৫২ বছর পর চাঁদে ফিরল যুক্তরাষ্ট্র
১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর মহাকাশ সংস্থা নাসা পরিচালিত ‘অ্যাপোলো ১৭’ মিশনের মাধ্যমে শেষবারের মতো চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দীর্ঘ ৫২ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে আবারও সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে মার্কিন মহাকাশযান। ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিটে ষড়ভুজ আকৃতির ‘অডিসিয়াস’ (Odysseus) নামের মহাকাশ যান চাঁদে অবতরণ করে। নভোযানটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ইস্টার্ন নামক চন্দ্রখাত এলাকায় সফলভাবে অবতরণ করেছে।
‘অডিসিয়াস’ মহাকাশযানটি নির্মাণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইনটুইটিভ মেশিনস। তারা মূলত এর নকশা ও যাবতীয় প্রযুক্তিগত কার্যাবলি পরিচালনা করেছেন। ‘অডিসিয়াস’ মহাকাশযানকে ইনটুইটিভ মেশিনস-১ বা আইএম-১ নামকরণ করা হয়েছে। কারণ, এটি ইনটুইটিভ মেশিনস প্রতিষ্ঠানের তৈরি প্রথম কোনো চন্দ্রযান, যা সফল হয়েছে। বাণিজ্যিক মহাকাশযানের মাধ্যমে পরিচালিত এই চন্দ্রাভিযানে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। ইনটুইটিভ মেশিনস ও নাসা যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এই অভিযান মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড়। কারণ, প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তৈরি মার্কিন নভোযান সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে। ‘নোভা-সি’ শ্রেণির এই নভোযানটি নাসার ‘কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস’ (CLPS) প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিকভাবে চাঁদে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন ছোটখাটো মালামাল পরিবহন। ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের সাহায্যে ‘অডিসিয়াস’ মহাকাশযানটি তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। এই প্রকল্পের জন্য মাত্র ১১৮ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অভিযান থেকে অনেক কম। বেসরকারি উদ্যোগ এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এই অভিযানের খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ‘অডিসিয়াস’ উৎক্ষেপণের পর বাধাহীনভাবেই চাঁদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল মুন ল্যান্ডারটি। পথিমধ্যেই পৃথিবীর সঙ্গে নিজের বেশ কিছু চমকপ্রদ ছবি তুলে পাঠিয়েছে এই ল্যান্ডারটি। যা ইনটুইটিভ মেশিনসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা জানিয়েছে, চাঁদের মাটিতে স্পর্শ করার পর মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে অবতরণের তথ্যটি নিশ্চিত করতে কিছুটা সময় নেয়। কারণ, অবতরণের শেষ মুহূর্তে যানটি থেকে কোনো সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ও অপেক্ষার মুহূর্তগুলো দীর্ঘ হয়ে চলছিল। কিন্তু কয়েক মিনিট পর মহাকাশযানটি থেকে একটি দুর্বল সংকেত পেলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে আনন্দের ঝড় ওঠে। নভোযানটির যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সূর্যের আলোয় প্রায় সাত দিন সক্রিয় থাকতে পারবে। কিন্তু চাঁদে সূর্যাস্ত হলে, তীব্র শীতের কারণে এটি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়বে।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বরং সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন দেশ চাঁদে অভিযানে নেমেছে। এই নতুন প্রতিযোগিতা মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করেছে। সম্প্রতি জাপান ও ভারত তাদের চন্দ্রযান ‘মুন স্নাইপার’ ও ‘চন্দ্রযান ৩’ অভিযানে সফলতা অর্জন করেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের উৎক্ষেপিত নভোযান ‘পেরিগ্রিন’ দুর্ভাগ্যবশত জ্বালানি ট্যাংক ফুটো হয়ে জ্বালানি লিকেজের কারণে চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়। এই ঘটনা নাসার জন্য ছিল হতাশাজনক। যা–ই হোক, ‘পেরিগ্রিন’–এর ব্যর্থতার পর ‘অডিসিয়াস’–এর সফল অবতরণ নাসার জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, চাঁদের অভিযান কেবল মহাকাশবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর মাধ্যমে পৃথিবীর উৎপত্তি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।