ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কী হতো
৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের কথা। পৃথিবীতে তখন বাস করত বিশালাকার এক প্রাণী। নাম ডাইনোসর। ওদের আবার অনেক প্রজাতি ছিল। এখন যেমন অনেক ধরনের পাখি পৃথিবীতে বাস করে সেরকম। কোনোটা বিশাল বড়, আবার কোনোটা ছোট। কোনোটা উড়তে পারে তো কোনোটা পারে না। তারপর হঠাৎ একদিন আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে এলো একটা গ্রহাণু। ওটা ছিল বিশাল বড়। ওই গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে গেল। আর তাতে মারা গেল সব ডাইনোসর।
এখন ধরে নাও, পৃথিবীতে ওই গ্রহাণুটা কখনো পড়েইনি। পাশ কাটিয়ে চলে গেছে মঙ্গল গ্রহে বা অন্য কোথাও। আর গ্রহাণু যেহেতু পৃথিবীতে আঘাত করেনি, তাই ডাইনোসর মরার প্রশ্নই ওঠে না। এমন হলে পৃথিবীর অবস্থা কী হতো? ডাইনসর যখন পৃথিবীতে বাস করত, মানুষ তখন ছিল না। মানুষের আবির্ভাব ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার পরে। ডাইনোসর টিকে গেলে কী হত? ওরা কি সব মানুষ মেরে পৃথিবীর দখল নিত? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। কল্পনার ডানা মেলে চলো আমার সঙ্গে, আমরা ভাবি কী হতে পারত।
ধরে নিই, ডাইনোসর ও মানুষ একসঙ্গে পৃথিবীতে বাস করছে। এটা কিন্তু এখনকার কথা বলছি না। আরও অনেক আগের কথা বলছি যখন মানুষ গুহায় বাস করত। হয়তো একটা গুহায় শীতের দিনে আরাম করে ঘুমিয়ে থাকত একটা ইয়ায়ায়ায়… বড় ডাইনোসর। পাশের কোনো গুহায় ঘুমাত একদল মানুষ। ডাইনোসরের সঙ্গে মানুষের দেখা হলে লাঠি নিয়ে তেড়ে যেত ওদের দিকে। ভয়ে পালাত ডাইনোসরগুলো। তোমরা অবশ্য ভাবতে পারো, কল্পনা করাটা ঠিক যুতসই হচ্ছে না। আসলে এটা হতো উল্টো। ডাইনোসর দেখে বরং মানুষ ভয়ে পালাত।
কল্পনা করো, দুটি ডাইনোসরের পিঠে একজন কৃষক লাঙল বেঁধে দিয়েছে, ওরা জমি চাষ করছে। অথবা মামা বাড়ি যাবে, একটা ডাইনোসরের পিঠে চড়ে বসলে। হয়তো তোমার রুমের পাশেই বাঁধা থাকত দুই চারটা ডাইনোসর!
সত্যিই যদি তোমাদের ভাবনা এটা হয়, তাহলে জানিয়ে রাখি, একসময় পৃথিবীতে ম্যামথ বাস করত। মানুষ তখনো সভ্য হয়নি। হাতিয়ারও ছিল সামান্য। অন্যদিকে ম্যামথগুলো ছিল মস্ত বড়। কিন্তু মানুষের মাথায় বুদ্ধি থাকায় ওগুলো মানুষকে শাসন করতে পারেনি। বরং তখনকার সেই সামান্য হাতিয়ার দিয়েই মানুষ বধ করেছে ম্যামথকে। ডাইনোসর বেঁচে থাকলেও হয়তো ওদের ভাগ্যে তাই জুটত।
এবার বর্তমানে ফিরে আসি। ধরে নিচ্ছি, মানুষ সব ডাইনোসরকে মারেনি। কল্পনায় একসঙ্গে সব ডাইনোসর মেরে ফেললে মজা হবে না। ধরি ডাইনোসর বেঁচে আছে। সেক্ষেত্রে আরেকটা ভিন্ন চিত্র দেখা যেত। হয়তো ডাইনোসরকে মানুষ পোষা প্রাণী বানিয়ে ফেলত। এখন যেমন হাতি বা ঘোড়া পুষি আমরা, অনেকটা সেরকম। বড় ডাইনোসরগুলো বেশি ঝামেলা করলে ওগুলো মেরে ছোটগুলোকে পুষত। অথবা ওগুলোকে জুরাসিক পার্কের মতো কোনো বিশাল পার্কে আটকে রাখলেই হতো। আর ছোটগুলো আমরা পালন করতাম। এই বাঘের কথাই ভাবো না। বড় এই বিড়ালজাতীয় প্রাণীগুলো সুযোগ পেলেই আক্রমণ করে, তাই চিড়িয়াখানায় আটকে রাখা হয়। কিন্তু বিড়াল ছোট এবং আক্রমণ করে না বলে ওকে কোলে নিয়ে ঘুরতেও কেউ ভয় পায় না।
আবার কল্পনা করো, দুটি ডাইনোসরের পিঠে একজন কৃষক লাঙল বেঁধে দিয়েছে, ওরা জমি চাষ করছে। অথবা মামা বাড়ি যাবে, একটা ডাইনোসরের পিঠে চড়ে বসলে। হয়তো তোমার রুমের পাশেই বাঁধা থাকত দুই চারটা ডাইনোসর! সকালে উঠে কিছু ঘাস লতাপাতে দিতে খেতে। গলায় দড়ি বেঁধে বিকেলে পার্কে ঘুরতে যেতে। কত কিছুই তো হতে পারত বলো! কিন্তু সব নষ্টের গোড়া ওই গ্রহাণুটা।
সূত্র: পিকাবু কিডস, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ও কিউরিয়াস কিডস