তোমাদের নিয়ে যাব এমন এক অদ্ভুত দ্বীপে, যেখানে বাসিন্দারা হয় সব সময় সত্য কথা বলে অথবা সব সময় মিথ্যা কথা বলে। দ্বীপের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে:
• ফিফি: এখানে তুমি যেতে চাও।
• ফুফু: এখানে থাকা খুব ঝামেলার, তাই তুমি সেখানে যেতে চাও না।
এই দ্বীপে পৌঁছে আমরা এমন কিছু ধাঁধার মুখোমুখি হব, যা তোমার যুক্তি আর পর্যবেক্ষণ শক্তি পরীক্ষা করবে। ধাঁধাগুলো শুরুতে সহজ হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠবে।
তাহলে প্রস্তুত তো? চলো শুরু করা যাক!
ক. দ্বীপে নামার পরই দুজন লোক চলে এল। একজন লাল রঙের কাপড় পরা, আরেকজন নীল রঙের কাপড় পরা। লাল রঙের কাপড় পরা লোকটি এসেই বলল, ‘আমরা দুজনই মিথ্যাবাদী।’
বলো তো এই দুজনের পরিচয় কী?
খ. একটু এগিয়ে যেতেই আরও দুজন লোক এল। একজন কালো রঙের কাপড় পরা, আরেকজন সাদা রঙের কাপড় পরা। কালো রঙের কাপড় পরা লোকটি এসেই বলল, আমরা দুজন একই ধরনের লোক। আর সাদা রঙের কাপড় পরা লোকটা বলল, আমরা দুজনে ভিন্ন ধরনের লোক। বলো তো এই দুজনের পরিচয় কী?
গ. এবার হাঁটতে হাঁটতে একটা দুই রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালে। দুজন লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি বুঝতে পারলে, এদের একজন সত্যবাদী আর একজন মিথ্যাবাদী। কিন্তু তুমি বুঝতে পারলে না কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী। এবার তুমি তাদের একজনকে একটাই মাত্র প্রশ্ন করতে পারবে সেই ফিফিতে যাওয়ার জন্য। তুমি কী প্রশ্ন করবে?
একজন লাল কাপড় পরা, একজন নীল কাপড় পরা আর একজন সবুজ কাপড় পরা। এবার লাল কাপড় পরা লোকটি বলল, ‘আমি সত্যবাদী’, নীল কাপড় পরা লোকটি বলল, ‘লাল কাপড় পরা লোকটি সত্য কথা বলছে।
ঘ. এবার হাঁটতে হাঁটতে একটা দুই রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালে। একজন লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি বুঝতে পারলে না সে সত্যবাদী, না মিথ্যাবাদী। এবার তুমি তাকে একটাই মাত্র প্রশ্ন করতে পারবে সেই ফিফিতে যাওয়ার জন্য। তুমি কী প্রশ্ন করবে?
ঙ. এবার তুমি চলে এলে ফিফিতে। এবার এল এক নতুন সমস্যা। তারা বাংলা বোঝে কিন্তু এরা সবাই হ্যাঁ-না উত্তর দেয় নিজের ভাষায়। তারা বলে সি আর বে। কিন্তু তুমি তো বুঝতে পারছ না এর মানে হ্যাঁ, নাকি না? তুমি একজনের কাছে জানতে চাইলে, আচ্ছা সি মানে কি হ্যাঁ? সে বলল সি। তুমি কি সি শব্দের অর্থ বের করতে পারবে? আর যে লোকটা বলল সে কি সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী, সেটা বলা যায়?
চ. এবার তুমি আরেকজন লোকের মুখোমুখি হলে। এবার তুমি সি আর বে–এর মানে জানতে চাও। এবার তাকে কি একটা হ্যাঁ বা না দিয়ে উত্তর দেওয়া যায় এমন প্রশ্ন করলে তুমি শব্দ দুটির অর্থ বুঝবে।
ছ. বেশ কিছুদিনের মধ্যে তোমার মতো অনেকেই গুপ্তচর হয়ে এসেছে। ফলে সত্যবাদী–মিথ্যাবাদীর মতো আরও একদল লোক হলো যারা সত্যও বলতে পারে আবার মিথ্যাও বলতে পারে। এবার আবার তিনজনের সঙ্গে দেখা হলো, এরা তিনজন তিন ধরনের। একজন লাল কাপড় পরা, একজন নীল কাপড় পরা আর একজন সবুজ কাপড় পরা। এবার লাল কাপড় পরা লোকটি বলল, ‘আমি সত্যবাদী’, নীল কাপড় পরা লোকটি বলল, ‘লাল কাপড় পরা লোকটি সত্য কথা বলছে।’ আর সবুজ কাপড় পরা লোকটা বলল, ‘আমি গুপ্তচর।’ এবার বলো কে কোন ধরনের লোক।
সমস্যা সমাধানের যুক্তিগুলো—
এবার প্রশ্নের মধ্যেই বিস্তারিতভাবে যুক্তি দেওয়া আছে। তাই উত্তরগুলো ভেবে বের করো।
ক. লাল কাপড় পরা লোকটি সত্যবাদী হতে পারে না। তাহলে তারা দুজন মিথ্যাবাদী কথাটা সত্য হতে হয়। আবার লাল কাপড় পরা লোকটিকে মিথ্যাবাদী হতে হলে তার বলা কথাটা মিথ্যা হতে হবে। এটা তখনই সম্ভব, যখন নীল কাপড় পরা লোকটা সত্যবাদী হয়।
খ. যেহেতু দুজন দুই ধরনের উত্তর দিয়েছে, তাহলে অবশ্যই একজন সত্যবাদী, আরেকজন মিথ্যাবাদী। তাহলে এ আলোচনা থাকে বলা যায়, দ্বিতীয় ব্যক্তি তথা সাদা পোশাক পরা লোকটিই হলো সত্যবাদী।
গ. প্রমাণের স্বার্থে আমরা ধরে নিই বাঁ দিকে ফিফি আর ডান দিকে ফুফু। (উল্টো হলেও সমস্যা ছিল না)
আবার ক লোকটাকে সত্যবাদী আর খ লোকটাকে মিথ্যাবাদী ধরি। (উল্টো হলেও ব্যাপার না।) তুমি গিয়ে জানতে চাইবে আমি যদি অন্য মানুষটাকে জিজ্ঞেস করি ফিফির রাস্তাটা কোন দিকে, তাহলে সে কোন রাস্তা দেখাবে?
ধরো আমি ধরলাম দিকটা ভুল আছে। মানে আমি বললাম ডান দিকে। যদি লোকটা সত্যবাদী হয়, তাহলে যেহেতু ডান দিকে ফিফি, তাই সে না বলত; তাই আমার প্রশ্নের উত্তরেও সে বলবে না। অন্যদিকে লোকটা মিথ্যাবাদী হলে বাঁ দিক ফিফি, তাই সে উত্তর দিত হ্যাঁ।
ধরো ক-এর কাছে জানতে চাইলে খ-এর কাছে ফিফির রাস্তা কোন দিকে জানতে চাইলে সে কোন দিকে দেখাবে? আসো এবার ভাবি, খ-এর কাছে যদি জানতে চাইতাম ফিফির রাস্তা কোন দিকে, তাহলে ফুফুর দিকে রাস্তা দেখাত। আর যেহেতু ক সত্যবাদী, তাই সে ফুফুর দিকের রাস্তাই দেখাবে।
আবার আসো যদি ধরো খ-এর কাছে জানতে চাইলে ক-এর কাছে ফিফির রাস্তা কোন দিকে জানতে চাইলে সে কোন দিকে দেখাবে? আসো এবার ভাবি ক-এর কাছে যদি জানতে চাইতাম ফিফির রাস্তা কোন দিকে, তাহলে ফিফির দিকের রাস্তা দেখাত। আর যেহেতু খ মিথ্যাবাদী, তাই সে ফুফুর দিকের রাস্তাই দেখাত। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা ফুফুর দিকের রাস্তা পেলাম। এবার তাহলে তাদের দেখানো দিকের উল্টো দিকে সঠিক পথে যাত্রা শুরু করব।
ঘ. প্রমাণের স্বার্থে আমরা ধরে নিই বাঁ দিকে ফিফি আর ডান দিকে ফুফু। (উল্টো হলেও সমস্যা ছিল না)
এই দুই পথের কোন দিকে চিহ্নিত করে লোকটার কাছে জানতে চাইব, আমি যদি বলি এই দিকে ফিফি, তাহলে তুমি কি হ্যাঁ বলবে?
ধরো আমি ধরলাম দিকটা ঠিক আছে। মানে বাঁ দিকে। যদি লোকটা সত্যবাদী হয়, তাহলে যেহেতু বাঁ দিক ফিফি, তাই সে হ্যাঁ বলত। তাই আমার প্রশ্নের উত্তরেও সে বলবে হ্যাঁ। অন্যদিকে লোকটা মিথ্যাবাদী হলে বাঁ দিক ফিফি, তাই সে উত্তর দিত না। কিন্তু সে তো এবারও মিথ্যা কথা বলবে, তাই সে বলবে হ্যাঁ। তাই যদি উত্তর হ্যাঁ দেয়, তাহলে আমি সেই দিকে যাব।
ধরো আমি ধরলাম দিকটা ভুল আছে। মানে আমি বললাম ডান দিকে। যদি লোকটা সত্যবাদী হয়, তাহলে যেহেতু ডান দিকে ফিফি, তাই সে না বলত; তাই আমার প্রশ্নের উত্তরেও সে বলবে না। অন্যদিকে লোকটা মিথ্যাবাদী হলে বাঁ দিক ফিফি, তাই সে উত্তর দিত হ্যাঁ। কিন্তু সে তো এবারও মিথ্যা কথা বলবে, তাই সে এবার বলবে না। তাই যদি উত্তর না দেয়, তাহলে আমি তার বিপরীত দিকে যাব।
যদি সে মিথ্যা বলে, তাহলে লালও মিথ্যা কথা বলেছে। কিন্তু এখানে তিন ধরনের লোক আছে। তাই নীল কাপড় পরা লোকটি হয় সত্যবাদী অথবা গুপ্তচর।
ঙ. তুমি আসলে সি আর বে-এর অর্থ পাবে না। কিন্তু তুমি এটা বুঝতে পারবে যে লোকটা সত্যবাদী। যদি সি মানে হ্যাঁ হয় আর লোকটা সত্যবাদী বলে সে বলবে হ্যাঁ (মানে সি)। আর যদি সি মানে হয় না, তাহলে সে বলবে না (মানে সি)। কিন্তু যদি লোকটা মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে হ্যাঁ বললে বলত না (মানে বে) আর না-এর স্থলে বলত হ্যাঁ (মানে বে।)
চ. তোমার প্রশ্নটি হবে ‘তুমি কি সত্যবাদী?’ এবার যদি লোকটা সত্যবাদী হয়, তাহলে বলবে হ্যাঁ আর যদি মিথ্যাবাদীও হয়, তাহলেও সে বলবে হ্যাঁ। এর মাধ্যমে সি অথবা বে কোনটার মানে হ্যাঁ, তুমি সেটা জানতে পারবে।
ছ. নীল কাপড় পরা লোকটা কি মিথ্যা বলতে পারে? যদি সে মিথ্যা বলে, তাহলে লালও মিথ্যা কথা বলেছে। কিন্তু এখানে তিন ধরনের লোক আছে। তাই নীল কাপড় পরা লোকটি হয় সত্যবাদী অথবা গুপ্তচর। কিন্তু সে সত্য কথাও বলতে পারে না; কারণ, তাতে দুজন সত্যবাদী হয়ে যায়। তার মানে নীল কাপড় পরা লোকটা গুপ্তচর। সেখান থেকে বলা যায় সবুজ কাপড়।
* লেখাটি গণিত আর ধাঁধার রাজ্যে কিছুক্ষণ বই থেকে নেওয়া
আরও পড়ুন