মহাকাশ স্টেশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা উপন্যাসের জন্য বুকার পুরস্কার
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে দেখা পৃথিবীর সৌন্দর্য ও ভঙ্গুরতা নিয়ে ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে লিখেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য উপন্যাস 'অরবিটাল'। এই উপন্যাস তাঁকে সম্মানজনক ম্যানবুকার পুরস্কার এনে দিয়েছে। পুরস্কার হিসেবে তিনি পাচ্ছেন ৫০ হাজার পাউন্ড (৬৪ হাজার ডলার)।
কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের সময় বইটি লেখা শুরু করেছিলেন হার্ভে। এই বইয়ে আছে মকাশ স্টেশনে আটকে পড়া ছয় নভোচারীর গল্প। ঘুরতে থাকা মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীরা প্রতিদিন ১৬টি করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন। বাধ্য হয়ে একে অপরের সান্নিধ্যে থাকা নভোচারীদের সামনে প্রতিনিয়ত থাকে পৃথিবী।
হার্ভে বলেছেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখা একটা শিশুর আয়নায় তাকানোর মতো। যে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করে আয়নায় থাকা মানুষটা সে নিজেই।’ হার্ভে মহাকাশচারীদের লেখা বই পড়ে এবং স্পেস স্টেশনের লাইভ ক্যামেরা দেখে উপন্যাসের প্লট তৈরি করেছেন। তিনি বলেছেন, উপন্যাসটি ঠিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নয়, তবে পৃথিবীকে দেখলে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সত্যকে বোঝা যায়। বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী গ্যাবি উড বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক সংকটের এই বছরটি সম্ভবত রেকর্ডকৃত ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে।
লেখক ও শিল্পী এডমন্ড ডি ওয়াল ছিলেন বুকারের পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সভাপতি। তিনি বলেছেন অরবিটাল একটি ‘অলৌকিক উপন্যাস’। অরবিটাল বইটি বিশ্বকে আমাদের কাছে অদ্ভুত এবং নতুন করে তুলেছে।
হার্ভে এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন ‘পৃথিবীর পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, অন্য মানুষের মর্যাদার বিরুদ্ধে, অন্য জীবনের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন না, তাঁদেরকে। 'যারা শান্তির পক্ষে কথা বলেন, আহ্বান জানান এবং কাজ করেন, তাঁদের জন্য।
অনিদ্রা নিয়ে আগে চারটি উপন্যাস ও স্মৃতিকথা লিখেছেন হার্ভে। ২০২০ সালের পর তিনিই প্রথম ব্রিটিশ লেখক যিনি বুকার জিতলেন। বুকার পুরস্কার যে কোনও দেশের ইংরেজি ভাষার লেখকদের জন্য উন্মুক্ত। বিখ্যাত অনেক লেখকই এর আগে বুকার জিতেছেন। ইয়ান ম্যাকইওয়ান, মার্গারেট অ্যাটউড, সালমান রুশদি ও হিলারি ম্যানটেল এর আগে এই পুরস্কার জিতেছেন। ১৩৬ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট উপন্যাসটি সর্বকালের অন্যতম সংক্ষিপ্ত বই যেটি বুকার জেতেছে।
পুরস্কারের জন্য জমা পড়া ১৫৬টি উপন্যাসের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পাঁচ চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে বুকার ২০২৪ জিতেছেন ব্রিটিশ লেখক হার্ভে। ২০১৯ সালের পর হার্ভে প্রথম নারী বুকার বিজয়ী। এ বছরের শর্টলিস্টে থাকা পাঁচজনই ছিলেন নারী। বুকার পুরস্কারের ৫৫ বছরের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। তবে লেখকদের লিঙ্গ পরিচয় বা জাতীয়তার মতো বিষয়গুলো বিচারকদের প্রভাবিত করে না।
১৯৬৯ সালে প্রথম বুকার পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয়। গত বছর বিজয়ী হয়েছিলেন আইরিশ লেখক পল লিঞ্চ ‘প্রফেট সং’-এর জন্য।
পুরস্কার পেয়েছেন শুনে হার্ভে অভিভূত হয়েছেন। পুরস্কারের টাকা দিয়ে প্রথমে ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। একটি নতুন বাইকও কিনতে চান। আর বাকি টাকা দিয়ে ঘুরতে যাবেন জাপানে।
সূত্র: সিএনএন