মৃত্যুর আগে এক দিনের জন্য পুলিশ হলো শিশুটি, শুরু হলো শেষ ইচ্ছা পূরণ করা এক সংগঠনের
রূপকথার গল্পের ইচ্ছাপূরণকারী পরিদের চেনো? যাদের কাছে নিজের ইচ্ছাগুলোর কথা জানালে তারা নিমেষেই পূরণ করে দেয় সেসব। কিংবা চেরাগ ঘষলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে বেরিয়ে আসে ইচ্ছাপূরণকারী দৈত্য। রূপকথার গল্পে এমন পরি-দৈত্যদের ইচ্ছাপূরণগুলো দেখে মাঝেমধ্যে হয়তো আমরাও মনে মনে ভাবি, এমন ইচ্ছার কথা কাউকে জানাতে, যে নিমেষেই পূরণ করে দেবে আমাদের প্রিয় ইচ্ছাটি!
এমন ইচ্ছাগুলোর কথা কাউকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যই ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব ইচ্ছা দিবস। প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে ২০১০ সাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা মেক আ উইশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিনটি চালু হয়। এই দিনের কথা সবাই জানলেও অনেকেরই জানা নেই এর পেছনের গল্পটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের একটি শহরে বাস করত সাত বছর বয়সী ছোট্ট ক্রিস্টোফার জেমস গ্রেসিয়াস। ক্রিসের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বড় পুলিশ কর্মকর্তা হবে। কিন্তু তার ছোট্ট শরীরে তখন বাসা বেঁধেছিল লিউকেমিয়া নামের দুরারোগ্য এক রোগ। তখনই ক্রিসের জীবনে ইচ্ছাপূরণ দৈত্য হয়ে আসে তার পরিবারের পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা টমি অস্টিন। ক্রিসের ইচ্ছা পূরণ করতে তাকে এক দিনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তার পদ দেওয়া হয়। শুধু তা–ই নয়, তার জন্য বানানো বিশেষ পোশাক পরিয়ে ঘুরিয়ে আনা হয় পুলিশের জিপ গাড়িতে করে। এর কিছুদিন পরই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যায় ক্রিস। তবে ইচ্ছা পূরণের জন্য তার শেষ দিনগুলো কেটেছিল বেশ সুখে।
ব্যাপারটি নাড়া দেয় ক্রিসের মা লিন্ডাকে। তাঁর ছেলের মতো আরও কত কত শিশু রয়েছে, যারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। মৃত্যুর পূর্বে একটি ইচ্ছাপূরণ, তাদের শেষ দিনগুলোয় মুখে একটু হলেও হাসি ফোটাবে। এই ভেবেই অনেকের সহযোগিতায় তিনি উদ্যোগ নেন ‘মেক আ উইশ ফাউন্ডেশন’ গঠনের। এই সংস্থা থেকে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংস্থাটি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে গঠন হলেও এখন বিশ্বের অনেক দেশে রয়েছে এর শাখা। সেখান থেকে প্রতিবছর লাখো শিশুর স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করে সংস্থাটি। আর ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল ছোট্ট ক্রিস এক দিনের জন্য তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল বলে দিনটিকেই ধার্য করা হয় বিশ্ব ইচ্ছা দিবস হিসেবে।