হুইসেলব্লোয়ার ড্যানিয়েল এলসবার্গ
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে নাক গলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে দেশে দেশে, যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে। এসবের বিপক্ষে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা কথা বলেননি। একটা ঘরে যখন আগুন লাগে, তখন নিরপেক্ষ থাকা বা কিছু না করা মানে ঘরটাকে পুড়ে যেতে দেওয়া। আগুন লাগানোর জন্য কে দায়ী, তা বের করতে পারলে ভালো; না পারলে অন্তত আগুন নেভানোর চেষ্টাটুকু তো করতে হবে!
ঠিক এ জায়গাতেই চলে আসে ড্যানিয়েল এলসবার্গের নাম। সেটা ১৯৭১ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভিয়েতনামে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে, চলছে তীব্র যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ধীরে ধীরে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে লেগে যাবে আরও চার বছর। কঠিন পশ্চিমা ইতিহাসবিদেরা বলতেই পারেন, না, যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হারেনি, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে ১৯৭৫ সালে। তবে গণমাধ্যমগুলো একে যুক্তরাষ্ট্রের হার বলতে কুণ্ঠিত হয়নি কখনোই।
যাক সে কথা। ১৯৭১ সাল। এলসবার্গ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অ্যানালিস্ট বা বিশ্লেষক হিসেবে যুক্ত। এ সময় তিনি বেশ কিছু গোপন নথি ফাঁস করেন গণমাধ্যমের কাছে। গণমাধ্যম মানে, প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। তারপর দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এই নথিগুলো ইতিহাসে ‘পেন্টাগন পেপারস’ নামে খ্যাত।
এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে নাক গলানোর কারণেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে যুদ্ধে গড়িয়েছে। এ নিয়ে ১৯৯৬ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে লেখা হয়েছিল, তৎকালীন সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে শুধু জনগণই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের (সংসদের উচ্চকক্ষ) সঙ্গেও মিথ্যে বলেছে।
এসব নথি ফাঁসের জন্য ১৯৭৩ সালে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ করা হলো এলবার্গের নামে। এজপিওনাজ অ্যাক্ট অব ১৯১৭ অনুসারে এ অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি ষড়যন্ত্র ও চুরির অভিযোগও আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। মামলা সফল হলে তাঁকে সর্বোচ্চ ১১৫ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হতো। মানে, জেলে কাটাতে হতো। কিন্তু তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা প্রচণ্ড লড়াই করেন আদালতে। আদালত শেষ পর্যন্ত তাঁর পক্ষেই রায় দেন। ওই বছরের মে মাসে বেকসুর খালাস পান এলসবার্গ।
নিজের দেশ অন্য দেশের সঙ্গে অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধেও যে কথা বলা উচিত, তার উদাহরণ এলসবার্গ। শুধু তা-ই নয়, তাঁর এ কাজ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী ও মানবিক মনোভাব জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অনেকেই।