বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে ৫০টি জলহস্তী কেন মারা গেল

উগান্ডার মারচুরিয়ান ফলসের কাছে ভিক্টোরিয়া নাইলের পানিতে ডুবে আছে কিছু জলহস্তী।ছবি: এএফপি

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী হলো জলহস্তী। দেখতে সাধারণ হলেও আচরণে এরা বেশ হিংস্র। এই প্রাণীটি আফ্রিকার স্থানীয়। সম্প্রতি প্রাণীটি খবরের শিরোনাম হয়েছে দুর্যোগের কারণে। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে মারা গেছে অন্তত ৫০টি জলহস্তী। জলহস্তী ছাড়াও আরও কয়েকটি বড় বন্যপ্রাণী মারা গেছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষক্রিয়াজনিত অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছে প্রাণীগুলো। মৃত প্রাণীর দেহ পার্কসংলগ্ন নদীর পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। এই নদীটি আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ হ্রদ লেক এডওয়ার্ডে গিয়ে মিশেছে।

বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের পরিচালক ইমানুয়েল দে মেরোডে জানিয়েছেন, পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স বিষক্রিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিছু মহিষও এতে মারা গেছে। তবে এখনও এই বিষক্রিয়ার উৎস নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। পার্ক কর্তৃপক্ষের শেয়ার করা ছবিতে দেখা গেছে, জলহস্তীগুলোর কোনোটি উল্টে আছে। কোনোটি পাশ ফিরে নদীর পানিতে পড়ে আছে। কাদামাটির পাড়ে ঝোপঝাড়ের মধ্যে আটকে আছে কিছু।

এই মৃত্যু পার্কের জন্য এক বড় ধাক্কা। কারণ, গত কয়েক দশক ধরে জলহস্তীর সংখ্যা পুনরুদ্ধারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। শিকার ও যুদ্ধের কারণে একসময় এই অঞ্চলে জলহস্তীর সংখ্যা ২০ হাজার থেকে ২০০৬ সালে কয়েক শ’তে নেমে আসে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০টি জলহস্তী আছে।

অ্যানথ্রাক্স

প্রায় পাঁচ দিন আগে প্রথম পার্কের রেঞ্জাররা নদীতে মৃত প্রাণীর দেহ ভেসে থাকতে দেখেন। নদীটি কঙ্গো ও উগান্ডার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর কিছু অংশ বিদ্রোহী যোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণ করেন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কঙ্গোর প্রকৃতি সংরক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করে জানায়, তাঁরা যেন বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে। পানি ব্যবহার করার আগে ফুটিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়।

দে মেরোডে আরও জানান, একটি দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে। মৃত জলহস্তীগুলোর দেহ তুলে সেগুলোকে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে খননযন্ত্রের অভাবে কাজটি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি খুব কঠিন কাজ, কারণ জায়গাটি দুর্গম এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা মৃতদেহগুলোকে কস্টিক সোডা দিয়ে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

নদীটি উত্তরে লেক এডওয়ার্ড পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। এই এলাকায় আরও অনেক মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখা গেছে। ন্যাকাকোমার সুশীল সমাজের একজন নেতা থমাস কাম্বালে বলেছেন, ‘কাগেজি থেকে ন্যাকাকোমা পর্যন্ত হ্রদের পানিতে ২৫টিরও বেশি জলহস্তীর মৃতদেহ দেখা গেছে।’

বিরুঙ্গা একটি বিশাল সংরক্ষিত এলাকা, যেখানে গভীর বন, হিমবাহ, ও আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে সবচেয়ে বেশি পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতির আবাস রয়েছে। তবে বহু বছর ধরেই এটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপের মধ্যে আছে, বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে গৃহযুদ্ধের পর থেকে।

সূত্র: রয়টার্স

আরও পড়ুন