যা হলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪৫ বছরের উৎসবে
৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৮টা। শাহবাগ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত অদ্ভুত সাজপোশাক পরা মানুষের ভিড়। এক বিশেষ দিন উদ্যাপনের জন্য একত্রিত হয়েছে সবাই। সবার সামনে আছেন অতিথিরা। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু বিখ্যাত চরিত্র। আছে সবার প্রিয় মীনা, পিটার প্যান, আলিবাবা, সিন্ডারেলাসহ অনেকেই। আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েলের প্রতিকৃতিও আছে। একদল ছেলেমেয়ে সেজেছে বরযাত্রী। জেলে ভাইদের পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখা গেল। একদল সাপুড়ে বক্স নিয়ে হাঁটছে। না জানি কী বিষাক্ত সাপ তাদের ঝোলায়। একদলকে দেখা গেল পতাকা হাতে। কেউ সেজেছে মুক্তিযোদ্ধা। কারও হাতে লাঠি। জানা গেল তারা সেজেছে লাঠিয়াল। মণিপুরি, ভরতনাট্টমের নাচের দলের সদস্যদের দেখা গেল।
সকাল সকাল তারা সবাই গাইতে গাইতে, নাচতে নাচতে শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করেছে। দলবেঁধে নারী-পুরুষ-আর শিশুরা এগোলো বাংলামোটরের দিকে। শোভাযাত্রা চলছে। সামনের সাড়িতে দেখা গেল সবার প্রিয় শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। আছেন শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালও আছেন। এই শোভাযাত্রাটি বিশসাহিত্য কেন্দ্রের ৪৫ বছর পূর্তি উৎসবের। শোভাযাত্রাটি সাজানো হয়েছে লোকশিল্প ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে। সবাই মিলে শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যান। কেন্দ্র সাজানো হয়েছে ঝালর ও আলপনা দিয়ে। যেখানে আরাদিন ছিল গানের অনুষ্ঠান, আলোচনা, খাওয়াদাওয়া, আর আনন্দ–আয়োজন।
৪৫ বছর আগে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরে গড়ে ওঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। শুরুতে সদস্য ছিল মাত্র ১৫ জন। ৪৫ বছর পর এর বর্তমান সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩২ লাখ। এখন এটি একটি বড় প্রতিষ্ঠান।
বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠাগারে আছে আড়াই লাখের বেশি বই। ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে আছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি বই। ‘আলোর স্কুল’ কর্মসূচির বইসহ কেন্দ্রের বইয়ের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখের মতো। আছে মিলনায়তন, আর্ট গ্যালারি, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগীত ও চলচ্চিত্রের আর্কাইভ, দলবেঁধে আড্ডা দেওয়ার উপযোগী ক্যাফেটেরিয়া, বই বিপণনকেন্দ্র। এখান থেকেই সারা দেশে স্কুলে বই পড়া কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, কেন্দ্র লাইব্রেরি, আলোর ইশকুল, প্রকাশনা, বই বিক্রয় কেন্দ্র, শ্রবণ-দর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোর পাঠশালা, প্রাথমিক শিক্ষকদের বইপড়া কর্মসূচি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মসূচি।
১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়। ‘আলোকিত মানুষ চাই’–এর স্লোগান। প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পূর্ণ করেছে গত বছর ডিসেম্বরে। এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী বর্ষপূর্তি উত্সব। দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, কেন্দ্রের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কর্মসূচির শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাঙ্গণ।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছরে বিষ্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্রোতের বিপরীতে গিয়েও যে কিছু একটা করা যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এর উত্কৃষ্ট উদাহরণ। রাস্তায় রাস্তায় বইয়ের লাইব্রেরি ছুটে বেড়ানোর বিষয়টি একসময় অকল্পনীয় ছিল। আমার ধারণা, আরও ৪০ বছর পর সমগ্র বাংলাদেশেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলো ছড়িয়ে পড়বে।