অবিশ্বাস্য! কাঠ দিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহ বানাল জাপান

কৃত্রিম উপগ্রহপ্রতিকি ছবি: গার্ডিয়ান

মহাকাশ সব সময়ই মানুষের কৌতূহল জাগিয়েছে। এবার মহাকাশে যাচ্ছে কাঠ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছো। জাপানের বিজ্ঞানীরা অভাবনীয় এক আবিষ্কার করেছেন। বিশ্বের প্রথম কাঠ দিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহ বানিয়েছে জাপান। এই আবিষ্কার কেবল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, পরিবেশের দিক থেকেও যুগান্তকারী। মহাকাশে কাঠের পচনশীল জীবাণু বা অন্যান্য কারণে কাঠ পচে যায় না বা নষ্ট হয় না। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এটি পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয়। এই অনন্য বৈশিষ্ট্য কাঠকে ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি মূল্যবান বায়োডিগ্রেডেবল বা জৈববিধ্বংসী উপাদান করে তোলে।

এই অভূতপূর্ব উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লিগনোস্যাট’। একটি ১০ সেমি কিউব আকৃতির কাঠের উপগ্রহ। এটি ম্যাগনোলিয়া কাঠের প্যানেল দিয়ে তৈরি, যা ৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার পুরু এবং একটি আংশিক অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের চারপাশে মোড়ানো। এতে ফটোভোলটাইক সেল বা সৌরকোষ রয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে উপগ্রহটিকে। এর পুরো কাঠামোর ওজন মাত্র এক কেজি। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হবে। সেখানে কাঠের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা হবে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে মহাকাশ অভিযান আরও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতে পারে।

ম্যাগনোলিয়া কাঠের তৈরি এই ছোট, কিউব আকৃতির মহাকাশযানটি কেবল এর আকারের জন্যই নয়, নির্মাণপদ্ধতির জন্যও অনন্য। জাপানের ঐতিহ্যবাহী পেরেকমুক্ত জোড়ার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে এই উপগ্রহকে জোড়া দিতে। এই কৌশল শতাব্দীর পর শতাব্দী মন্দির ও উপাসনালয়ের স্থাপত্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই পদ্ধতিতে কাঠের টুকরাগুলোকে বিশেষ আকৃতিতে কাটা হয়। তারপর একটি অপরটির সঙ্গে এমন শক্তভাবে আটকানো হয়, যেন কোনো পেরেকের প্রয়োজন না হয়। এই জোড়াগুলো খুব শক্তিশালী ও টেকসই। এগুলো বেশ শক্তপোক্ত এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকে।

বর্তমানে মহাকাশে প্রায় ৮ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ঘুরছে। ব্যবহারযোগ্য নয়, এমন রকেটের অংশ ও নষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।

চার বছর গবেষণার পর কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাঠের আসবাব নির্মাণের প্রতিষ্ঠান সুমিটোমো ফরেস্ট্রির একটি গবেষকদল বিশ্বের প্রথম কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ লিগনোস্যাট তৈরিতে সফল হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কোজি মুরাতা কাঠের অসাধারণ সহ্যশক্তি দেখে বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘কাঠের এই পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।’ ৪ জুন এটি জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (JAXA) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই উদ্ভাবনটি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশযানের মাধ্যমে আগামী সেপ্টেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হবে।

মহাকাশে উৎক্ষেপিত কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে পৃথিবীর চারপাশে প্রায় ছয় হাজার উপগ্রহ ঘুরছে। চিন্তার বিষয় হলো, এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি উপগ্রহ ইতিমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে এবং মহাকাশে ‘আবর্জনা বা স্পেসজাঙ্ক’ তৈরি করছে। বর্তমানে মহাকাশে প্রায় ৮ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ঘুরছে। ব্যবহারযোগ্য নয়, এমন রকেটের অংশ ও নষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। এই মহাকাশবর্জ্যের বড় অংশ অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি। মহাকাশবর্জ্য কেবল পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি মহাকাশযান ও নভোচারীদের জন্যও বিপজ্জনক হুমকি সৃষ্টি করে।

কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ

এ ছাড়া রকেট ও উপগ্রহগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র চকচকে ধাতুর প্রতিফলনে পৃথিবীর বড় একটি অঞ্চলের রাতের আকাশ তুলনামূলক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, যার ফলে আলোকদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লিগনোস্যাট উপগ্রহটি বর্তমান মহাকাশবর্জ্য বা স্পেসজাঙ্কের তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর। সামগ্রিকভাবে কাঠের মহাকাশযান মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে বেশ আশা দেখাচ্ছে। আরও গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে কাঠের মহাকাশযান মহাকাশকে আরও পরিষ্কার ও টেকসই করে তুলতে সাহায্য করতে পারে।

সূত্র: ইয়াহু টেক, জাপান টুডে