আমার ছোট ভাই রাফি। এখন বড় হয়ে গেছে। কলেজে পড়ে। কিন্তু ছোটবেলার অভ্যাস এখনো ছাড়েনি। ছোটবেলায় রাফি কোনো মাছ খেতে চাইত না। মা জোর করে ওকে মাছ খাওয়াতে চাইলে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করত। তো ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় রাফিকে একবার জোর করে ছোট মাছ খাওয়ানো হলো। মাছ খাওয়ানোর সময় মা গল্প করলেন, ছোট মাছ খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে। মন দিয়ে শুনল কথাটা। পরদিন ঘটলো আজব ঘটনা। রাফি মাকে বলে, কই আমি তো কালকের থেকে বেশি চোখে দেখি না। কালকেও দূরের (আমাদের জানালা থেকে দূরে একটা বিল্ডিং দেখা যায়) বিল্ডিং ঝাপসা ছিল। আজও তাই। পরিস্কার করে বিল্ডিং দেখতে পাচ্ছি না।
মা পড়লেন বিপদে। বোকা রাফি এমনিতেও মাছ খায় না। তার ওপর এমন আজব যুক্তি। একদিন মাছ খেলেই কি চোখের জ্যোতি বেড়ে যায়? আদৌ কি ছোট মাছে চোখের জ্যোতি বাড়ে? তখন থেকে আমার মনে এই প্রশ্ন।
আমরা তো জানি, বাঙালি মাত্রই মাছ খেতে পছন্দ করে। মাছ নিয়ে আমাদের অনেক কৌতূহল। মাছ ধরার ভিডিও দেখতে ভালো লাগে। মাছ নিয়ে সবার অনেক রকম ধারণা। এর মধ্যে কয়েকটি সত্যি, আবার কিছু তো একেবারেই ভুয়া। যেমন ধর, ছোট মাছ খেলে নাকি চোখের জ্যোতি বাড়ে! এখন প্রশ্ন হল, আদৌ কি এই ধারণার পিছনে কোনও সত্যতা রয়েছে, নাকি পুরোটাই মিথ?
ছোট মাছ সাধারণত স্বাস্থ্যকর। ছোট মাছে রোগ প্রতিরোধ শক্তি থাকে। কিছু পুষ্টিবিদ পরামর্শ দেন, ছোট মাছের নিয়মিত খেলে পুষ্টি উপাদানের কারণে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ছোট মাছ প্রোটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজের ভালো উৎস। চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া হয়। কাঁটার মধ্যে কয়েক ধরনের খনিজ ও ভিটামিন থাকে। বড় মাছের কাঁটা বেছে ফেলে দেওয়া হয়। তাই কাঁটার মধ্যে থাকা খনিজ আর ভিটামিন পাওয়া যায় না।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার বলেছেন, নিয়মিত ছোট মাছ খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। বিশেষ করে মাছের মুড়ো খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। ছোট মাছের মাথা খুব উপকারী। এতে থাকা কিছু ফ্যাট চোখের জ্যোতি বাড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, এসব মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ। এই ভিটামিনও চোখের খুব উপকার করে। এমনকি এতে থাকা প্রোটিন চোখের নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। ছোট মাছের খাবারে অপরিহার্যভাবে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড চোখের জ্যোতি নিবেশনে ভূমিকা পালন করে। ফলে চোখ রক্ষা পায়। চোখ সেরে ওঠে। চোখের যত্নে নিয়মিত ছোট মাছ খেতে পারো।
শুধু চোখ নয়, নিয়মিত ছোট মাছ খেলে শরীরের একাধিক উপকার হবে। মাছে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের শক্তি বাড়ায়। স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। এছাড়া নিয়মিত এসব মাছ খেলে ইমিউনিটি বাড়বে। পেশির জোরও বাড়বে। তাই তো চিকিৎসকেরা সবাইকে নিয়মিত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে টুনা, স্যালমন, ম্যাকেরেলের মতো সামুদ্রিক মাছ খেলে উপকার মিলবে বেশি। সুস্থ-সবল জীবন কাঁটাতে নিজের পছন্দ মতো যে কোনো মাছ পাতে রাখতে পারো।
মা মাছ খাওয়াতে চাইলে রাফির মতো না করো না। ছোট মাছ আগ্রহ নিয়ে খেয়ো।