সম্প্রতি ভারতীয় ধনকুবের রতন টাটা মারা গেছেন। বরেণ্য ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিত। সামাজিক কাজে তাঁর অংশগ্রহণও কিংবদন্তিতুল্য। রতন টাটা প্রাণীদের খুব পছন্দ করতেন। তাঁর ছিল গোয়া নামে একটি পোষা কুকুর। কুকুরটির নাম গোয়া রাখার কারণ ছিল ভারতের শহর গোয়া। এ শহরে কুকুরটিকে পেয়েছিলেন তিনি। ৯ অক্টোবর প্রয়াত রতন টাটাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর প্রিয় সবাই। সঙ্গে ছিল গোয়া। গোয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেখা গেছে, কুকুরটি মুষড়ে পড়েছে। রতন টাটার কর্মীরা আলোকচিত্রীদের কুকুরটির ছবি তুলতে নিষেধ করেছেন। বিরক্ত না করতেও বলা হয়েছে। কারণ, টাটার এই কুকুর কয়েক দিন কিছু খায়নি।
প্রচলিত আছে, পোষা প্রাণী মালিকের মৃত্যুতে শোক করে। মানুষের ‘দুঃখ’ অনুভব করে। মৃত মানুষটি কেন ফিরে আসছে না, বুঝতে পারে না, তাই খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। একসময় শোক সইতে না পেরে না খেয়েও নাকি মারা যায়। রতন টাটার কুকুরটিরও কি এমন হয়েছে?
এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করার মতো তেমন একটা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। যতটুকু জানা যায়, অনেক প্রজাতির প্রাণী দুঃখজনক ঘটনায় প্রভাবিত হয়। দুঃখ ও একাকিত্ব অনুভব করে।
যখন পোষা প্রাণীর মালিক মারা যান, তখন প্রাণীটির নানা পরিবর্তন ঘটে। হয়তো প্রাণীর সঙ্গে মালিক প্রচুর সময় কাটিয়েছেন। প্রাণীর রুটিন পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কুকুরের ক্ষেত্রে এই রুটিন ব্যাহত হওয়ায় কুকুর বিচলিত হতে পারে। মানসিক চাপে পড়তে পারে। কুকুরটিকে দুঃখিত মনে হতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা আগে দেখা যায়নি। যেমন কুকুরের আচরণে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
মৃত মানুষের আপনজন যখন শোক করে, তখন কুকুরও শোকগ্রস্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। মানুষের আচরণে পরিবর্তন এলে বা যখন মানুষ বিচলিত হয়, তখন তাঁদের পোষা প্রাণীও এই বিচলিত ভাব গ্রহণ করতে পারে। কখনো মানুষের দুঃখী আচরণ দেখে প্রাণী বিভ্রান্তও হয়।
তবে বাড়ির অন্য পোষা প্রাণী মারা গেলে কুকুর কোনো লক্ষণ দেখায় না। যদি মৃত পোষা প্রাণী এবং বেঁচে থাকা কুকুরের মধ্যে কোনো বিশেষ বন্ধন না থাকে, তবে দেখা যাবে কুকুরটি কোনোভাবে প্রভাবিত হচ্ছে না।
শোকার্ত কুকুরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়?
খুব সহজে যা করা যায়, তা হলো এ সময়ে কুকুরের পাশে থাকা। কুকুরের প্রতিদিনের অভ্যাস বা রুটিন যথাসম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখা। কুকুরের ওপর চাপ এড়ানোর এটি ভালো উপায়। নিশ্চিত করতে হবে কুকুরের খাবারের সময় যেন একই থাকে। খাবারে যেন বদল না আসে। কুকুর সঠিকভাবে খাওয়া, পান করা এবং পটি করা নিশ্চিত করতে হবে।
মালিক মারা গেলে কুকুরের উদ্বেগ অনুভব করার কারণ, কুকুরটি দীর্ঘ সময় কাটাত মালিকের সঙ্গে। হঠাৎ এটি বন্ধ হয়ে যায়। হয়তো প্রতি সন্ধ্যায় ঘর থেকে একসঙ্গে মালিক ও কুকুর হাঁটতে বের হতো। হঠাৎ এই হাঁটাহাঁটি বন্ধ হয়ে যায়। বেড়াতে যাওয়া কুকুরের জন্য সাধারণত উত্তেজনা বা আনন্দের অংশ, এটি ব্যাহত হয়। এ সময় কুকুর যদি পরিবারের অন্যদের কাছে আসে, তবে পরিবারের সদস্যরা কুকুরটিকে আলিঙ্গন করে সান্ত্বনা দিতে পারেন। মূলত কুকুরটিকে নিঃসঙ্গ করে না দেওয়া। রতন টাটা বা বিখ্যাত কেউ মারা গেলে তাঁর কুকুরকে সবাই আলাদাভাবে দেখে বা বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তখন কুকুরটির সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করা হয় না। ফলে কুকুরটি একা হয়ে যায়। খাবারে অনাগ্রহ দেখা দেয়।
কুকুরকে শান্ত করতে একে সঙ্গ দিতে হবে। নিঃসঙ্গতাকে উপেক্ষা করতে হবে এবং কুকুর যেন আরও নিঃসঙ্গ না হয়ে যায়, এ জন্য উৎসাহিত করতে হবে। কুকুর পরিবারের কোনো সদস্যের জন্য যদি অপেক্ষা করে তবে বোঝাতে হবে তিনি না এলেও আমরা তোমার সঙ্গে আছি। যিনি মারা গেছেন, তিনি তো আর ফিরে আসবেন না। এ তথ্য আমরা জানলেও কুকুর জানে না। তাই কুকুরের অপেক্ষাকালীন মুহূর্তে এর সঙ্গে ঝামেলা না করাই উত্তম। অপেক্ষমাণ সময়টা না বাড়িয়ে এ সময় কুকুরকে ছেড়ে দিতে হবে এবং ওর সঙ্গে খেলতে হবে। খেলাধুলার মুহূর্তটা কুকুরকে অপেক্ষমাণ সময়টুকু ভুলে যেতে সহযোগিতা করবে।
মালিক মারা গেলে পোষা প্রাণীটির সঙ্গে যেন অন্য একজন বন্ধন তৈরি করতে পারে, সে জন্য চেষ্টা করতে হবে। কী দিয়ে প্রাণীটিকে খুশি করা যাবে, সেটি ভাবতে হবে। কিছু কুকুরের জন্য এটি খুব ঝামেলার মনে হতে পারে। কুকুরদের জন্য প্রশিক্ষণ, খেলা বা দীর্ঘ সময় ধরে কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটা হতে পারে সমাধান। মানুষ বা পশু মারা গেলে আমরা সবাই প্রভাবিত হই। এ সময় একে অপরের যত্ন নিলে আমরা কঠিন এই সময়কে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি।