ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরির এই পদ্ধতি জানা আছে কি?

সৈকতে পা রাখার জায়গাও নেই। ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মৃত শামুক–ঝিনুক। ছবিটি ১৮ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রসৈকত থেকে তোলা lপ্রথম আলো

বেশির ভাগ গয়না মূল্যবান ধাতু ও রত্ন থেকে তৈরি করা হয়। তবে মুক্তা সেদিক থেকে আলাদা। এটি কোনো ধাতু থেকে না, বরং ঝিনুকের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। কিন্তু কীভাবে ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা তৈরি হয়, তা বুঝতে ঝিনুকের গঠন সম্পর্কে একটু জানতে হবে। মানে ঝিনুক কীভাবে খায়, নড়াচড়া করে, খাদ্য হজম করে—এসব বিষয় জানতে হবে। প্রথমে তা জানার চেষ্টা করি।

নিশ্চয়ই দেখেছো, ঝিনুকের দুটি খোলস থাকে। মানে ওপরের এক পাটি ও নিচের এক পাটি খোলস। দুটি খোলস একটি লিগামেন্টের সাহায্যে আটকে থাকে। অনেকটা দরজার কবজার মতো। কবজার সাহায্যে দরজা যেমন খোলে ও বন্ধ হয়, ঝিনুকের দুটি খোলসও তেমনি লিগামেন্টের সাহায্যে খোলে ও বন্ধ হয়। তবে ঝিনুককে নির্জীবভাবে পড়ে থাকতে দেখলেও এটি কিন্তু একটি প্রাণী। এদেরও জীবন আছে, খিদে পেলে খায়। ঝিনুকের রয়েছে মুখ, পেট, হৃদয়, অন্ত্র, মলদ্বার ও ম্যান্টল নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ম্যান্টল থাকে খোলসের ভেতর। খোলস তৈরি হয় ন্যাক্রের সাহায্যে। ঝিনুক যে খাবার খায়, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ জমিয়ে একধরনের তরল তৈরি করে প্রাণীটি। এই তরলকে বলে ন্যাক্রে। কার্বোনেট খনিজ ও প্রোটিনের সাহায্যে এ তরল তৈরি হয়।

আবার ভেবে বসো না যে সব মুক্তা গোলাকার হয়। কিছু কিছু মুক্তা হয় অসম আকৃতির। এগুলোকে বলে ব্যারোক। ওষুধ তৈরির কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়। কারণ, অসম মুক্তা অলংকার হিসেবে মানুষ তেমন পছন্দ করে না।

ঝিনুক খাবার খাওয়ার সময় খোলস খোলা থাকে। মানে হাঁ করে থাকে আরকি। আমরা যেমন মুখ হাঁ করে খাবার খাই, অনেকটা সে রকম ব্যাপার। খোলস খোলা থাকা অবস্থায় খাবারের পাশাপাশি বালু কিংবা অন্য কোনো পদার্থ বা পরজীবী ঝিনুকের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর এই বালু কিংবা পরজীবীকে পাকড়াও করে ম্যান্টল। সঙ্গে সঙ্গে বিপদের হাত থেকে বাঁচতে ম্যান্টল ছেড়ে দেয় ন্যাক্রে নামে তরল। এই তরল ধীরে ধীরে জমতে থাকে। একসময় তা জমতে জমতে শক্ত হয়ে যায়। আর এই শক্ত জিনিসই একসময় পরিণত হয় মুক্তায়। আরেকটু সহজভাবে বুঝতে হলে নিচের উদাহরণ পড়তে পারো।

জালের টানে আসা জলজ শামুক-ঝিনুক বিলের পাড়ে স্তূপ করে রাখা

আমাদের শরীরের যখন কোনো পরিজীবী আক্রমণ করে, তখন শরীর অ্যান্টিবডি ছেড়ে দেয় ওই পরজীবী থেকে সুরক্ষা পেতে। অ্যান্টিবডি তখন পরজীবীকে চারদিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে, যেন শরীরে কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ঝিনুকও একই কাজ করে। ন্যাক্রে নামে তরল ছেড়ে দেয় নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য। অনেক বছর পর সেই তরল জমে মুক্তায় পরিণত হয়।

আরও পড়ুন

এখন তোমার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, কত দিনে একটা মুক্তা তৈরি হয়। আসলে মুক্তা কত দিনে তৈরি হবে, তা নির্ভর করে ঝিনুকের ন্যাক্রে নিঃসরণের ওপর। কিছু কিছু ঝিনুক প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ন্যাক্রে নিঃসরণ করে। সে হিসাবে ৫ মিলিমিটারের একটা মুক্তা তৈরি হতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। সাধারণত প্রাকৃতিক মুক্তাগুলো ১ মিলিমিটার থেকে ৭ মিলিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। তবে কিছু মুক্তার ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো অবশ্য বিরল ও খুব মূল্যবান। মুক্তা যত বড় হবে, তার দাম তত বেশি।

ঝিনুক

বেশির ভাগ মুক্তা দেখতে সাদা হলেও আরও নানা রঙের মুক্তা পৃথিবীতে পাওয়া যায়। যেমন লাল, কালো, ধূসর, নীল ও সবুজ। এর মধ্যে কালো মুক্তা পাওয়া যায় বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরের ঝিনুকে। এদের খাদ্য গ্রহণ, প্রজাতি ও পরিবেশ ভেদে মুক্তার রঙের ভিন্নতা দেখা যায়।

আরও পড়ুন

আবার ভেবে বসো না যে সব মুক্তা গোলাকার হয়। কিছু কিছু মুক্তা হয় অসম আকৃতির। এগুলোকে বলে ব্যারোক। ওষুধ তৈরির কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়। কারণ, অসম মুক্তা অলংকার হিসেবে মানুষ তেমন পছন্দ করে না।

প্রাকৃতিক মুক্তা ছাড়াও তৈরি করা যায় কৃত্রিম মুক্তা। কারণ, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মুক্তা মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই এই কৃত্রিম মুক্তার ব্যবস্থা। বাংলাদেশেও কিন্তু কৃত্রিম মুক্তা তৈরি হয়। মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়া একই। প্রথমে একটা ঝিনুকের নিউক্লিয়াস কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। সেই টুকরা খুব সূক্ষ্মভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ঝিনুকের ম্যান্টলের মধ্যে। ব্যস, ম্যান্টল থেকে তরল নিঃসৃত হয়ে তৈরি হয় মুক্তা। তবে কৃত্রিম মুক্তার দাম প্রাকৃতিক মুক্তার মতো নয়। প্রাকৃতিক মুক্তার দাম অনেক বেশি।

সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস

আরও পড়ুন