যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে এত মানুষ মরে কেন

ঘটনা ১

১৫ মে ২০২৩। বেলা ১১টা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সান জুয়ান কাউন্টির ফারমিংটং শহর। ১৮ বছরের বিউ উইলসন সেখানে গুলি চালান এলোপাতাড়ি। উইলসন কতটা উদ্‌ভ্রান্ত ছিলেন, তা ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, আবাসিক এলাকায় তিনি পিস্তল হাতে উদ্‌ভ্রান্তের মতো হাঁটছেন। বাড়ি, রাস্তা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন। নিজে মারা যাওয়ার আগে হত্যা করেছেন তিনজনকে। এ ছাড়া তাঁর গুলিতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন ছয়জন।

ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছে, উইলসনের কাছে তিন ধরনের বন্দুক ছিল। পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে পাল্টাপাল্টি দেড় শ গুলি হয়েছে। উইলসন তিনটি গাড়িতে এবং ছয়টি বাড়িতে গুলি চালিয়েছেন।

ঘটনা ২

৬ মে, ২০২৩। বেলা সাড়ে ৩টা।

টেক্সাসের অ্যালেন শহরের অ্যালেন প্রিমিয়াম আউটলেট শপিং মল। সেখানে গুলি চালান ৩৩ বছর বয়সী মোরিসিও গার্সিয়া। তাঁর গুলিতে নিহত হন ৮ জন। পরে মোরিসিও নিহত হন।

এই নিহতদের মধ্যে একটি পরিবারের তিনজন। তাঁরা হলেন চু কিউ সং, তাঁর স্ত্রী কাং শিন ইয়ং ও তাঁদের তিন বছরের ছেলে জেমস। সবচেয়ে বেদনার বিষয়টি হলো, কোরীয় এই দম্পতির ছয় বছরের একটি সন্তান বেঁচে যায়। সে এখন একা এবং আহত। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে সে।

এ ছাড়া গুলিতে আরেক পরিবারের দুটি শিশু মারা যায়। তাদের নাম ড্যানিয়েলা ও সোফিয়া। ওই সময় গুলিতে তাদের মা ইলডা আহত হন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই দুটি হামলাই ঘটেছে অতর্কিত। দুই ঘটনার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু ঘটনা ঘটেই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অতর্কিত গুলির ঘটনা যেন খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইন করা হয় মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। দেশে দেশে তাই হয়। কিন্তু এই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে যে হিতে বিপরীত হতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। সংবিধানের সেই দ্বিতীয় সংশোধনী অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা নিজের নিরাপত্তার জন্য বন্দুক রাখতে পারবেন। এই বন্দুক তাঁরা বহন করতে পারবেন। এটা বেআইনি বলে বিবেচিত হবে না।

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে এমন সংশোধন যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তার অন্যতম নজির হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অহরহ গুলির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গুলির ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে যেখানে–সেখানে গুলি হচ্ছে। স্কুলশিক্ষার্থী চালিয়েছে—এমন ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি স্কুলে, পার্কে এমনকি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কী পরিমাণ মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র বা বন্দুক রাখেন, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে। ২০২১ সালে তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে বন্দুক রয়েছে।

এটা গেল ব্যক্তিপর্যায়ের হিসাব। বাড়ির হিসাব করলে সংখ্যাটা আরও বেশি। ২০২১ সালের জুনের জরিপ অনুসারে, দেশটির প্রতি ১০টি বাড়ির ৪টি বাড়িতে বন্দুক রয়েছে।

এখন হিসাব করা যেতে পারে জনসংখ্যার অনুপাতে। মার্কিন সরকারের ২০২০ সালের শুমারি অনুসারে, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্ক। অর্থাৎ ২৫ কোটি ৮৩ লাখের বেশি মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক। যদি পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাবও ধরা হয়, তাহলে প্রায় ৮ কোটি মানুষের কাছে বন্দুক রয়েছে। আট কোটির বেশি মানুষের কাছে বন্দুক রয়েছে, তা–ও কি না আইনসিদ্ধ—কল্পনা করা যায়? এটাই যে প্রকৃত সংখ্যা নয়, সেটা অনুমেয়। কারণ, বৈধ অস্ত্র যদি এই পরিমাণ থাকে, তবে অবৈধ অস্ত্র কী পরিমাণ আছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

এখন বিবেচনার বিষয় হলো, অস্ত্র সহজলভ্য হলে আসলে কী হয়। এই প্রশ্নোত্তর সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুলির ঘটনা বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। গত এপ্রিলে প্রায় প্রতিদিনই গুলির ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ১ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৪ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫৮ জন। এই ১৮ দিনে গুলির ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। আর চলতি বছরের হিসাব করলে সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়। এ বছর মারা গেছেন ২২৯ জন। আর আহত হয়েছেন ৬৬১ জন। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১০৮ দিনে গুলির ঘটনা ঘটেছে ১৬৫টি।

সংবিধানে আসলে কী বলা হয়েছে

সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল ১৭৯১ সালে। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা সুবিধা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বন্দুক রাখার যে সুবিধা, সেই সময় দেওয়া হয়েছিল সেটা, এখন প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও বিবেচনা করা দরকার। আবার এটাও দেখা দরকার, সত্যিকার অর্থে সংবিধানে কী বলা হয়েছিল। মার্কিন সংবিধানের ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, একটি মুক্ত রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়া বাহিনী প্রয়োজনীয়। আর এ জন্য জনগণের অস্ত্র রাখার এবং বহন করার অধিকার রয়েছে। এই অস্ত্র বহন করলে তা আইনের লঙ্ঘন হবে না।

এখন কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসেবে তখন কেমন ছিল। আজ যে যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা চিনি, সেই সময় এমন ছিল না। তাদের সেনাবাহিনী এত আধুনিক ছিল না। তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা এতটা জোরদার ছিল না। তখনকার পুলিশ বাহিনীও এতটা দক্ষ ছিল না। ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই মিলিশিয়া দরকার ছিল। আর সেই সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের চাওয়া ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সবাই মিলিশিয়ায় যোগ দেবে। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো যুদ্ধে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে, দেশকে তারা রক্ষা করবে। মূলত এই লক্ষ্য থেকেই সেই সময় সবাইকে অস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।

আবার সবাই যে তখন আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারত, বিষয়টা এমনও নয়। কারণ, তখন কৃষ্ণাঙ্গরা অস্ত্র রাখতে পারতেন না, ভারতীয় হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হতো, তাদেরও অস্ত্র রাখতে দেওয়া হতো না। এখানেই শেষ নয়। মার্কিন মুলুকের যাঁরা আদি বাসিন্দা, তাঁরাও অস্ত্র রাখতে পারতেন না।

এ প্রসঙ্গে দ্য চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের শিক্ষক ও লেখক নোয়া শাস্টারম্যান একটি লেখা লিখেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্ট–এ। ওই লেখায় মূলত তিনি সেই সময়ের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, যাঁরা মূলত সুসংগঠিত এবং দেশের ও সমাজের জন্য কাজ করবেন, তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে সেই সময়ের শাসকেরা আগ্রহী ছিলেন। যেমন সেই সময় যাঁরা মিলিশিয়া হিসেবে কাজ করেননি, তাঁদের হাতে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না শাসকেরা।

নোয়া ওই লেখায় লিখেছেন, সেই কৃতদাসেরা অস্ত্র রাখতে পারতেন না। তাঁদের ঘর তল্লাশি করা হতো সেই সময়। মিলিশিয়ারা সেই তল্লাশি চালাতেন। কৃতদাসদের ঘরে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেলে শাস্তির বিধান ছিল।

অর্থাৎ সেই সময় সবাই যে বন্দুক রাখার সুযোগ পেয়েছিল, এমনটা নয়। মূলত শ্বেতাঙ্গরা সেই সময় অস্ত্র রাখার সুযোগ পেতেন। কালে কালে এটাই হয়েছে। এখনো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র বেশি। অস্ত্র বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের কাছে।

পিউ রিসার্চের তথ্যও তাই বলছে। ২০২১ সালে তাদের জরিপে এটা উঠে এসেছে, রিপাবলিকান পার্টি করেন বা এই দলকে সমর্থন করেন, এমন ৪৪ শতাংশ ব্যক্তির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। উল্টো দিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-কর্মী বা দলটির সমর্থক এমন ২০ শতাংশের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। আবার নারীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের মধ্যে অস্ত্র রাখার প্রবণতাও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৯ শতাংশ পুরুষের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। নারীর কাছে অস্ত্র আছে, এমন হার ২২ শতাংশ। আবার যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামে বসবাস করেন, এমন মানুষের মধ্যে অস্ত্র রাখার প্রবণতা বেশি। গ্রামের ৪১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বন্দুক রাখেন। শহরতলিতে থাকেন, এমন প্রাপ্তবয়স্কদের ২৯ শতাংশ বন্দুক রাখেন। আবার শহরে এই পরিমাণ আরও কম। শহরে প্রতি ১০ জনে দুজনের কাছে অস্ত্র আছে। অর্থাৎ শহুরে ২০ শতাংশ মানুষের কাছে অস্ত্র আছে।

আগ্নেয়াস্ত্র কেনা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে নিজের সুরক্ষার জন্য অনেক কিছু করে। মানুষ সংঘবদ্ধ হয়। হামলার আশঙ্কা থাকলে পাহারা বসায়। কিন্তু হঠাৎ ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, ওই বছর বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র বেশি কিনেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তির কাছে অস্ত্র বিক্রির আগে তাঁর অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা হয়। দেখা হয়, আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে যাওয়া ওই ব্যক্তি এর আগে কোনো অপরাধ করেছেন কি না। কিংবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না। এরপর তাঁর কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যক্তির অতীতের যে অপরাধ খতিয়ে দেখার যে পদ্ধতি রয়েছে, সেই ব্যবস্থায় ২০২০ সালে এসে অপরাধ খতিয়ে দেখার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে ২০১৯ সালের তুলনায়। ২০২০ জুলাই মাসের একটি হিসাবও দেওয়া হয়েছে। ওই মাসের হিসাব অনুসারে, ৩৬ লাখবার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক (কোনো ব্যক্তির অপরাধের অতীত ইতিহাস খুঁজে দেখা) দেওয়া হয়েছে। যা ২০১৯ সালের জুলাই মাসের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ অস্ত্র কেনার পরিমাণ বেড়েছে।

রাজনীতিবিদেরা কী বলছেন

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দুটি ধারা একেবারে স্পষ্ট। একপক্ষ সব সময়ই বলে আসছে, তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে অস্ত্র রাখার পক্ষে। আরেক পক্ষ বলে আসছে, তারা ব্যক্তিপর্যায়ে অস্ত্র রাখার বিষয়টি কঠোর করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিভিন্ন সময় গুলির ঘটনার পর আইন কঠোর করার কথা বলেছেন। এ ছাড়া তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাধিক নেতা বিভিন্ন সময় একই ধরনের কথা বলেছেন। তাঁরা মূলত অস্ত্র আইন কঠোর করার পক্ষে।

কিন্তু বিপরীত চিত্রটা দেখা যায়, রিপাবলিকান পার্টিতে। তাদের অধিকাংশই এই আইন সংস্কারের বিপক্ষে। তাঁদের মতে, যাঁদের হাতে বৈধ অস্ত্র আছে, তাঁরা আসলে অপরাধে জড়াচ্ছে কম। আইন কঠোর করা হলে, বৈধভাবে অস্ত্রধারীদের জন্য বিষয়টি ঝক্কির হবে। অপরাধ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বৈধ অস্ত্রধারীদের হয়রানি করে লাভ নেই।

কিন্তু গত বছর টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে একটি স্কুলে হামলার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, এমন গুলির ঘটনা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি জায়গায় গিয়ে থমকে আছে। এটা ভয় থেকে নয়, একটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি একদল লবিস্টের কারণে এমনটা হচ্ছে। এমন বিয়োগান্ত ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে চায় না তারা।

যে দলটির প্রতি তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেটি রিপাবলিকান পার্টি। আরেক লবিস্টের কথা তিনি বলেছিলেন তারা হলো, ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা যাতে নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারে, সেই জন্য কাজ করে এই সংগঠন। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতা, আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর ক্ষেত্রে কাউকে পারদর্শী করতেও কাজ করে তারা। সংগঠনটি কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যাবে একটি উদাহরণ দিলে।

২০১৬ সালের নির্বাচনে এই সংগঠন নিজের পছন্দমতো প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে ৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার (বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫০ কোটি টাকা) ব্যয় করেছিল। এই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী ছিলেন সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন ব্যয় করে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার (বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩১০ কোটি টাকা)। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই রকম শক্তিশালী সংগঠন যদি অস্ত্র আইন কঠোর করার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে কি অস্ত্রের সহজলভ্যতা কমবে?

পরিস্থিতি বদলানো আসলেই কঠিন। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আইন কঠিন করার পক্ষে আন্দোলন হয়েছে; কিন্তু খুব বেশি কাজ হয়নি। ফলে অস্ত্রের সহজলভ্যতা রয়েই গেছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গুলির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর দেশটির গণমাধ্যম সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান স্মল আর্মস সার্ভের তথ্যের বরাত দিয়ে তারা বলছে, প্রতি ১০০ জন মানুষের বিপরীতে ১২০টি বন্দুক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থাৎ মানুষের চেয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। এই দেশে কি গুলির ঘটনা কমানো সম্ভব?

আবার ফেরা যাক যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে। ১৭৯১ সালে যখন সংবিধান সংশোধন করে মার্কিন নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় তাদের সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ এত শক্তিশালী ছিল না। এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব বাহিনী। এরপরও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার আর দরকার আছে কি না, সেটাই এখন ভেবে দেখার বিষয়।