প্রযুক্তি
বেশি গেম খেললে কি মোবাইলের ক্ষতি হয়
আমাদের বাবা-মা নিয়মিতই প্রশ্ন করে, বেশি গেম খেললে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় কি না? তবে আজকে একটা উল্টো প্রশ্ন করি। যে যন্ত্র দিয়ে সারা দিন গেম খেলি, সেটির আসলে সমস্যা হয় কি না?
প্রশ্নটা দেখে একটু অবাক হতে পারো। সাধারণত মানুষ উল্টো প্রশ্নটা করে। বিশেষ করে আমাদের বাবা-মা। তাঁদের প্রশ্ন, বেশি গেম খেললে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় কি না? তবে আজ আমরা মা–বাবার প্রশ্নের দিকে না গিয়ে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করব। যে যন্ত্র দিয়ে সারা দিন গেম খেলি, সেটির আসলে সমস্যা হয় কি না? অর্থাৎ টানা অনেক সময় ধরে গেম খেললে মোবাইলের কি কোনো সমস্যা হতে পারে?
এককথায় এ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ। দীর্ঘ সময় ধরে গেম খেললেই মোবাইলের কিছু ক্ষতি অবশ্যই হবে। তবে সেই ক্ষতির পরিমাণ কতটা হবে, সেটা নির্ভর করে তোমার খেলার ধরন, মোবাইলের ক্ষমতা ও গেমের ওপর। বুঝিয়ে বলছি।
‘মোবাইল লিজেন্ডস’ বাংলাদেশসহ বিশ্বে একটা জনপ্রিয় গেম। এর চেয়ে বেশি জনপ্রিয় গেম 'পাবজি' বা 'ফ্রি ফায়ার' তো আছেই। তবে মোবাইল লিজেন্ডসের কথা বলার একটা বিশেষ কারণ আছে। ধরো, তুমি যে মোবাইলটা দিয়ে গেম খেলো, ওটা ৪ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি রমের। র্যাম (RAM) হলো মোবাইলের একটা মেমরি। তুমি একসঙ্গে যে কাজগুলো মোবাইলে করবে, তা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব এই র্যামের। ধরো তুমি গেম খেলছ, সঙ্গে আবার গানও শুনছ। তোমার বন্ধু মেসেজ দিলে তুমি সেটার উত্তরও দিচ্ছ। এই যে মোবাইলে একসঙ্গে তুমি অনেকগুলো কাজ করছ, এগুলো মেমোরিতে সংরক্ষণ করা থাকে। তবে ফোন বন্ধ করলে সংরক্ষিত ডেটাগুলো সব আবার চলে যাবে। মানে র্যাম হলো একটা অস্থায়ী মেমরি। মোবাইলের র্যাম যত বেশি থাকে, স্পিড তত বেশি হয়। আর রম (ROM) একধরনের মেমোরি, যেখানে মোবাইলের সব সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো সংরক্ষিত থাকে। এটা হলো স্থায়ী মেমরি। মোবাইল বন্ধ করলেও এই ডেটা থেকে যাবে। সহজভাবে বললে, তোমার স্কুলের ব্যাগ হলো র্যাম যেখানে তুমি শুধু নির্দিষ্ট কিছু বই নিয়ে যাও। আর রম হলো তোমার বাসার পড়ার টেবিল, যেখানে তোমার সব বই একসঙ্গে থাকে।
যাহোক, প্রসঙ্গে ফেরা যাক। তোমার ৪ জিবি র্যামের মোবাইলে মোবাইল লিজেন্ডস গেমটা ডাউনলোড করলে। এটা প্রায় ৩ জিবি সাইজের গেম। তোমার মোবাইলের রম কিন্তু ৬৪ জিবি। তাই এই গেমটা তোমার মোবাইলে অনায়াসে চলার কথা। কিন্তু ভালোভাবে চলবে না। খেলা কঠিন হবে। কারণ, গেমের ভেতরের সব ডেটা ডাউনলোড করলে প্রায় ১০-১২ জিবি জায়গা চলে যাবে। এ অবস্থায়ও যদি তুমি গেমটা খেলার চেষ্টা করো, তাহলে মোবাইলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেবে। আবার তুমি যদি এত ভারী গেম না খেলে ১ জিবি সাইজের বা তার চেয়েও কম ভারী গেম খেলো, তাতেও মোবাইলের কিছু সমস্যা হবে। এ জন্যই শুরুতে বলেছিলাম, মোবাইলের কতটা ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করে মোবাইল, গেম ও তোমার খেলার ধরনের ওপর।
ভারী গেম বা একসঙ্গে অনেকগুলো গেম বা অ্যাপ চালালে মোবাইলের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে মোবাইল স্লো হয়ে যায়। ধরো, তুমি টানা ৫ মিনিট দৌড়াতে পারো। কিন্তু তোমাকে যদি ২০ মিনিট দৌড়াতে বলা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে দৌড়ের গতি কমে যাবে। প্রতিদিন তোমার সাধ্যের বাইরে দৌড়াতে বললে তোমাকে আর মাঠেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোবাইলের অবস্থাও হবে তা–ই। ওর সাধ্যের বাইরে বেশি সময় ব্যবহার করলে বা বেশি ভারী গেম খেললে মোবাইল আর কাজ করবে না।
এখানেই শেষ নয়। মোবাইলে গেম খেলা মানে বারবার স্ক্রিনে টাচ করা। টানা অনেক সময় স্ক্রিনে টাচ করার কারণে মোবাইলের টাচ সেন্সিটিভিটি দুর্বল হতে শুরু করবে। আগে যত দ্রুত টাচ করত, ধীরে ধীরে তা কমবে। হয়তো একবারের জায়গায় একাধিকবার চাপ দিতে হতে পারে। একটা খাতায় যদি বারবার পেনসিল দিয়ে লিখতে থাকো, তাহলে কাগজ ছিঁড়ে যাবে। মোবাইলের টাচও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তা ছাড়া মোবাইল ধীরে কাজ করবে। এতে চার্জ শেষ হয়ে যাবে দ্রুত। ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমে যাবে। মোবাইল ধীরে ধীরে গরম হতে শুরু করবে। আসলে মোবাইল গরম হয়ে গেলে আর ব্যবহার করা উচিত নয়। মোবাইলের সাধ্যের বাইরে চলে গেলেই তখন ওটা গরম হয়ে যায়। গরম হওয়া মানে তোমাকে সংকেত দেওয়া যে আমি আর পারছি না।
তা ছাড়া বেশি সময় মোবাইল ব্যবহার করলে আমাদের চোখেরও ক্ষতি হয়। তাহলে কি গেম খেলা বন্ধ করে দেবে? না। তুমি গেম খেলবে, কিন্তু সেটা অল্প সময়। কারণ, গেম খেলারও কিন্তু কিছু ভালো দিক আছে। সে ব্যাপারে পরে একদিন আলোচনা করা যাবে। আপাতত টানা বেশি সময় গেম না খেলা মোবাইল ও স্বাস্থ্য—উভয়ের জন্য ভালো। তোমার মোবাইলের র্যাম ও রম কতটা ভালো, তা হিসাব করে গেম ডাউনলোড করা উচিত। যে গেম খেলতে চাও, তা মোবাইল সামলাতে পারবে কি না, তা বিবেচনা করে খেললে মোবাইলের ক্ষতি কমানো যায়। মোবাইল যাতে গরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে মোবাইল ব্যবহার করলে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।