মহাকাশে পপ তারকা কেটি পেরিসহ আরও পাঁচ খ্যাতিমান নারী
১৪ এপ্রিল মহাকাশে থেকে ঘুরে আসেন পপ তারকা কেটি পেরিসহ আরও পাঁচজন নারী। তাঁরা প্রায় ১১ মিনিট মহাকাশে অবস্থান করেন। ব্লু অরিজিনের তৈরি নিউ শেপার্ড মহাকাশযানে করে মহাকাশের নিম্ন কক্ষপথে, অর্থাৎ সাব–অরবিটাল স্পেসে ভ্রমণ করেন তাঁরা। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলো ব্লু অরিজিন।
‘ব্লু অরিজিন এনএস-৩১’ মহাকাশ মিশনে ছিলেন বিশ্বখ্যাত পপ তারকা কেটি পেরি সাংবাদিক গেইল কিং, সমাজসেবী লরেন সানচেজ, মহাকাশ প্রকৌশলী আইশা বো, বায়ো–অ্যাস্ট্রোনটিকস গবেষক আমান্ডা গুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন। এটিই প্রথম এমন একটি মহাকাশ মিশন, যেখানে শুধু ছয়জন নারী অংশ নিয়েছেন। এই অভিযান নিয়ে আজকের লেখা।
স্পেসশিপের ভেতর বসে লুইস আর্মস্ট্রংয়ের গান, ‘হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড’ গাইছেন বিশ্বখ্যাত পপ তারকা কেটি পেরি। তাঁর হাতে একটি ডেইজি ফুল। তিনি নিজের মেয়ের প্রতীক হিসেবে ফুলটি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। স্পেসশিপের কাচের ওপাশে আলো–আঁধারির এক অচেনা শূন্যতা। কেটি পেরির সঙ্গে আরও পাঁচজন নারীকে বহনকারী এই যান তখন পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৬ কিলোমিটার ওপরে মহাশূন্যে ভাসছে। এই উচ্চতা থেকে নিচের দিকে তাকালেই বোঝা যায়—পৃথিবী আসলেই গোলাকার। এভাবেই ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল প্রায় ১১ মিনিটের মহাকাশভ্রমণে ৬ নারী পৌঁছে গিয়েছিলেন সাব–অরবিটাল স্পেসে। কেমন ছিল তাঁদের অভিজ্ঞতা? নতুন ধরনের এই মহাকাশ পর্যটন এখন ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে উঠল কেন?
‘টিনএজ ড্রিম’খ্যাত কেটি পেরিকে হয়তো তোমরা অনেকেই চেনো। কিন্তু ‘ব্লু অরিজিন এনএস-৩১’ শীর্ষক এই ব্যতিক্রমধর্মী মহাকাশভ্রমণে কেটি পেরির সঙ্গী হয়েছিলেন আর কারা? ব্লু অরিজিন এনএস-৩১–এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো—স্পেসশিপে থাকা সবাই ছিলেন নারী। কেটি পেরির পাশাপাশি এই দলে ছিলেন সাংবাদিক গেইল কিং, সমাজসেবী লরেন সানচেজ, মহাকাশ প্রকৌশলী আইশা বো, বায়ো–অ্যাস্ট্রোনটিকস গবেষক আমান্ডা গুয়েন এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন। ১১ মিনিটের এই মহাকাশভ্রমণে তাঁরা ভারশূন্যতা অনুভব করেছেন এবং পৃথিবীকে দেখেছেন এক নতুন আঙ্গিকে। তাঁরা মহাকাশভ্রমণে নারীদের এমন অংশগ্রহণকে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
নিজেদের এই ‘আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেটি পেরি বলেন, এই মহাকাশভ্রমণ তাঁর ভেতর পৃথিবীর প্রতি টান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গেইল কিং বলেন, ‘আমাদের ভ্রমণ নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা বুঝতেই পারছেন না এখানে আসলে কী ঘটছে।’ তাঁর মতে, এই ভ্রমণ বিশ্বব্যাপী নারীদের অ্যারোস্পেস বিষয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করবে। এই ভ্রমণ কম বয়সী মেয়েদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে যে তারাও একদিন মহাকাশে যেতে পারে।
অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার আইশা বো স্মরণ করেন তাঁর হাইস্কুল জীবনের নিরুৎসাহ দিনগুলো। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের জগতে নারীদের উপস্থিতি অনেক জরুরি। কারণ, এতে করে ভবিষ্যতের মেয়েরা অনুপ্রাণিত হয়। আর এই মিশন ছিল সে উদ্দেশ্যেই। বায়ো–অ্যাস্ট্রোনটিকস গবেষক আমান্ডা গুয়েন এই মিশনকে দেখছেন ‘সমঝোতা ও শান্তির প্রতীক’ হিসেবে। ভিয়েতনাম ও দক্ষিণপূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা চাই, বিজ্ঞানের জায়গাটা হোক সর্বজনীন। আমাদের এই ভ্রমণ সেটিই প্রমাণ করে।’
কিন্তু এই মহাকাশভ্রমণ নিয়ে সমালোচনাটা আসলে কী?
স্পেসশিপে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন হয়তো তোমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছ। তাই হয়তো বুঝতেই পারছ, একটি স্পেসশিপ বানানো মোটেও সহজ নয়। মাত্র হাতে গোনা কিছু কার্যকর মহাকাশযান রয়েছে পৃথিবীতে, যেগুলো মানুষকে মহাকাশে নিয়ে যেতে সক্ষম। এসব মহাকাশযান বর্তমানে কিছু সরকারি কিংবা বেসরকারি স্পেস এজেন্সির হাতেই রয়েছে—সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। বেশির ভাগ মহাকাশযান বর্তমানে গবেষণার খাতিরে ব্যবহার করা হয়।
তাহলে কেটি পেরিসহ অন্যরা কোন স্পেসশিপে চড়ে ঘুরতে গেলেন? জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা, জেফ বেজোসের বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিনের তৈরি সাব–অরবিটাল রকেট, নিউ শেফার্ড। আর এই নিউ শেফার্ড রকেটে চড়েই মহাকাশে গিয়েছিলেন তাঁরা। রকেটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম।
তবে এমন একটি রকেট চালাতে অনেক জ্বালানি খরচ হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি, ফসিল ফুয়েল নামে আমরা যা চিনি, সেটি একটি সীমিত সম্পদ। এই সম্পদ একবার শেষ হয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। একটি গবেষণার খাতে জ্বালানি খরচ করা আর বিনোদনের জন্য জ্বালানি খরচ করা—দুটি বিষয় এক নয়। পাশাপাশি, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। আর একটি রকেট ছোড়ার পেছনে লাগে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সেই সঙ্গে দরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। তাই বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশ পর্যটনে এত টাকা খরচ করাকে অনেকেই কেবল বিলাসিতা বলে দেখছেন। কেউ কেউ একে আবার তারকাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে মনে করছেন।
পরিবেশগত ক্ষতির দিক থেকে এবং বিপুল অর্থ খরচের দিক থেকে ব্লু অরিজিনের এনএস-৩১–এর যাত্রাকে অনেকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তবে কেউ কেউ এটিকে সাধুবাদও জানাচ্ছেন—বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য। একটা ব্যাপারে অবশ্য অনেকেই একমত। কেটি পেরিদের এই ভিন্নধর্মী মহাকাশভ্রমণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ পর্যটনের এক নতুন দুয়ার খুলে গেল।