আগুন কি কঠিন, তরল না গ্যাসীয়

মানুষের সভ্যতা বদলে দিয়েছে আগুন। আগুন ছাড়া আমাদের জীবন এখন আর কল্পনাই করা যায় না। ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া, খাবার রান্না করা, প্রতিরক্ষা বা আলো জ্বালানো—সব কাজে হাজার বছর ধরে আমরা এই প্রাকৃতিক শক্তির ওপর নির্ভর করে আসছি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি, আগুন আসলে কী? এটি কঠিন, তরল না গ্যাসীয় পদার্থ? নাকি শক্তি?

প্রথম দেখাতে আগুনকে কেবল জ্বলন্ত শিখা বলে মনে হতে পারে। তবে আগুনের দুটি অংশ। একটি এর শিখা, আরেকটি সেই শিখা থেকে সৃষ্ট আলো ও তাপ। তাই আগুন পদার্থ না শক্তি, সেটা এককথায় বলা যাবে না। কিন্তু আসলে এটি জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া—যা জ্বালানি, তাপ এবং অক্সিজেনের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। এই বিক্রিয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপ ও আলো নির্গত হয়, যা আমরা আগুনের শিখা হিসেবে দেখি।

তবে আগুনের শিখা কেবল একটি পদার্থ দ্বারা গঠিত নয়। বরং এটি পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার মিশ্রণ। জ্বালানি পোড়ানোর সময় তা গ্যাসীয় পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এই গ্যাসই আগুনের লাল, কমলা ও হলুদ রঙের জন্য দায়ী। শিখার ভেতরে কিছু ক্ষুদ্র কঠিন কণাও থাকতে পারে, যা ধোঁয়া ও ছাই তৈরির উৎস।

তাহলে কি বলা যাবে আগুন গ্যাসীয়? সম্পূর্ণভাবে না। কারণ, আগুনের শিখার তাপমাত্রা এত বেশি হয় যে কিছু গ্যাস আয়নিত হয়ে প্লাজমা তৈরি করে। প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা, যেখানে ইলেকট্রনগুলো পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে আলাদা থাকে।

আগুনের শিখা এগিয়ে আসছে ফসলের খেতের দিকে। মাগোউলা, গ্রিস, ১৮ জুলাই
ছবি: এএফপি

জ্বালানি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জলীয় বাষ্প এবং কার্বন ডাই–অক্সাইডের মতো পদার্থ তৈরি হয়। যখন জ্বালানি সম্পূর্ণভাবে পোড়ে না, তখন এটি ছাই, কার্বন মনোক্সাইড বা সালফার ডাই–অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে। আমরা সরাসরি শিখা দেখতে পাই না, বরং শিখার বাইরের দিকে প্রসারিত অন্যান্য গ্যাসগুলো দেখতে পাই। শিখা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন; কারণ, আমরা কেবল সেই অংশটিকেই দেখতে পাই, যা আলো নির্গত করার জন্য যথেষ্ট গরম। অন্যদিকে শিখা সম্পূর্ণ গোলাকার হয় না; কারণ, গরম গ্যাস ঠান্ডা বাতাসের তুলনায় কম ঘন হয়। সে জন্য ওপরে উঠে যায়।

শিখার রঙের তাপমাত্রা এবং জ্বালানি রাসায়নিক গঠনের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং, আগুনকে কেবল একটি পদার্থ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা ভুল হবে। সংক্ষেপে বলা যায়, আগুন কেবল একটি পদার্থ নয়, বরং জ্বালানি, তাপ, অক্সিজেন ও প্লাজমার জটিল মিশ্রণ। এই মিশ্রণই আমাদের চেনা আগুনের শিখা তৈরি করে, যা আমাদের জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন

আগুনের রহস্য এখনো সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত হয়নি। বিজ্ঞানীরা এখনো এই প্রাকৃতিক শক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আগুন কেবল একটি জ্বলন্ত শিখা নয়, বরং এটি প্রকৃতির এক অসাধারণ শক্তি যা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে এবং সমৃদ্ধ করে তোলে।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, থটকো ডটকম

আরও পড়ুন