নিহন হিদানকায়ো কেন শান্তিতে নোবেল পেল

নিহন হিদানকায়ো

২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছে জাপানের নিহন হিদানকায়ো সংস্থা। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে ও পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহ পরিণতি বিশ্ববাসীকে দেখানোর জন্য নিহন হিদানকায়োর অবিরাম প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই সংগঠন হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে কাজ করে।

গত ১১ অক্টোবর শুক্রবার নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি পক্ষে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন ইয়াগান ওয়াটন ফ্রাইডনেস। তিনি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান। নিহন হিদানকায়ো সংস্থার কাজের প্রশংসা করেন নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটি বলেন, তাঁরা সাক্ষী আমাদের আর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিৎ না। সংগঠনের বর্তমান কো-চেয়ারম্যান তোশিউকি মিমাকি। তিনি হিরোশিমার ১৯৪৫ সালের পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

নিহন হিদানকায়ো সংস্থা ১০ই আগস্ট ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা আজ থেকে প্রায় ৬৮ বছর আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে, ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার মানুষ তৎক্ষণিক মারা যায়। পরে হাজার হাজার মানুষ পোড়া ও বিকিরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তবে আনুমানিক সারে ছয় লাখ মানুষ এই ধ্বংসের মধ্য থেকে বেঁচে যায়। এই বেঁচে থাকা মানুষদের জাপানি ভাষায় হিবাকুশা বলা হয়।

নিহন হিদানকায়োর বর্তমান কো-চেয়ারম্যান তোশিউকি মিমাকি

পারমাণবিক বোমা হামলার বেঁচে যাওয়া মানুষদের দুর্দশা অনেক দিন ধরে বিশ্ববাসীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। সামাজিকভাবে উপেক্ষা করা হয়েছিল তাঁদেরকে। ১৯৫৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক পরীক্ষার শিকার হওয়া মানুষ এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকির বেঁচে থাকা মানুষদের নিয়ে ‘নিহন হিদানকায়ো’ নামের একটি সংগঠন তৈরি হয়। এই সংগঠন খুব দ্রুত জাপানের সবচেয়ে বড় ও প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন

নিহন হিদানকায়োর মূল লক্ষ্য দুটি। প্রথমত জাপানের বাইরে বসবাসকারী সব হিবাকুশার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, হিবাকুশাদের ওপর ঘটে যাওয়া বিপর্যয় আর কারোর ওপর যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। তাঁদের স্লোগান ‘আর নয় হিবাকুশা’। এই স্লোগান দিয়ে তাঁরা বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে চান।

আরও পড়ুন

নোবেল পুরস্কারের উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুযায়ী নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী নির্বাচন করে। নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্টের দ্বারা নির্বাচিত ৫ সদস্যের একটি কমিটি এই পুরস্কার প্রদানের কাজে নিযুক্ত। চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ২৮৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি এবং ৮৯টি সংস্থা ছিল। ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০৫ বার শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১১১ ব্যক্তি ও ৩১ টি প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিভাগের নোবেল বিজয়ীদের মতো তারাও পাবে একটি স্বর্ণের মেডেল, একটি সনদপত্র ও মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। এর বর্তমান বাজারমূল্য ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরানের অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি। ইরানিদের মানবাধিকার জন্য লড়াই করছেন তিনি। ইরানের সরকার তাঁকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করেছে, ৫ বার আদালতে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মোট ৩১ বছরের জেল ও ১৫৪টি বেত্রাঘাতের শাস্তি দিয়েছে। নার্গিস মোহাম্মদি এখনো কারাগারে আছেন।

সূত্র : নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ, সিএনএন, রাইটার্স

আরও পড়ুন

আরও পড়ুন