মাধ্যমিক বা ফাইনাল পরীক্ষার আগে তোমরা নিশ্চয়ই চাপে থাক। মাসের পর মাস বসে যা যা পড়েছ, তা সব এখন মাথায় নিয়ে যেতে হবে পরীক্ষার হলে। সে জন্য প্রচুর পড়তে হবে। কিন্তু দেখা যায়, আমরা পাঁচ ঘণ্টা পড়ার টেবিলে বসে থাকলেও পড়া হয় মাত্র দুই ঘণ্টা। বাকি সময় যে কীভাবে চলে যায়, তা নিজেরাও বুঝতে পারি না। অনেকে আবার পড়ে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশ পড়ার উপযোগী নয়। তখন একই পড়া নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে। তাই তোমাদের জন্য এখানে রইল ৭টি পরামর্শ। এগুলো পালন করার চেষ্টা করলে তোমার সময় আর অযথা নষ্ট হবে না।
৪৫ মিনিটের টাইমার
টানা অনেক সময় পড়া উচিৎ নয়। পড়ার মধ্যে বিরতি নিতে হবে। এতে বেশি সময় পড়তে পারবে এবং ভালোভাবে শিখতে পারবে। টানা ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট পড়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ। কারণ, অনেক সময় পড়ার পর মস্তিষ্ককে একটু বিশ্রাম দেওয়া জরুরি। তা না হলে মস্তিষ্ক চোখকে সংকেত পাঠাবে, তুমি (চোখ) এখন ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পড়ো। অমনি চোখ ঘুমিয়ে পড়বে। টানা পড়ার পরে বিরতির সময়ে এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করা ভালো। চাইলে মাঝেমধ্যে হালকা খাবার খেতে পার, পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে পার। তবে সেটা ১০ মিনিটের বেশি নয়।
বন্ধ থাকবে ফোন
৪৫ মিনিটের টাইমার সেট করে যখন পড়বে, তখন অবশ্যই ফোন বন্ধ রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন মনোযোগ নষ্ট না হয়। অবশ্য বিরতির ১০ মিনিটে তুমি আবার ফোন ব্যবহার করতে পার। শুধু ফোন নয় বরং এই ৪৫ মিনিটে তুমি বই ছাড়া সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বাইরের কোনো কিছুর দিকে মনোযোগ দেবে না। হয়তো বিকেলে খেলতে যাবে, পড়ার সময় মাথার মধ্যে সেই পরিকল্পনা করা যাবে না। পড়ার সময় শুধু পড়া।
‘বিরক্ত করবেন না’
হ্যাঁ, ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বা ‘বিরক্ত করবেন না’। তোমার পরিবারে যদি গল্প করার মতো অনেক মানুষ থাকে কিংবা তুমি যদি হোস্টেলে থাকো, তাহলে এই লাইন লিখে ঝুলিয়ে রাখতে পার। কারণ, অনেক সময় পরিবারের মানুষ বা বন্ধুবান্ধব হয়তো বুঝবে না, তুমি এখন বই পড়ছ। তাঁরা তোমাকে কোনো কাজের কথা বলতে পারে বা গল্প করবে। কিন্তু তোমার এই চিহ্ন দেখলে তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না। ফলে পড়ার মনোযোগ ঠিক থাকবে। তবে হ্যাঁ, প্রথম দিকে তোমার চিহ্ন নিয়ে কেউ হাসাহাসি করতে পারে কিংবা হয়তো পাত্তা দেবে না। তুমি তাতে কান দিয়ো না। পড়ার সময় এভাবে কিছু দিন এই চিহ্ন ঝুলিয়ে রাখলে তারা ঠিকই বুঝবেন। আর হ্যাঁ, এটা ঝুলিয়ে রেখে ভেতরে বসে আবার মোবাইল ব্যবহার করো না যেন! তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
লক্ষ্য নির্ধারণ করো
তুমি আসলে কী অর্জনের চেষ্টা করছ? বইয়ের একটা টপিক সঠিকভাবে পড়া হয়েছ কি না, কীভাবে বুঝবে? আসলে তোমাকে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। লক্ষ্যগুলো কাগজে লিখে রাখো। নিজের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত থামা যাবে না। পাশাপাশি গুছিয়ে পড়াশোনা করতে পারো। অর্থাৎ কোথার থেকে কী পড়বে, তা আগেই ঠিক করে রাখবে। যদি গোছানো না থাকে, তাহলে তোমাকেই তা গুছিয়ে নিতে হবে। পড়া ঠিকভাবে হলো কি না, তা বুঝতে পরিবার বা বন্ধুদের সাহায্য নিতে পারো। পড়ার শেষে তাদেরকে তোমার পড়া টপিকটা বোঝাতে পারো। সঠিকভাবে বোঝাতে পারলে বুঝবে, তোমার পড়া ঠিক আছে।
টেবিলে বসে পড়ো
পড়তে হবে নির্দিষ্ট টেবিল চেয়ারে বসে। একদিন খাটে শুয়ে, একদিন টেবিলে বসে, সোফায় শুয়ে পড়া যাবে না। পড়ার সময় সিরিয়াসলি পড়তে হবে। একসঙ্গে হয়তো তোমার একটি বই, একটি খাতা, স্কুলের নোট খাতা খুলতে হতে পারে। লেখার জন্য লাগতে পারে কলম বা পেন্সিল। এগুলো সব সময় টেবিলে রাখবে। না হলে খাতার জন্য একবার উঠতে হবে, কলমের জন্য একবার…। এভাবে বারবার পড়ার মধ্যে উঠলে মনোযোগ নষ্ট হয়। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় টেবিলে বসে পড়তে পারো।
বড় অধ্যায়গুলোকে বিভক্ত করো
না, বই ছিড়ে বা কেটে ভাগ করবে না। একটা অধ্যায় হয়ত ৪০ পৃষ্ঠার। তখন অধ্যায়টিকে ৪ ভাগে ভাগ করে নিতে পার। অবশ্যই মাথার মধ্যে। কারণ, ৪০ পৃষ্ঠা পড়ার কথা মনে হলেই তুমি আর ওই অধ্যায় পড়া শুরু করবে না। ভাববে এটা সবার শেষে পড়ব। পরে দেখবে আর ওই অধ্যায় ধরার সময় পাওনি। তাই ছোট ভাগে ভাগ করলে আর ভয় লাগবে না।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খাতায় লেখো
তুমি হয়তো ওপরের সব পরামর্শ পালন করে খুব ভালোভাবে পড়লে। কিন্তু এই পরামর্শটা যদি না মানো, তাহলে সব চেষ্টাই বৃথা যেতে পারে। একটা বই পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খাতায় লিখে রেখো। অনেকে বইয়ে দাগ দিয়ে রাখে। সেটাও করতে পারো, কিন্তু খাতায় লেখা উত্তম। এতে তোমার পড়ার পাশাপাশি লেখাও হয়ে যাবে। কথায় আছে, একবার লেখা আর দশবার পড়া সমান কথা। তাই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সুন্দরভাবে খাতায় তুলে রাখ। পরীক্ষার আগের দিন রাতে এই খাতা হতে পারে মহামূল্যবান।
সূত্র: থটকো ডট কম