কিছুদিন বৃষ্টি না হলে আমরা ভাবি, বৃষ্টি হচ্ছে না কেন? গরমের দিনে তো বৃষ্টির জন্য আমরা রীতিমতো হাঁসফাঁস করি। মনে হয়, কবে হবে বৃষ্টি? আশা করতে থাকি, বৃষ্টি যেন তাড়াতাড়ি হয়। আমাদের কাছে বৃষ্টি মানে প্রশান্তি। কিন্তু পৃথিবীতে এমন জায়গাও আছে, যেখানে বৃষ্টি একদমই হয় না। আবার হলেও সেটা না হওয়ার মতোই। এমনই একটি শহর লিমা।
লিমা পেরুর রাজধানী। এটি একটি ব্যস্ত মহানগর এবং দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে লিমায় বৃষ্টিপাত সবচেয়ে কম। বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার। বাংলাদেশে যেমন বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২২০০ মিলিমিটার। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগেই বছরে বৃষ্টিপাত হয় প্রায় ১৫৮.৬৫ মিলিমিটার। আবার উত্তরাঞ্চলের বিভাগ রংপুরের বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায়ই ১৪৭.৭৬ মিলিমিটার। সে তুলনায় লিমার বৃষ্টিপাত খুবই কম। গত ৬০০ বছরে লিমায় এমন বৃষ্টিপাত হয়নি। বছরজুড়ে কোনো ঝড়, বজ্রপাত, বিদ্যুৎ চমকানো, বরফ পড়া—কোনো কিছুর কথাই শোনা যায় না এখানে। বৃষ্টি হয় না বলে এখানের দোকানগুলোয় ছাতা, রেইনকোটও তেমন পাওয়া যায় না। এমনকি লিমার কিছু কিছু বাড়ির ছাদ পর্যন্ত নেই। শহরের রাস্তায় মাত্র কয়েকটি ড্রেনেজ চ্যানেল রয়েছে।
কিন্তু লিমায় বৃষ্টি কেন হয় না? বৃষ্টি হয় না বলে নিশ্চয়ই সেখানে গরমও খুব বেশি? এর উত্তর, না। বৃষ্টি হয় না বলে লিমায় গরমও খুব বেশি পড়ে না। এর কারণ? বলছি।
আরেকটি কারণ শহরের পূর্ব দিকে থাকা আন্দিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালা তাপ, ঝড়, বৃষ্টিসহ অ্যামাজন বেসিন থেকে আসা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মেঘকে উপকূলে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে মরুভূমি অঞ্চলের রিম্যাক, লুরিন ও চিলন নদীর উপত্যকায় অবস্থিত লিমা। নদীগুলো আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব দিকের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হয়েছে। লিমার জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মরুভূমি জলবায়ু। বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্রোত হলো ঠান্ডা হামবোল্ট স্রোত। এটি দক্ষিণ চিলি থেকে উত্তর পেরু পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোত উত্তর দিক থেকে আসা উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মেঘকে পেরুর কেন্দ্রীয় উপকূলে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়। এর সঙ্গে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সূর্যের তাপও কমিয়ে দেয়। ফলে গ্রীষ্মকালে মেঘ তৈরি হয় না। শীতের মাসগুলোয় মেঘ, কুয়াশা ও উচ্চ আর্দ্রতা তৈরি হয়।
আরেকটি কারণ শহরের পূর্ব দিকে থাকা আন্দিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালা তাপ, ঝড়, বৃষ্টিসহ অ্যামাজন বেসিন থেকে আসা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মেঘকে উপকূলে পৌঁছাতে বাধা দেয়। এসব কারণে লিমায় বৃষ্টি হয় না। তবে কুয়াশা আর মেঘ থাকে। লিমায় বৃষ্টি যতটুকু হয়, পুরোটাই কুয়াশা আকারে হয়। অর্থাৎ আমাদের দেশে যেমন ঝরঝর বৃষ্টি হয়, মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে সব ভিজিয়ে দেয়, লিমায় তা হয় কুয়াশার মতো। ফলে বৃষ্টি গায়েই লাগে না। কুয়াশা আর মেঘ থাকায় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে লিমায় অসহনীয় গরমও পড়ে না। গরমের সময় লিমার তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির বেশি হয় না। শীতের সময় অক্টোবরে তাপমাত্রা থাকে ১৬ ডিগ্রি। লিমার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৮.৭ ডিগ্রি।
লিমা ছাড়াও পৃথিবীতে আরও কিছু শহর আছে, যেগুলোয় বৃষ্টি কম হয়। যেমন পেরুর আরেক শহর ইকা, চিলির শহর আরিকা, ইকুইক, লিবিয়ায় অবস্থিত আল-কুফরাহ, মিসরের শহর আসওয়ান, লুক্সর, সুদানের ওয়াদি-হালফা, আলজেরিয়ার আউলেফ ইত্যাদি। এসব শহরে যদিও বৃষ্টি কম হয়, তবে এসব শহর থেকেও কম বৃষ্টি হয় লিমাতে। তাই লিমা ‘বৃষ্টিহীন শহর’ খেতাব পেয়েছে।