ফলের কথা শুনলেই ভয় পেয়ে যায় অনেকে। ব্যাপারটা ভয় পাওয়ার মতোই। প্রায়ই এই ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় আমাদের। ফল খারাপ হলে মা-বাবার হাতের সঙ্গে আমাদের পিঠের একটা করুণ সেতুবন্ধ তৈরি হয়ে যায়; যা আমরা কখনোই চাই না। আমরা পরীক্ষার ফলের চেয়ে গাছের ফল পেতে অনেক বেশি পছন্দ করি। তার পরও গাছের ফলের চেয়ে পরীক্ষার ফল নিয়েই বেশি ভাবতে হয় আমাদের। তবে মজার ব্যাপার হলো, ১০টি ফলের নাম লিখতে বললে আমরা নিশ্চয়ই দ্রুত লিখে ফেলতে পারব। কিন্তু যদি ২০টি বা ৩০টি ফলের নাম লিখতে বলা হয়? তাও এমন সব ফল, যেগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায়? তখন একটু ঝামেলা হয়ে যাবে। অনেকেই হয়তো গালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে বসে পড়ব। এত ফল আছে নাকি? অবাক করা ব্যাপার হলেও সত্যি সত্যি এত ফল আছে আমাদের দেশে। প্রায় সব কটি ফলই বেশ সুস্বাদু। তবে সমস্যা হলো, বাজারে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জামরুল—এসব প্রচলিত ফলের প্রভাবে অপ্রচলিত ফলগুলো লাইমলাইটে আসতে পারে না। এ জন্য ওই ফলগুলোর মনে হালকা দুঃখ থাকতেই পারে। তাই আমাদের উচিত সেই ফলগুলোকে চিনে তাদের দুঃখ দূর করা। কিন্তু ফল চিনব কীভাবে? ফলের গায়ে তো আর নাম লেখা থাকে না। সে জন্যই প্রচলিত-অপ্রচিলত সব ফল চেনাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজন করেছিল ফল প্রদর্শনীর। ১৬ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত চলা এই প্রদর্শনীতে না গেলে জানাই হতো না যে দেশে এত ফল আছে!
যেমন ধরো ডেফল। হয়তো ভাবছ, এই ফল শুধু দিনেই দেখা যায়। তা নয়, তবে ডেফলের ইংরেজি নামটা খুব মজার—এগ ট্রি। আমাদের দেশের এই ফলটা এখন অপ্রচলিত ফলের দলে চলে গেছে। কিন্তু ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ পাহাড়ি অঞ্চলের এ ফল খেতে খুবই মজা। এ রকমই আরেকটা মজার ফল হলো আঙুর পেয়ারা। দেখতে আঙুরের মতো, কিন্তু খেতে পেয়ারার মতো মিষ্টি বলেই বোধ হয় এই ফলের এমন নাম। ভিটামিন সি-তে ভরা সিলেট অঞ্চলের সাতকড়ার নাম নিশ্চয়ই শুনেছ? আচার বানিয়ে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি তরকারির সঙ্গে রান্না করেও খাওয়া যায় সাতকড়া।
জাতীয় ফল কাঁঠাল আমরা সবাই চিনি। তবে এত বড় ফলটার ছোট সংস্করণও কিন্তু আছে। যেমন চাপলিশ বা বনকাঁঠাল। দেখতে একেবারে কাঁঠালের মতো, কিন্তু আকারে অনেক ছোট। বনকাঁঠাল নাম হওয়ারও কারণ আছে। পাহাড়ি অঞ্চলের বনেই যে দেখা মেলে এই ফলের।
অনেকেই বলেন, সফল হতে হলে কাজের প্রতি প্যাশন থাকতে হবে। যাদের প্যাশনের অভাব আছে, তারা প্যাশনফল খেয়ে দেখতে পারো। প্যাশনফল জন্মে পাহাড়ি অঞ্চলে। পাহাড়ি অঞ্চলের আরও একটি ফল বিলিম্বি। সুন্দর এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এই ফল এখন সারা দেশেই পাওয়া যায়।
এ তো গেল পাহাড়ি অঞ্চলের ফলের কথা। উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক ফলও অপ্রচলিতের তালিকায় চলে গেছে। যেমন কাউফল। নাম শুনে আবার ভেবে বসো না যে এই ফল শুধু ‘কাউ’রাই খায়। খুব মজার ফল এটা। উপকূলীয় অঞ্চলের আরেকটা জনপ্রিয় ফল হচ্ছে পানিফল। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের গেটের সামনে মাঝেমধ্যে পানিফল বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে পানিফলও ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকার কাছেই ভাওয়াল ও মধুপুরগড় অঞ্চলে অনেক ফল রয়েছে, যেগুলো সচরাচর বাজারে পাওয়া যায় না। যেমন: ডেউয়া, লুকলুকি। আর আম-লিচুর জন্য বিখ্যাত উত্তরাঞ্চল। কিন্তু আম-লিচু ছাড়াও এ অঞ্চলে আরও অনেক ফল পাওয়া যায়। যেমন: বাঙ্গি, শরিফা, আঁশফল, করমচা, গোলাপজাম।
সব কটি ফলই দারুণ মজার। কোনোটা টক, কোনোটা মিষ্টি। তবে এত ফল থাকলেও আমরা শুধু আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর প্রতিই নজর দিই। এখন থেকে চাইলে অন্য ফলগুলোও খেয়ে দেখা যেতে পারে। আর আম-লিচুরও কিন্তু বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কোনো আম জুন মাসে পাকে, কোনোটা আবার আগস্টে। এসবও জানা জরুরি। তাহলে আমবিক্রেতা কখনোই ঠকাতে পারবে না তোমাকে। ল্যাংড়া আম বলে ফজলি ধরিয়ে দিলে ঠিকই তুমি বুঝে ফেলবে। চাইলে প্রচলিত-অপ্রচলিত ফলগুলোর গাছের চারা নিজেই লাগিয়ে ফেলতে পারো বাড়ির পাশে কিংবা ছাদে। ভাবছ, কীভাবে কোন গাছ লাগাতে হবে তা বলবে কে? এরও সমাধান আছে। মুঠোফোনে কৃষিবিষয়ক পরামর্শ বা তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করে বিনা মূল্যে জানতে পারবে কৃষিবিষয়ক যেকোনো তথ্য।