হুয়াওরানি আদিবাসীদের পায়ে বিশেষ আকৃতি
রহস্যময় বন আমাজন। আমাজন বনের ভেতরে-বাইরে অনেক সভ্যতার নিদর্শন আছে। আমাজন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অনেক শহর। বনের গভীরে বেশ কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর খবর পাওয়া যায়, যাদের আচার-সংস্কৃতি ভিন্ন রকম। এমন এক গোষ্ঠী হুয়াওরানি আদিবাসী। যারা ওয়াওরানি বা ওয়াওস নামেও পরিচিত। আমাজন বনের পূর্ব ইকুয়েডরে বাস করে এরা। আনুমানিক চার হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত এই আদিবাসী গোষ্ঠী বাইরের জগৎ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। তাদের অনন্য সংস্কৃতি আর ভাষাগত ঐতিহ্য আছে। পরিচিত অন্য ভাষার সঙ্গে তাদের ভাষার মিল নেই। একদমই স্বতন্ত্র তাদের ভাষা। এমনকি ইকুয়েডরে কথিত ভাষা কেচুয়ার সঙ্গেই হুয়াওরানি ভাষার মিল নেই।
বনের পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে এই আদিবাসী মানুষ জীবনধারণ করেন। জীবনধারণের জন্য নিয়মিত গাছে চড়তে হয় তাঁদের। দীর্ঘকাল গাছে চড়ার অনুশীলনের কারণে তাঁদের পায়ের গঠনে এসেছে সামান্য পরিবর্তন। গাছ বেয়ে ওঠার জন্য অন্যদের পায়ের তুলনায় তাঁদের পায়ে বেশি ‘গ্রিপ’ পাওয়া যায়। এই পা দিয়ে তাঁরা গাছকে সহজে আঁকড়ে ধরতে পারেন।
এই আদিবাসীরা বনের প্রাণী শিকার করেন। শিকারের জন্য বর্শা আর ফুঁ দিয়ে নিক্ষেপ করা অস্ত্রের (ব্লো বন্দুক) ওপর নির্ভর করেন। বানর ও ছোট প্রাণী তাঁদের প্রধান শিকার। নিজেদের সীমিত জনগোষ্ঠীর মানুষকে বিয়ে করায় তাঁদের জিনগত বৈচিত্র্য কম। টিকে থাকতে হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে। প্রতিদিন তাঁদের গাছে চড়তে হয় খাবার ও শিকার নামিয়ে আনার জন্য। ফলে তাঁদের পা হয়ে গেছে খানিকটা চ্যাপ্টা।
আদিবাসীদের মধ্যে কিছু মানুষের পায়ে দেখা গেছে ছয়টি করে আঙুল। কিছু মানুষের প্রতি হাতেও ছয়টি আঙুলের দেখা মিলেছে। যাঁদের হাতে ছয়টি আঙুল থাকে, তাঁরা সাধারণত ছয় নম্বর আঙুল ব্যবহার করতে পারেন না। কর্মক্ষম থাকে না এই আঙুল। কিন্তু হুয়াওরানি গোষ্ঠীর ছয় নম্বর আঙুলটি কর্মক্ষম।
জন্ম থেকেই তাঁদের পায়ে এই আকৃতি থাকে না। প্রথমে পা দুটি সোজা ও স্বাভাবিক থাকে। ধীরে ধীরে পা ও আঙুল বেঁকে যায়। মানুষের অর্জিত পরিবর্তন শুধু তাঁদের মধ্যেই দেখা যায়, এমন না।
মালয়েশিয়ার কিছু আদিবাসী ব্যক্তি মুক্তা সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে ডুব দিয়ে থাকতে পারেন। তাঁরা এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন অনুশীলনের মাধ্যমে। ডুব দিয়ে নিশ্বাস ধরে রাখার জন্য তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই হুয়াওরানি আদিবাসীদের পায়ের আকার বদলে যাওয়া অস্বাভাবিক না। পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বহুবার অনুশীলন করতে করতে এই মানুষদের পায়ের আকৃতি ধীরে ধীরে বিচিত্র আকার ধারণ করেছে। পায়ের আঙুলের আঁকড়ে ধরার সক্ষমতা বেড়েছে। এতে গাছে চড়ার সময় ভারসাম্য রাখাও সহজ হয়।