কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে খোঁজ মিলল প্লেটোর সমাধিস্থলের

দার্শনিক প্লেটো

দীর্ঘদিন ধরে অজানা ছিল প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর সমাধিস্থল কোথায়। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির অসাধারণ ক্ষমতার সাহায্যে অবশেষে সেই রহস্যের সমাধান হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অভাবনীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা প্লেটোর হারিয়ে যাওয়া সমাধিস্থলের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইতিহাস ও দর্শনের জগতে এটিকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্লেটো ছিলেন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ, যাঁর রচনা আজও বিশ্বসাহিত্য ও দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর সমাধিস্থলের উদ্ধার আমাদের প্রাচীন গ্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দেবে।

প্লেটোর মৃত্যুর আগের রাত সম্পর্কে এই প্যাপিরাস কাগজ থেকে জানা গেছে। যার মধ্যে আছে, অসুস্থ থাকার সময় তাঁর জন্য যে সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল, তা তাঁর একেবারেই পছন্দ হয়নি।

ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই আকর্ষণীয় আবিষ্কার করেছেন। প্রাচীন যুগের প্যাপিরাস কাগজে থাকা লেখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, গ্রিক দার্শনিক প্লেটোকে কোথায় সমাহিত করা হয়েছে। মাউন্ট ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ধ্বংসপ্রাপ্ত পম্পেই শহরের নিকটবর্তী হারকিউলেনিয়াম শহরে প্রাচীন যুগের প্যাপিরাস কাগজের কিছু নথিপত্র আবিষ্কৃত হয় সম্প্রতি।

কাগজপত্রগুলো এতই ভঙ্গুর ছিল যে সেগুলো স্পর্শ করলেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেক্সট ও বিশেষায়িত স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকেরা প্যাপিরাসগুলোয় লেখা ১ হাজার শব্দ শনাক্ত করতে সক্ষম হন, যা মূল লেখার প্রায় ৩০ শতাংশ।

এআই এর চোখে প্লেটোর সমাধি

ঐতিহাসিকেরা দীর্ঘদিন ধরে জানতেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ৩৪৮ থেকে ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে মারা যান এবং তাঁকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একাডেমিতে সমাহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্লেটোর সমাধিস্থলটি ঠিক কোথায়, তা নিয়ে তাঁরা অনিশ্চিত ছিলেন। এই গবেষণার ফলে এখন তাঁরা এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত। গ্রিক এই দার্শনিক ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র এবং আরেক বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের শিক্ষক।

আরও পড়ুন

প্যাপিরাস কাগজের তথ্য থেকে জানা গেছে, প্লেটোকে সম্ভবত এথেন্সের প্লেটোনিক একাডেমির ভেতর মুসেসের পবিত্র মন্দিরের কাছে একটি গোপন বাগানে সমাহিত করা হয়েছিল। বাগানটি শুধু তাঁর জন্যই সংরক্ষিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোলজি অর্থাৎ সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্যাপিরোলজির অধ্যাপক গ্র্যাজিয়ানো রানোচিয়া এই নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন।

সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল
শিল্পীর চোখে

প্লেটোর মৃত্যুর আগের রাত সম্পর্কে এই প্যাপিরাস কাগজ থেকে জানা গেছে। যার মধ্যে আছে, অসুস্থ থাকার সময় তাঁর জন্য যে সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল, তা তাঁর একেবারেই পছন্দ হয়নি। আগে ধারণা করা হতো যে এথেন্সের এক ক্রীতদাস মহিলার বাজানো মিষ্টি সুর প্লেটো পছন্দ করতেন। আদতে তা নয়। নতুন উদ্ধার করা কাগজের তথ্য থেকে জানা গেছে যে বাস্তবে প্লেটো মৃত্যুশয্যায় প্রচণ্ড জ্বরের মধ্যে গানের সুর নয়, বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

সূত্র: সিএনএন, লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন