প্রতিষ্ঠানের গঠন নিয়ে গবেষণা করে অর্থনীতিতে নোবেল

ড্যারন আসেমোগলু, সিমন জনসন, জেমস এ রবিনসন।নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ

২০২৪ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড্যারন আসেমোগলু ও সিমন জনসন এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক জেমস এ রবিনসন। ‘ঔপনিবেশিক শাসনের সময় প্রবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলো বর্তমানে অনেক দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্যের মূল কারণ হিসেবে কাজ করে’, এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তাঁরা তিনজন যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।

নোবেল কমিটি জানিয়েছে, কীভাবে প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় ও সমৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে, এ নিয়ে গবেষণার জন্য ওই তিনজনকে ২০২৪ সালের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

ড্যারন আসেমোগলু (তুর্কি-আমেরিকান), সিমন জনসন (শেফিল্ডে জন্মগ্রহণকারী) ও জেমস এ রবিনসন (ব্রিটিশ) তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, একটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইনের দুর্বল শাসন আর জনগণকে শোষণ করে, এমন প্রতিষ্ঠান দেশের উন্নতি করতে পারে না। কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। নোবেল বিজয়ীরা তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে এটিই বোঝাতে চেয়েছেন।

যখন ইউরোপীয়রা বিশ্বের নানা প্রান্তে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, তখন সেসব অঞ্চলের সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কখনো কখনো এসব পরিবর্তন খুব নাটকীয় ছিল। কখনো প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন হতে সময় লেগেছে। অনেক ক্ষেত্রে উপনিবেশ স্থাপনকারীরা আদিবাসীদের শোষণ করেছে এবং সম্পদ লুট করেছে। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে ইউরোপীয় অভিবাসীরা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিজেদের প্রভাব রেখেছে।

নোবেলজয়ী অধ্যাপকেরা দেখিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের সমৃদ্ধির পার্থক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, উপনিবেশকালে প্রবর্তিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সেসব দেশে চালু করা হতো, যেখানে উপনিবেশকালে দারিদ্র্য বেশি ছিল। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছিল। অপর দিকে যেসব অঞ্চল সমৃদ্ধ ছিল, সেগুলোয় বেশি লুটতরাজ হয়েছে। ফলে সেসব অঞ্চল আজ দরিদ্র।

আরও পড়ুন

কিছু দেশ এখনো পুরোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে চলছে। ফলে সেসব দেশের অর্থনীতির গতি বাড়ছে না। সময়োপযোগী নতুন ও ভালো অর্থনৈতিক পদ্ধতি চালু করলে সবাই উপকৃত হবে। কিন্তু পুরোনো পদ্ধতি চালু রাখা হয়েছে যেন শুধু কিছু মানুষ লাভবান হন। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা নতুন পদ্ধতি চালু করতে চাযন না। কারণ, তাঁরা ভয় পান যে নতুন পদ্ধতি চালু হলে তাঁরা ক্ষমতা হারাবেন।

১৪ অক্টোবর সোমবার সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। মূলত নোবেলের প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে নোবেলপ্রার্থী ও বিজয়ীদের। সুইডেনের রয়্যাল একাডেমি অব সায়েন্স পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি পরিচালনা করে।

নোবেলজয়ী অধ্যাপকেরা পাবেন একটি নোবেল মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। এর বর্তমান বাজার মূল্য ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই অর্থ সমান তিন ভাগে ভাগ করে তিনজন বিজয়ীকে দেওয়া হবে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ শাখায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে মোট ৫৬ বার, মোট ৯৬ জনের মধ্যে।

অর্থনীতির নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাকব সভেনসন বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু মানুষ খুব ধনী আর কিছু মানুষ খুব গরিব। এই ফারাক কমানো আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নোবেল বিজয়ীদের দেখানো পথে সমাজের কাঠামো ঠিক করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নোবেল প্রাইজ ডটঅর্গ

আরও পড়ুন