শব্দ আর দূষণ থেকে বাঁচতে শহরের এই বাড়ি বানানো হয়েছে ১৫০ গাছ দিয়ে
এমন যদি হতো, শহরে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই দেখা যেত খানিকটা সবুজের সমারোহ! হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেওয়া যেত দু-একটা মৌসুমি ফল। গাড়ির হর্নের শব্দে নয়, পাখির ডাকে ভাঙত ঘুম। তবে কেমন হতো? শুনতে গল্পের মতো হলেও এটাই করে দেখিয়েছেন ইতালির স্থপতি লুসিয়ানো পিয়া। ইতালির তুরিন শহরে তাঁর নকশা করা পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি দেখে মনে হয়, এই ভবনের বাসিন্দারা যেন একটি ট্রি হাউসে থাকেন। গাছের পাতা ঝরে গিয়ে শীতের মিষ্টি রোদ তাদের যেমন দেয় উষ্ণতা, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে এই গাছগুলোই আবার আটকে দেয় রোদের উত্তাপ।
আধুনিক নকশার এই বাড়ির প্রতিটি স্তরে স্তরে আছে প্রকৃতি আর ইট-পাথরের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। ভার্দের এই বাড়িজুড়ে ১৫০টি গাছের বিন্যাস শুধু দৃষ্টিনন্দনই না, নজর রাখা হয়েছে স্থানীয় উৎস আর ঋতুবৈচিত্র্যে এদের টিকে থাকার সক্ষমতার দিকে। নিশ্চিত করা হয়েছে সব ঋতুতেই কোনো না কোনো গাছে যেন রংবেরঙের ফুল ফোটে। এই গাছগুলো প্রতি ঘণ্টায় উৎপন্ন করে প্রায় ৪০ হাজার গ্যালন অক্সিজেন; আর ঘণ্টাপ্রতি শুষে নেয় ৫২ হাজার গ্যালন কার্বন ডাই–অক্সাইড। এই ভবনের বাসিন্দারা পান বিশুদ্ধ বাতাস, শব্দদূষণ থেকে সুরক্ষা।
স্টিল আর কংক্রিট দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব এই ভবনে আছে ৬৩টি ইউনিট। প্রায় প্রতিটি ইউনিটে আছে দুটি বারান্দা, যার একটি সবুজ দিগন্তের দিকে ফেরানো, অন্যটি রাস্তার দিকে। বাড়িটির স্থাপত্য নকশায় বিভিন্ন স্থানে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যেন বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়। আর এই পানি ব্যবহার করা হয় গাছপালা পরিচর্যায়। বারান্দায়, ছাদে, আঙিনার গাছগুলো যেন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, এ জন্য বাড়িটিতে আছে সব রকম আয়োজন। স্থপতি লুসিয়ানো পিয়া তাঁর অপরিসীম দক্ষতায় বাড়িটিতে এমন সব বিষয় সংযোজন করেছেন, যেন বসবাসকারী আর প্রকৃতির মধ্যে তৈরি হয় দৃঢ় সেতুবন্ধ। তিনি তাঁর এই ট্রি হাউস নিয়ে বলেছেন, ‘এটি একটি বিশেষ ভবন, কারণ এটি জীবিত। এটি শ্বাস নেয় এবং পরিবর্তিত হয়।’
গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এ বছরই প্রথম টানা ১৬ দিনের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ অনুভব করল বাংলাদেশের মানুষ। এর একটি কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীজুড়ে এক বিলিয়ন হেক্টর জমিতে বনায়ন করা সম্ভব হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমবে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে লুসিয়ানো পিয়ার ভবনটির মতো এমন পরিবেশবান্ধব ভবন নগরায়ণে যুক্ত করা জরুরি।
ঢাকায় দু–একটা বাড়ি চোখে পড়ে যেখানে চেষ্টা হয়েছে ভবনকে সবুজে ঢেকে দেওয়ার। ধানমন্ডি ২৮ নম্বর সড়কে আছে এমন একটি বাড়ি। দেখতে যেমন সুন্দর, পরিবেশের জন্যও উপকারী।