টেবিলের ওপরের বাতিটা জ্বালিয়ে এক সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি, বাতির চারপাশে অসংখ্য ছোট ছোট পোকা এসে ভিড় জমিয়েছে। একটু বিরক্ত হয়ে উঠে বাতি বন্ধ করলাম, মুহূর্তেই সব পোকার ছোটাছুটি বন্ধ! আবার বাতি জ্বালাতেই ওরা ফিরে এল। তখনই মনে হলো, এসব খুদে পোকাদের আলোর প্রতি এত আকর্ষণ কেন?
খুঁজে দেখলাম, ছোট্ট পোকারা চলাচলের জন্য আলোর উৎসকে নিশানা হিসেবে রাখে। ধরো এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে চাঁদ বা তারার মতো দূরের আলোর উৎসকে নির্দিষ্ট কোণে ঠিক রেখে পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা করে। চাঁদর আলো থাকে দূরে। আবার চাঁদ এক জায়গায় স্থির থাকার কারণে এই পদ্ধতিতে পোকা সঠিক পথে যেতে পারে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ট্রান্সভার্স অরিয়েন্টেশন’।
কিন্তু শহরের বৈদ্যুতিক বাতিগুলো এই প্রাকৃতিক চলাচলে গোল বাধায়। কারণ, কৃত্রিম আলো চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও কাছাকাছি থাকে। চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছোট্ট এই পোকারা চাঁদ ও বাতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। বিভ্রান্ত হয়ে কৃত্রিম আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়। ফলে এরা বাতির আলোকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই আলোকে কেন্দ্র করে একটি পথে আটকে পড়ে। কারণ ওরা ভাবে, এটিই ওদের পথ দেখাচ্ছে।
এ ছাড়াও কিছু পোকা আলোর প্রতি আকর্ষিত হয়, কারণ আলোক উষ্ণতা এদের জন্য আরামদায়ক। আলোতে তাপ থাকে। পোকাকে ঠান্ডা পরিবেশে আরাম দেয়। বিশেষ করে রাতে যখন পরিবেশ ঠান্ডা থাকে। এ ভাবেও পোকা আলোর চারপাশে জড়ো হয় আর আলোর পাশে থাকতে পছন্দ করে।
আবার আলোতে পোকা শিকারির আক্রমণও কম হয়। তাই আলোর পাশে পোকা নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পোকা আলোর দিকে ছোটে। এটি ওদের টিকে থাকার কৌশলের অংশ।