গোলাপের রং লাল। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার পাপড়ি সাদা। কদম ফুল হলুদ। পৃথিবীজুড়ে আছে এ রকম আরও লাখো ফুল। আছে কোটি কোটি রং। অনেক রঙের নামও হয়তো শুনিনি আমরা। শোনার যে খুব দরকার আছে, তা-ও নয়। কারণ, একটি রঙের সঙ্গে অন্য রং মেশালেই উৎপন্ন হয় আরও নতুন একটি রং। এ রকম নতুন নতুন রং তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এত রঙের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রং কোনটি? এ প্রশ্নের সোজাসাপটা কোনো উত্তর নেই। আসলে মানুষের পছন্দের নির্দিষ্ট কোনো রং নেই। রং যেন একটা চলক। মানুষভেদে প্রিয় রঙের তালিকা বদলায়। চলো, আমরা একটু কয়েক বছর পেছনের পরিসংখ্যান খুঁজে দেখি—পৃথিবীবাসীর প্রিয় রং কী ছিল!
২০১৫ সালে ইউগভের (YouGov) একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নীল ছিল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় রং। এ দিকে ২০১৭ সালে ১০০টি দেশের ৩০ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে জনপ্রিয় রং খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল দ্য ইনডিপেনডেন্ট জার্নাল। তাদের তথ্য মতে, ওই বছর মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় রং ছিল গাঢ় নীল ও সবুজের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের রং, যা মার্স গ্রিন নামে পরিচিত। এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি, বিশ্বব্যাপী মাত্র ৩০ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় রং নির্ধারণ করা যুক্তিসংগত নয়। কিন্তু ১০০টি দেশের ওই তথ্যকেও একদম ফেলে দেওয়া যায় না।
আরও একটা বিষয় জেনে রাখা জরুরি। মানুষ তাঁর প্রিয় রংটি বাছাই করেন কীভাবে? সবুজ যাঁর প্রিয় রং, তাঁর প্রিয় রং কেন সবুজ হলো? কোনো পারিপার্শ্বিক বিষয়ের কারণেই কি তাঁর প্রিয় রং সবুজ? ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই। রং পছন্দের ব্যাপারটি সংস্কৃতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। ২০১৯ সালে প্রিসিপশন নামের একটি জার্নাল একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। পোলিশ, পাপুয়ান ও হাদজা জনগোষ্ঠীর মানুষের প্রিয় রং খোঁজার চেষ্টা করে তারা (হাদজা জনগোষ্ঠী তানজানিয়াতে বাস করে। তারা এখনো শিকার করে জীবন যাপন করে)। ওই জার্নালের মতে, এই তিন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভিন্ন। ফলে তাদের রং বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও আলাদা। তারা সাধারণত জীবনের অভিজ্ঞতা ও সামাজিকীকরণের ওপর ভিত্তি করে রং বাছাই করে। যেমন আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে ছেলেদের রং বলতে বোঝায় নীল ও মেয়েদের গোলাপি। এর অবশ্য একটা কারণ আছে।
২০১৩ সালে আর্কাইভস অব সেক্সুয়াল বিহেভিয়েররের একটি গবেষণা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪৯ জন মাতা–পিতার ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে তারা। যেখানে বেশির ভাগ ছেলেদের পছন্দের রং নীল এবং মেয়েদের পছন্দ লাল, বেগুনি ও গোলাপি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ওই দেশের মানুষের পছন্দের ওপরও দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে। যাঁদের পরিবারে শুধু একজন ছেলে বা একজন মেয়ে, সেই পরিবারে এই বিষয়ে প্রভাব ফেলেছে আরও বেশি। পরিবারে একসঙ্গে ছেলে ও মেয়ে না থাকায় তাঁরা সব সময় একটা রঙের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
সর্বোপরি বলা যায়, বিশ্বব্যাপী নির্দিষ্ট কোনো জনপ্রিয় রং নেই। দেশ, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও মানুষভেদে রঙের জনপ্রিয়তা বদলায়। তবে ঘুরেফিরে বেশির ভাগ মানুষেরই মৌলিক তিনটি রংই পছন্দের। এগুলো হলো—নীল, লাল ও সবুজ।
এবার চলো, ২০২২ সালের সেরা ১০টি জনপ্রিয় রং একনজরে দেখা যাক। সেরা ১০–এর তালিকাটি আমার নিজের তৈরি নয়। স্পেলি ডটকম অবলম্বনে লেখা হয়েছে নিচের সেরা ১০ রঙের তথ্য। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখেছি, এগুলোই আছে সেরা ১০–এ। তবে রঙের সিরিয়াল বা নাম্বারিংয়ে আছে পরিবর্তন।
১. নীল
সাধারণত নীলকে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় রং হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সবজান্তা গুগল মামার মতেও, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় রং নীল। এর একটি কারণও আছে। মাথার ওপর আকাশের রং নীল, সমুদ্রের রংও নীল। তাহলে নীলকে পছন্দ না করে আর উপায় আছে! নীল রঙের কাছাকাছি আরও আছে নেভি ব্লু (অন্যতম গাঢ় রং), স্কাই ব্লু (অন্যতম হালকা রং)।
২. কালো
সবচেয়ে গাঢ় রং কালো। বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষের প্রিয় রং এটি। এটি সব রঙের মিশ্রণ। আমাদের নিজেদের ছায়ার রংও কালো। সাদা ও ধূসর রঙের মতো কালোও রংহীন। স্পেলির মতে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় সেরা রং কালো।
৩. লাল
লাল মানেই আবেগ ও ভালোবাসা। প্রায়ই প্রিয়জনদের দেওয়া হয় লাল গোলাপ। তবে লাল কিন্তু বিপদেরও প্রতীক। এই রং একই সঙ্গে যেকোনো মানুষকে আকর্ষণ ও বিভ্রান্ত করতে পারে। লাল ভয়ংকর ও ভালোবাসার প্রতীক। বিশ্বব্যাপী মানুষের পছন্দের তালিকায় এটি রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
৪. গোলাপি
বেশির ভাগ নারী সাধারণত গোলাপি রং পছন্দ করেন। তবে রংটি নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক। যেকোনো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, যাঁদের প্রিয় রং গোলাপি, তাঁরা অন্যের প্রতি সদয় ও উদার হন।
৫. সবুজ
প্রকৃতির রং সবুজ। সাধারণত ভারসাম্যপূর্ণ মানুষদের প্রিয় রং এটি। এই রং দ্রুত চোখকে আকৃষ্ট করে। সবুজ রং আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি দেয়। আত্মসম্মান ও কল্যাণেরও প্রতীক সবুজ।
৬. ধূসর
ধূসর নিরপেক্ষ, ভারসাম্যপূর্ণ ও একটি আবেগহীন রং। রংটি সাদা ও কালোর মাঝামাঝি। এই রঙের কাছাকাছি আরও প্রায় ৫০টি রং আছে।
৭. কমলা
কমলা একটি প্রাণবন্ত রং। অনেকে বলেন, যাঁদের প্রিয় রং কমলা, তাঁদের ধনী হওয়ার সম্ভাবনা আছে (বাস্তবে অবশ্য এ কথার কোনো ভিত্তি নেই)। ২০২২ সালে সেরা সাতে ছিল কমলা রং।
৮. সাদা
সাদাকে অনেকেই নতুন ও রহস্যময় মনে করেন। এই রঙের মাধ্যমে বিশুদ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সাদা রং প্রায় সবকিছুর সঙ্গে মেলে। সূর্য থেকে আসা একমাত্র রং সাদা। এটাই পরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে বিভিন্ন রঙে পরিবর্তিত হয়।
৯. হলুদ
হলুদও একটি উজ্জ্বল রং। প্রতিটি মানুষের জীবনে হলুদ রঙের যথেষ্ট তাৎপর্য আছে। কীভাবে? কারণ, সূর্যের আলোর রং হলুদ (যদিও সূর্যের আলো সাদা। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্যের আলো বিচ্ছুরণের কারণে আমাদের চোখে হলুদ দেখায়)। তুমি হয়তো খেয়াল করেছো, স্মাইলি ইমোজির রংও হলুদ। লাল ও হলুদ রং মেশালে পাওয়া যায় কমলা রং। আবার হলুদের সঙ্গে নীল রং মেশালে পাওয়া যায় সবুজ।
১০. বাদামি
বাদামি রং গাঢ় হলেও প্রাণবন্ত নয়। লাল, কালো ও হলুদের রঙের মিশ্রণে বাদামি রং উৎপন্ন হয়। এই রঙের কাছাকাছি আরও অনেক রং আছে। ২০২২ সালের সেরা রঙের তালিকায় বাদামি ছিল ১০ নম্বরে।
এখান থেকে তোমার প্রিয় রং কোনটা? জানাতে পারো কমেন্টে।