নতুন জিনিস দেখার আগ্রহ যাঁদের, তাঁদের জন্য ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। নতুন খাবারের স্বাদ নেওয়া থেকে শুরু করে জগৎকে অনুভব করা, নতুন কিছু শেখা আর মন ভালো করায় ভ্রমণের জুড়ি নেই। প্রতিবছর লাখো মানুষ নিজের দেশ থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করেন। ভ্রমণের জন্য সব দেশই সুন্দর। তবু কিছু দেশে অন্য দেশের তুলনায় মানুষ বেশি ভ্রমণ করেন, এমন ১০টি দেশের কথা আজ বলব।
বিশ্বের সর্বাধিক ভ্রমণকৃত দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফ্রান্স। ৭২ দশমিক ৪ মিলিয়নের বেশি পর্যটকের আনাগোনা হয় দেশটিতে। প্যারিস, নিস, লিয়ন, মার্সেই, টুলুস ইত্যাদি শহরগুলো দেশটির সর্বাধিক দর্শনীয় শহর। প্যারিস শহরের আইফেল টাওয়ার, ল্যুভর মিউজিয়াম, নরম্যান্ডির দ্বীপ মন্ট সেন্ট মিশেল, ভার্সাই শহরের ভার্সাই প্যালেস—স্থানগুলো পর্যটকদের ফ্রান্সে ভ্রমণের জন্য আকৃষ্ট করে।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে স্পেন। ২০২৩ সালে স্পেনে ৭০ মিলিয়নের বেশি দর্শনার্থীদের সমাগম দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকৃত দেশগুলোর একটি করে তুলেছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর আর প্রাডো মিউজিয়াম শহরটির জনপ্রিয় স্থান। এ ছাড়া বার্সেলোনা শহর, শহরটির গির্জা সাগ্রাদা ফামিলিয়া, প্রকৃতি অনুপ্রাণিত স্থাপত্য পার্ক গুয়েল, সুপরিচিত সড়ক লা রাম্বলা, গ্রানাডার আলহাম্বরা প্যালেস, ভ্যালেন্সিয়া আর সেভিয়াসহ আকর্ষণীয় জায়গাগুলো দেখার জন্য প্রতিবছর স্পেন ভ্রমণে আসেন লাখো ভ্রমণকারী।
২০২৩ সালে ৪১ দশমিক ৮ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে অনেক সুপরিচিত ভ্রমণের স্থান ও নিদর্শন রয়েছে। নিউইয়র্ক, লাস ভেগাস, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো যুক্তরাষ্ট্রের ভীষণ জনপ্রিয় শহর। ম্যাজিক কিংডম, ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ইউনিভার্সাল স্টুডিও হলিউড ইত্যাদি যুক্তরাষ্ট্র আকর্ষণের প্রধান কিছু নিদর্শন।
বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় দেশ তুরস্ক বা তুর্কি। ২০২৩ সালে দেশটির দর্শনার্থী ছিল ৫০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন। তুরস্কের রূপকথার মতো ক্যাপাডোকিয়ার হট এয়ার বেলুন, পামুক্কালে জলপ্রপাত বা হট স্প্রিং পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ দুটি ছাড়াও পর্যটকেরা দেশটির ইস্তাম্বুল শহর, শহরের হায়া সোফিয়া মসজিদ, নীল মসজিদ, ক্যাপাডোকিয়ার ভূগর্ভস্থ শহর, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ইফেসাস, আন্টালিয়া, বোড্রাম আর আঙ্কারার সৌন্দর্যেও আকৃষ্ট হয়ে দেশটি ভ্রমণে ছুটে আসে।
৪৯ দশমিক ৮১ মিলিয়ন পর্যটক নিয়ে ইতালিও বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় দেশের মধ্যে একটি। দেশটির সমৃদ্ধ ইতিহাস, শৈল্পিক সম্পত্তি, বিশ্বমানের খাবার দেশটির গর্ব। রোম, ভেনিস, ফ্লোরেন্স, মিলান, নেপলস শহরগুলো দেশটির সর্বাধিক দর্শনীয় শহর। রোমে অবস্থিত ছাদবিহীন অ্যাম্ফিথিয়েটার কলোসিয়াম, পিসার হেলানো টাওয়ার, সেন্ট পিটার্স বাসিলিকা গির্জা, ভেনিসের খাল, সেন্ট মার্কস বাসিলিকা গির্জা, রোমান ক্যাথলিক গির্জা ফ্লোরেন্স ক্যাথেড্রাল, শিল্প জাদুঘর উফিজি গ্যালারি ইত্যাদি ইতালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান।
দেশ ভ্রমণের তালিকায় মেক্সিকোর অবস্থানও খুবই ওপরে। বছরে ৩৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন পর্যটক রয়েছে দেশটির। মেক্সিকোর বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য, সুন্দর জঙ্গল, আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি পর্যটকদের কাছে দারুণ রোমাঞ্চকর। মেক্সিকো সিটি, ক্যানকুন, প্লেয়া দেল কারমেন, গুয়াদালাজারা, প্যালেনকে পুয়ের্তো ভাল্লার্তার মতো অনেক সুন্দর শহর রয়েছে মেক্সিকোতে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য জায়গার কথা বললে ইউকাতান শহরে অবস্থিত পিরামিড চিচেন ইতজা, কুইন্তানা রুর তুলাম সমুদ্রসৈকত, মেক্সিকান সিটির পিরামিড টিওটিহুয়াকান, রিভেরা মায়ার এক্সকারেট থিম পার্ক ইত্যাদির নাম উঠে আসে।
যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) ভ্রমণকারীদের জন্য স্বর্গের মতো। যুক্তরাজ্য ২০২৩ সালে ৩৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন পর্যটককে স্বাগত জানায়। দেশটি ক্রিসমাস বাজার, প্রাচীন প্রাসাদ, পুরোনো শহর ও রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত। যুক্তরাজ্য ভ্রমণকারীদের প্রথম আকর্ষণ লন্ডন। লন্ডন টাওয়ার, লন্ডন ব্রিজ, বাকিংহাম প্যালেস ইত্যাদি লন্ডনকে ইউকে ভ্রমণের প্রথম গন্তব্য ঠিক করতে আগ্রহ বাড়ায়। লন্ডনের পরেই পর্যটকদের গন্তব্য হয় ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, গ্লাসগো, এডিনবার্গের মতো শহরগুলো।
জার্মানি ২০২৩ সালে ১৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন দর্শনার্থীকে আপ্যায়ন করে। পুরো দেশটিতেই রয়েছে হাজার হাজার জাদুঘর, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পুরোনো সব দুর্গ। উত্তর ও বাল্টিক সাগর, আল্পস ও হারজ পর্বতমালা, রোমের বাইরের বৃহত্তম রোমান স্নান এবং বিভিন্ন ওয়াইন উৎপাদনকারী অঞ্চল দেশটির কিছু জনপ্রিয় আকর্ষণ। এ ছাড়া আরও কিছু স্থান, যেমন বার্লিন শহর, শহরের ব্র্যান্ডেনবার্গ গেট, বাভারিয়ার নিউশওয়ানস্টেইন ক্যাসেল, কোলন শহর, শহরের কোলন ক্যাথেড্রাল গির্জা, ড্রেসডেন শহরের জুইঙ্গার প্যালেস, মিউনিখ, হামবুর্গ, ফ্রাঙ্কফুর্টও বেশ জনপ্রিয়।
থাইল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা দেশগুলোর মধ্যে একটি। গত বছর দেশটিতে ২৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন দর্শক এসেছিলেন। সুন্দর সমুদ্রসৈকত, সুখী মানুষজন, স্বল্প খরচে জীবনযাত্রা থাইল্যান্ডকে অন্যতম দর্শনীয় দেশ করে তোলে। ব্যাংককের প্রাণবন্ত পরিবেশ, কোহ সামুইয়ের শান্ত সৌন্দর্য, ফাং নাগার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ক্রাবির শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য—সবই থাইল্যান্ড ভ্রমণে আকর্ষণ করে।
২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকৃত দেশের তালিকায় ১০ নম্বরে আছে চীন। চীনের একটি অনন্য পর্যটন আবেদন রয়েছে। রাজকীয় প্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল, শিয়ানের টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স, সাংহাইয়ের আধুনিক স্কাইলাইনের মতো আরও অনেক নিদর্শন বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। কোলাহলপূর্ণ শহরগুলোর বাইরে, চীনের অভ্যন্তরে রয়েছে চেংদু, সিচুয়ান প্রদেশ, গুইলিন ও হাইনানের দ্বীপের মতো বিস্ময়।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, দ্য ট্রাভেল