তিমির মুখ থেকে এখন পর্যন্ত যারা বেঁচে ফিরেছেন

হাম্পব্যাক তিমি আক্রমণের পর মুহূর্তেছবি: এপি

সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি হাম্পব্যাক তিমি একটি কায়াকসহ (নৌকা) এক তরুণকে গিলে ফেলছে। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করেছে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, তরুণ তিমির পেট থেকে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এই ঘটনায় অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ এটিকে প্রকৃতির বিস্ময়কর শক্তি হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ তরুণের সৌভাগ্যের প্রশংসা করছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনাটি ঘটে চিলির ২৪ বছর বয়সী আদ্রিয়ান সিমানকাসের সঙ্গে। আদ্রিয়ান যখন তাঁর বাবা ডেলের সঙ্গে চিলির মাগেলান প্রণালিতে সান ইসিড্রো বাতিঘরের কাছে কায়াকিং করছিলেন, তখন একটি হাম্পব্যাক তিমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আদ্রিয়ানিকে হলুদ কায়াকসহ গিলে ফেলে। সৌভাগ্যক্রমে আদ্রিয়ানকে বেশিক্ষণ তিমির মুখের ভেতরে থাকতে হয়নি। কয়েক মুহূর্ত পরই তিমিটি কায়াকসহ আদ্রিয়ানকে মুখ থেকে বের করে দেয়।

কায়াক নামক ছোট নৌকায় বসে বৈঠা ব্যবহার করে পানিপথে ভ্রমণ করা একটি জনপ্রিয় বিনোদন। সারা বিশ্বেই এটি জনপ্রিয়। কায়াকগুলো সাধারণত সরু ও লম্বা হয়। এগুলো সাধারণত ফাইবারগ্লাস, কাঠ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। কায়াকিংয়ের জন্য একটি সাধারণ কায়াকের দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক হাম্পব্যাক তিমি ১৪ থেকে ১৭ মিটার বা ৪৬ থেকে ৫৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই তিমির ওজন প্রায় ৪০ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়। বোঝাই যাচ্ছে তিমির কাছে কায়াকটা কত ছোট।

হাম্পব্যাক তিমির মুখে কায়াকার
ছবি: এপি

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে আদ্রিয়ান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমি মারা গেছি। আমার মনে হয়েছিল যেন তিমিটি আমাকে সম্পূর্ণভাবে গিলে ফেলেছে’।

তিমিটি আদ্রিয়ানকে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানির উপরে চলে আসে সে। আদ্রিয়ান আতঙ্কিত অবস্থায় যখন পানির ওপরে ওঠেন, তখন তিমিটি সাগরের গভীরে ডুব দিয়েছে। তার বাবা ডেল পুরো ঘটনাটি ভিডিও করেন এবং পরে ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এপি জানায়, তাঁরা নিরাপদে তীরে ফিরে এসেছেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, হাম্পব্যাক তিমি কি মানুষখেকো? হাম্পব্যাক তিমি ছোট মাছ ও ক্রাস্টেসিয়ান খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের বিশাল দেহের জন্য প্রচুর খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই এরা ২৩ হাজার লিটারের বেশি সমুদ্রের পানি মুখ হা করে ভেতরে নেয়। এরা এদের মুখে থাকা ‘বেলিন প্লেট’ এর মাধ্যমে পানি থেকে ছোট মাছ ছেঁকে নেয়। এই বেলিন প্লেট অনেকটা লম্বা লোমশ দাঁতের মতো, যা খাবার গিলতে নয় বরং সাগরের পানি ছেঁকে নিতে সাহায্য করে তিমিদের। এই কৌশলটি ছোট প্রাণী শিকারের জন্য তৈরি হয়েছে। মানুষ বা কায়াক গিলে খাওয়ার জন্য নয়।

যুক্তরাজ্যের তিমি ও ডলফিন সংরক্ষণ সংস্থার একজন গবেষণা ও লেখক এরিক হোয়েট লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা তিমিটি সম্ভবত দুর্ঘটনাক্রমে কায়াকারকে গিলে ফেলেছিল’। তিনি আরও বলেন, মানুষ এত বড় যে হাম্পব্যাক তিমি মানুষকে গিলতে পারে না। গবেষকেরা হাম্পব্যাক তিমির পেটে ক্যাসিনের অকিলেট নামক সামুদ্রিক পাখি পেয়েছেন। যা সম্ভবত দুর্ঘটনাক্রমে তিমিটি গিলে ফেলেছিল। এই পাখিগুলো প্রায় ৯ ইঞ্চি লম্বা ছিল।

এটি প্রথম কোনো ঘটনা নয় যে কোনো তিমি দুর্ঘটনাক্রমে কাউকে মুখের ভেতরে নিয়েছে। ২০২০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি হাম্পব্যাক তিমি পানি থেকে উঠে এসে একটি কায়াকের দুইজন আরোহীকে প্রায় গিলে ফেলেছিল। যার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন। সিবিসি নিউজ জানায়, কায়াকাররা যখন মাছের ঝাঁকের ওপর ছিলেন, তখনই তিমিটি তাদের মুখে নিয়েছিল। তবে তিমিটি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের ছেড়ে দেয় এবং তাঁরা অক্ষত ছিলেন।

২০২১ সালে ম্যাসাচুসেটসের একজন গলদা চিংড়ি শিকারি দাবি করেন, তিনি প্রায় ৩০ সেকেন্ডের জন্য একটি হাম্পব্যাক তিমির মুখে ছিলেন। তিমি গবেষকদের ধারণা, ডুবুরি তিমির খাদ্যক্ষেত্রের খুব কাছে ছিলেন এবং সম্ভবত সে কারণেই তিমিটি তাঁকে খাবার ভেবে মুখে পুরে ফেলে।

যদিও হাম্পব্যাক তিমি সাধারণত মানুষ খায় না, তবে এরা মাঝে মাঝে নিজেদের হুমকির মুখে মনে করলে মানুষকে আহত করতে পারে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একটি হাম্পব্যাক মা তিমি সম্ভবত শাবককে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে সাঁতারুদের দিকে তেড়ে আসে। এতে দুজন আহত হন এবং হাসপাতালে যেতে হয়। তবে এই প্রজাতিটি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না।

সূত্র: লাইফ সায়েন্স, সিএনএন, সিবিএস নিউজ

আরও পড়ুন