিড ওয়াইজম্যানের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১৬৫ দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা আছে। আর্টেমিস ২ মিশনে তিনি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করবেন।
আরেক মার্কিন নভোচারী ভিক্টর গ্লোভার আর্টেমিস ২ মিশনে অরিয়ন নভোযানের পাইলটের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি স্পেসএক্স-এর ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলের প্রথম পাইলট ছিলেন। তাঁরও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১৬৮ দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা আছে। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। এবার যাচ্ছেন চন্দ্রাভিযানে।
এই মিশনের একমাত্র নারী নভোচারী ক্রিস্টিনা হ্যামক কোচ। ২০১৯ সালে প্রথম নারী হিসেবে জেসিকা মেয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে স্পেসওয়াক করার রেকর্ড গড়েন। নারীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি ৩২৮ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থেকেছেন। এ মিশনে তিনি থাকবেন মিশন–বিশেষজ্ঞ হিসেবে।
চতুর্থ নভোচারী জেরেমি হ্যানসেন কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি থেকে মনোনীত হয়েছেন। তিনিই থাকবেন মিশন–বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির ফাইটার উড়োজাহাজের পাইলট ছিলেন। প্রথমবারের মতো মহাকাশে যাবেন তিনি।
সব মিলিয়ে এই চার নভোচারীর অভিযান ১০ দিনের। তাঁরা পৃথিবী থেকে ঠিক কত দূরে যাবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে নাসা জানিয়েছে, এই মিশনের চার নভোচারী পৃথিবী থেকে আগের যেকোনো মানুষের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দূরে যেতে পারেন।
আর্টেমিস ২ মিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ মিশনের ওপরই নির্ভর করবে আর্টেমিস ৩ মিশনের যাত্রা। অর্থাৎ মানুষের আবার চাঁদে যাওয়া। তাই এই মিশন সফল হলেই প্রায় ৫০ বছর পর আবার চাঁদে যাবে মানুষ।