মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ কত ভার তোলা সম্ভব
মানুষের পেশির শক্তির সীমা এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিক প্রস্তুতি আর শক্তির অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের ভারোত্তোলনের ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
২০১৬ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ডেডলিফ্ট চ্যাম্পিয়নশিপে’ ব্রিটিশ স্ট্রংম্যান এডি হল যখন ৫০০ কেজি ভার তুলেছিলেন, তখন পৃথিবীর মানুষ বিস্মিত হয়েছিল। এডি হল প্রথম মানুষ, যিনি আধা টন ভার তুলেছিলেন। পরে ২০২০ সালে আইসল্যান্ডের শক্তিশালী লোক হাফথর জুলিয়াস বিয়র্নসন ৫০১ কেজি ভারোত্তোলন করে এই রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।
একজন মানুষের তোলা সবচেয়ে ভারী ভারের রেকর্ডটি কানাডিয়ান ভারোত্তোলক গ্রেগ আর্নস্টের। যিনি ১৯৯৩ সালে প্লাটফর্মের ওপরে রাখা দুটি গাড়ি একসঙ্গে তুলেছিলেন। যার মিলিত ভার ২ হাজার ৪২২ কেজি।
তাই এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, একজন মানুষ কত ভার তুলতে পারবে? এর কি কোনো সীমা আছে? বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞান ম্যাগাজিন লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, সম্ভবত অ্যাথলেটরা এখনো তাঁদের পেশির সর্বোচ্চ ক্ষমতার চেয়ে কম ভার তুলেছেন। মানুষের শক্তির সীমা কত হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একজন মানুষের সর্বাধিক পেশি সক্ষমতা পরিমাপ করা কঠিন।
লেম্যান কলেজের ব্যায়ামবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্র্যাডলি শোয়েনফেল্ড বলেছেন, ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি (ইএমজি) মেশিন ব্যবহার করে পেশির শক্তি পরিমাপ করা যায়। ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি পেশির স্নায়ু উদ্দীপনা পরিমাপ করে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিনিক্যাল ফিজিক্যাল থেরাপির অধ্যাপক ই টড শ্রোয়েডার বলেন, এই সীমা নির্ধারণ করা কঠিন। তিনি বলেন, ‘আপনার পেশি সক্ষমতা নির্ধারণের একমাত্র উপায় ক্রমাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড স্থাপন করা।’
শারীরিকভাবে ব্যক্তির ভার বহন করার ক্ষমতা পেশির দুই প্রোটিন অ্যাকটিন এবং মায়োসিনের ওপর নির্ভর করে। এই দুটি প্রোটিন পেশিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। এই প্রোটিন পেশি তন্তুর মধ্যে সাজানো থাকে। ব্যক্তির পেশির ভর এবং এই তন্তুগুলোর অনুপাতের ওপর নির্ভর করে কে কতটা ভার তুলতে পারবে। এ ছাড়া অনুশীলন পদ্ধতি, জেনেটিক্স এবং লিঙ্গের মতো জৈবিক কারণের ওপরও এই ক্ষমতা নির্ভর করে। সাধারণভাবে তোমার পেশির ভর যত বেশি হবে, তুমি তত বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে।
বিখ্যাত ভারোত্তোলনকারীরা ক্রমাগত নিজেদের পেশির ভর বাড়িয়ে নিজের শক্তিসীমা বাড়িয়ে তোলেন। তবে পেশির ভর বাড়তে থাকলে একসময় শক্তির প্রয়োগসীমা কমতে থাকে। শেষে পেশি তাদের সীমাতে পৌঁছে যায়। পেশি বাড়িয়েও এর বেশি সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয় না।
কখনো কখনো কেবল পেশির ভর বাড়িয়ে তোলা যথেষ্ট না। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, শরীরের পেশির ভর কম, এমন মানুষও বেশি ভারের পেশিওয়ালা মানুষের চেয়ে বেশি ভারোত্তোলন করতে পারেন।
নির্দিষ্ট পরিমাণে ভারোত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। যদি ক্রমাগত নিজের সক্ষমতা বাড়ানোর মানসিকতা কেউ রাখে, তবে ধীরে ধীরে নিজের শক্তি বাড়ানো সম্ভব হয়। ভারোত্তোলনের জগতে এই ধারণা খেলোয়াড়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। কারণ, তাঁরা নিয়মিত নিজের রেকর্ড ভাঙেন।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স