ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ৮
বাচ্চা ড্রাগন কী খেতে পছন্দ করে
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে রূপান্তর করছেন কাজী আকাশ।
খাবার নিয়ে এসব চিন্তা করতে করতে নিজেরই ক্ষুধা লেগে গেল। কেমন একটা মোচড় দিয়ে উঠল পেটে। সাসাফ্রাসও সম্ভবত গর্জে উঠল ক্ষুধায়।
‘বোকা সাসাফ্রাস’! আমি ওর পশমে আঙুল বোলাতে বোলাতে বললাম, ‘দুপুরের খাওয়া হয়নি, ক্ষুধা লেগেছে। চলো ঘরে ফিরে যাই।’
হাঁটতে হাঁটতে টের পেলাম, খাদ্য পরীক্ষার জন্য মাথায় একটা দারুণ প্রশ্ন এসেছে। নতুন সায়েন্স জার্নাল ও একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে বসলাম। প্রথম পাতায় লিখলাম:
প্রশ্ন: বাচ্চা ড্রাগন কী খেতে পছন্দ করে?
হুম। বাচ্চা ড্রাগনটির সেই ছোট্ট সাপের মতো আঁশ ছিল। বাজি ধরে বলতে পারি, ওটা ছিল একটা সরীসৃপ। সাপ যখন পোকা খেয়েছে, ড্রাগনটাও খেতে পারে। অবশ্য বাচ্চা ড্রাগনটা বনের ছোট্ট সাপটার চেয়ে অনেক বড়। ওটা হয়তো অনেকগুলো পোকা খেতে পারবে।
বুঝতে পারছিলাম, বাচ্চা ড্রাগনটার জন্য আমাকে নানা ধরনের খাবার খুঁজতে হবে। তবে অন্য একটা বিষয় নিয়েও চিন্তিত ছিলাম। হয়তো ওটাকে খাওয়াতে অনেক খাটতে হবে। ড্রাগনকে খাওয়ানো সহজ কথা নয়। সে জন্য আমি আমার পছন্দমতো কয়েকটা খাবার তৈরির কথা ভাবছি। রান্নাঘরের টেবিলে বসে পছন্দের খাবারের তালিকা করছি। পাশাপাশি খাবারের উপকরণগুলোও হাতের কাছে এনে রাখছি।
এখন আমার অনুমান করার পালা। আমি মার্শমেলো খেতাম। কিন্তু বাচ্চা সাপটা যেভাবে পোকাটা খেয়েছিল, যেন ওটার স্বাদ মার্শমেলোর মতো। কাঁধ ঝাঁকালাম আমি। হয়তো পোকাগুলো ছিল মার্শমেলোর সরীসৃপ সংস্করণ!
হাইপোথিসিস (আমার অনুমান): সম্ভবত ছোট্ট ড্রাগনটা কৃমি খাবে। (দুঃখিত, কৃমি)
বাসায় ফিরে দেখি, বাবা রান্না করছে। তাঁর রান্না দেখে মুচকি হাসলাম আমি। সাসাফ্রাসের আকৃতির একটা প্যানকেক। এটাই আমার বাবার বিশেষত্ব। উনি কাজটা সহজে করতে চান, কিন্তু সহজে হয় না। আমি আর মা আগে এগুলো তৈরির চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেগুলোও যে খুব একটা ভালো হয়, তা বলা যাবে না।
এখন পরীক্ষা শুরু করতে হবে আমার। কোনো কিছু পরীক্ষা করার সময় মা শুধু একটা কথাই বলত, ‘শুধু একটা একটা জিনিস পরিবর্তন করে পরীক্ষা করে দেখবে, বাকি সবকিছু ঠিক রাখবে।’ একসঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন করে পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে না যে কোনটা পরিবর্তনের কারণে কী বদলে গেছে। তাই মা আমাকে সব সময় এটা মনে করিয়ে দিতেন। যা-ই হোক, আমাকে এখনো মায়ের কথামতোই পরীক্ষা করতে হবে। রান্নাঘরে একই রঙের ছয়টা প্লেট পেয়েছে আমি। সব কটি সাদা। সব কটিতে একই ধরনের সমপরিমাণ খাবার নিয়েছি। কাজ করতে করতে হাসি পেল আমার। কারণ মনে মনে ভাবছিলাম, এই পরীক্ষা নিশ্চয়ই মাকে খুশি করবে।
খাবারের উপকরণ ঠিক করে ফেলেছি। এরপর কী করতে হবে, তা পরে ঠিক করব। আপাতত খাবারগুলোর নাম বলি:
খাবারের প্লেটগুলো সাজানোর পর আমি যেসব সিদ্ধান্ত নিলাম:
১. ছোট্ট ড্রাগনটার চারপাশে সমপরিমাণ দূরত্বে প্রতিটি খাবারের প্লেট রাখতে হবে।
২. দূর থেকে দেখতে হবে, বাচ্চাটা কিছু খায় কি না।
৩. কোন প্লেটের খাবার খায়, তা লিখে রাখতে হবে।
সব কাজ মোটামুটি শেষ! প্লেটগুলো দুই হাতে নিয়ে নোটবুকটা থুতনির নিচে গুঁজে দিলাম।
সাসাফ্রাস আর আমি শস্যাগারে পৌঁছে অবাক হয়ে দেখলাম, ড্রাগনটা একটু এদিক–ওদিক তাকাচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে বললাম, ‘আরে, ছোট্ট বন্ধু! তোমার জন্য আমি এখানে কিছু খাবার রেখেছি, যাতে সহজে খেতে পারো।’
খাবারের প্লেটগুলো ড্রাগনের চারপাশে রেখেছিলাম। ওটা বড় বড় কৌতূহলী চোখে আমাকে দেখছিল। সবকিছু স্বাভাবিক হলে নোটবুক আর কলমটা বের করলাম। ছোট্ট ড্রাগনটা উঠে প্রথম প্লেটের খাবারটি একটু চাটল। ওটায় থাকা শস্যদানা আটকে গেল ড্রাগনের জিহ্বায়! অমনি মুখ কুঁচকে লাফিয়ে উঠল, সঙ্গে সঙ্গে একটা থাবা বসিয়ে দিল নিজের জিবে। উফ্!
ডায়েরিতে নোট করতে শুরু করলাম: ড্রাগন শস্যদানা পছন্দ করে না।
জিবের সব কটা দানা সরানোর পর ড্রাগনটা শান্ত হলো। ওটার নাক ফুলে রয়েছে। সম্ভবত রাগে। শুঁকে শুঁকে কয়েক পা এগোল, তারপর আবার শুঁকে নিল। অন্য সব প্লেট বাদ দিয়ে সোজা চলে গেল মার্শমেলোর প্লেটের দিকে। ওর ছোট্ট নীল জিহ্বাটি বের করে চাটতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। উত্তেজনায় ওর হেঁচকি বেরিয়ে এল। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এল কিছুটা আগুন। তা গিয়ে পড়ল মার্শমেলোর প্লেটে। নাক থেকে যেন একটু ধোঁয়াও বের হলো। তারপর প্লেটের মার্শমেলোগুলো একবারে সাবাড় করে দিল।
হেসে ফেললাম আমি। ড্রাগনটা ভাজা মার্শমেলো পছন্দ করে! আমি বাজি ধরে বলতে পারি, ড্রাগনটা স’মোরস (চকলেট ও মার্শমেলো স্যান্ডউচের সমন্বয়ে তৈরি) পছন্দ করবে! নোটবুকে লিখে নিলাম:
ড্রাগনরা মার্শমেলো পছন্দ করে!
সাসাফ্রাস আর আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কিছু পড়ে থাকা মার্শমেলো খাওয়ার আগে আগুনের ফুলকি ছাড়ছিল ড্রাগনটা। মনে হচ্ছে যেন ওগুলো ভেজে নিচ্ছে। এরপর আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
সাসাফ্রাসের দিকে তাকালাম আমি। ‘ড্রাগনটাকে আর ছোট্ট বন্ধু বলব না আমরা। ওকে অন্য কিছু বলা দরকার।’ মুচকি হাসলাম আমি। ‘আমরা ওকে মার্শমেলো বলতে পারি!’ সাসাফ্রাসও সম্মতি জানাল।
কয়েক মিনিট পরই মার্শমেলো (ছোট্ট ড্রাগনটা) দৌড়াতে শুরু করল। মাঝেমধ্যে লাফাচ্ছিল। আবার কখনো বাতাসে ডানা মেলে ওড়ার চেষ্টাও করল। হাসি থামাতে পারলাম না আমি। পুরো প্লেটটা সাবাড় করার পরও ওর একই রকম অনুভূতি হবে!
সাসাফ্রাস মজা চেপে রাখতে না পেরে মার্শমেলোর সঙ্গে যোগ দিল। একসঙ্গে খেলতে লাগল। হঠাৎ একটা তুলতুলে ও খসখসে স্তূপের মধ্যে পড়ে গিয়ে বন্ধ হলো খেলা। একটু হাঁপাচ্ছিল সাসাফ্রাস। তাই একটা বড় বাটি ভরে পানি এনে রাখলাম ওদের সামনে। পাশাপাশি মাথা রেখে একসঙ্গে পানি পান করল সাসাফ্রাস ও মার্শমেলো। তারপর ময়লার মধ্যেই বসে পড়ল মার্শমেলো। লেজটা গুঁজে মাথাটা ওপরের দিকে রেখে চোখ দুটা বন্ধ করে ফেলল।
‘আরেকবার ঘুমানোর সময় হয়েছে, তাই না?’ মার্শমেলো আর চোখ খুলল না তখন।
শস্যাগারের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম, আকাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। ‘সাসাফ্রাস!’ ফিসফিসিয়ে বললাম। ‘ডিনারের সময় হয়েছে! চলো মার্শমেলোকে রেখে ঘুমানো যাক। সকালে এসে আবার ওকে দেখব।’
সাসাফ্রাস আর আমি শস্যাগার থেকে বের হওয়ার সময় ক্যামেরাটা চোখে পড়ল। কিন্তু ছোট্ট বন্ধু তো এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। ওহ না, মার্শমেলো। ওর সুন্দর মুখের ছবিটা তুলতে হবে। আগামীকাল সকালে তুলব।
বাসায় ফিরে দেখি, বাবা রান্না করছে। তাঁর রান্না দেখে মুচকি হাসলাম আমি। সাসাফ্রাসের আকৃতির একটা প্যানকেক। এটাই আমার বাবার বিশেষত্ব। উনি কাজটা সহজে করতে চান, কিন্তু সহজে হয় না। আমি আর মা আগে এগুলো তৈরির চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেগুলোও যে খুব একটা ভালো হয়, তা বলা যাবে না।
বাবা মুখ তুলে আমার থিঙ্কিং গগলসের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ওটা তখনো আমার মাথার ওপর রয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী নিয়ে কাজ চলছে?’
তাকে মার্শমেলোর কথা বলেই ফেলেছিলাম প্রায়। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল, বাবা জাদুকরি প্রাণী দেখতে পারেন না। তাই বাচ্চা ড্রাগনটার প্রসঙ্গ বাদ দিলাম। বললাম, ‘শস্যাগারে সাসাফ্রাসকে নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম।’
আরেকটা প্যানকেক ওল্টালেন বাবা। ‘দারুণ, সোনা। তোমার মায়ের না থাকা যে তোমাকে বিচলিত করছে না, এতেই আমি অনেক খুশি। সাসাফ্রাসকে নিয়ে তুমি বেশ ভালোই ব্যস্ত সময় পার করছ।’
ওহ, আমরা নিজেদের সব সময়ই ব্যস্ত রেখেছিলাম। বাবা যদি জানতেন!
সকাল হওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। প্রথমত, ওই মিষ্টি জাদুকরি প্রাণীটার মুখের ছবি তুলব। তারপর সারা দিন খেলে কাটিয়ে দেব…একটা ড্রাগনের বাচ্চার সঙ্গে!
চলবে…
মূল: এশিয়া সিট্রো
রূপান্তর: কাজী আকাশ
ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে
*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’ এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।