পাজল ও গেম খেললে কি ডিমেনশিয়া ঠেকানো যায়
লোকে বলে, মস্তিষ্ককে যত ব্যবহার করবে, তত তোমার বুদ্ধি বাড়বে। তো মস্তিষ্কের ব্যায়ামের জন্য গত কয়েক দশকে অনেক ব্রেইন-ট্রেনিং অ্যাপ, ওয়েবসাইট, অনেক রকম ধাঁধার বই বের হয়েছে। আবার গবেষকেরা এতে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে কি না, যাচাই করে দেখেছেন। এতে কি ভুলে যাওয়ার মতো রোগ (ডিমেনশিয়া) প্রতিরোধ হয় কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখেছেন। গবেষকেরা বলছেন, ধাঁধা বা পাজল মিলিয়ে মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করা যায় কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দেওয়া যায় না। মস্তিষ্ক ধারালো হবে কি না, এর ফলাফল নির্ভর করছে কী ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া হচ্ছে বা এ থেকে কী উপকার আশা করা হচ্ছে।
‘কগনিটিভ রিজার্ভ’ তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন মানসিক অনুশীলন মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ‘মানসিক পেশি’ গড়ে তুললে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষা বা চ্যালেঞ্জিং কোনো পেশায় থাকলে ডিমেনশিয়া কম হতে পারে।
ধাঁধা ও পাজলের মতো গেমগুলোকে বলা হয় কগনিটিভ প্রশিক্ষণ গেম। নির্দিষ্ট মানসিক দক্ষতা, যেমন প্যাটার্ন চেনা বা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য এই গেম তৈরি করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই গেমগুলো নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু কাজেও দক্ষতা বাড়াতে পারে। তবে এই দক্ষতা অন্য ক্ষেত্রে সীমিত প্রভাব ফেলে। কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান ওউয়েন ব্রেইন ট্রেনিংকে একটি বাদ্যযন্ত্র শেখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। বেহালা শেখার অনুশীলন করলে বেহালা বাজানোয় দক্ষতা বাড়াবে। কিন্তু এই দক্ষতা ট্রাম্পেট বাজানোয় কাজে লাগবে না।
কিছু মস্তিষ্ক ট্রেনিং কোম্পানি দাবি করে, তাদের গেম বুদ্ধিগত দুর্বলতা ঠেকাতে পারে। তবে এ বিষয়ে গবেষণায় তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেমন একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের প্রসেসিং স্পিড বা প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা উন্নত করার জন্য একটি গেম খেলেছিলেন, তাঁদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি এক দশকে ২৯ শতাংশ কমেছিল। এই গেম অন্য দক্ষতা, যেমন স্মৃতিশক্তি বা সমস্যা সমাধানের দক্ষতায় এর প্রভাব দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলকে ভালো মনে করেন। তবে এর জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন।
প্রতিদিন তুমি যদি মানসিক উদ্দীপনামূলক কাজ করো, যেমন ধাঁধা সমাধান করো, বোর্ড গেম খেলো বা বই পড়ো, কিংবা নতুন ভাষা শেখো, তবে তোমার ডিমেনশিয়া কম হতে পারে। এগুলো চর্চা করলে ভুলে যাওয়া রোগকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ধাঁধা সমাধান করে, তারা ডিমেনশিয়ার কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া দুই বছরের বেশি সময় দেরিতে অনুভব করে। তবে এই গবেষণার ফলাফল নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণ বা দৈবচয়নের মাধ্যমে হয়নি। তাই এর মাধ্যমে নিশ্চিত করে বলা যায় না, ঠিক এ কারণে ডিমেনশিয়া হয়নি।
‘কগনিটিভ রিজার্ভ’ তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন মানসিক অনুশীলন মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ‘মানসিক পেশি’ গড়ে তুললে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষা বা চ্যালেঞ্জিং কোনো পেশায় থাকলে ডিমেনশিয়া কম হতে পারে।
মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ দেয় এমন গেম স্নায়ুকোষের সংযোগ (সিনাপস) বাড়াতে ও শক্তিশালী করতে পারে। তবে এই গেমগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ভালো-খারাপ দুই দিকেই আছে। কেউ মনে করেন, এটি যাদের মানসিক দক্ষতা ভালো, তাদের জন্য কার্যকর। আবার অন্যরা মনে করেন, অনেক ব্রেইন ট্রেনিং ওয়েবসাইটের দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন।
অপর দিকে বিশেষজ্ঞরা একমত, মানসিক উদ্দীপনামূলক কার্যকলাপ মস্তিষ্কের ক্ষতি করে না, ভুলে যাওয়া রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। তবে মস্তিষ্ক প্রশিক্ষক গেমগুলোর কার্যকারিতা কতটুকু, তা এখনো স্পষ্ট করে জানা যায়নি। ড. স্যামুয়েল গ্যান্ডি বলেছেন, ‘এটি ক্ষতি করবে না, তবে এটি সহায়তা করবে এমন গ্যারান্টিও দিতে পারি না।’
মানসিক উদ্দীপনামূলক কার্যকলাপ ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। তবে এর উপকারিতা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। ব্রেইন ট্রেনিং গেম, শখ বা অন্য মানসিক অনুশীলনের মাধ্যমে সক্রিয় থাকলে হয়তো আমরা উপকার পাব। তবে এটি মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি নয়।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস