একদিন রাতে তোমার শোবার ঘরে জানালা দিয়ে দেখলে, চাঁদটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তাকাতে তাকাতে বড় হয়েই যাচ্ছে। এবার ‘ধুরুম’ শব্দ। চারদিকে হইচই। কী হয়েছে? চাঁদ মামাটা আকাশ থেকে খসে পড়ে গেছে তোমার বাসার পাশের পুকুরে।
এমন হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। তবে চাঁদ নিয়ে এমন মজার কল্পনা করা যেতেই পারে। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। মহাকাশে চাঁদই একমাত্র স্থান, যেখানে মানুষ তার পদচিহ্ন রাখতে পেরেছে। চাঁদের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। ফলে পানির নিচে থাকা জীবজগৎ সহজে মাটির জগতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া চাঁদের এই অভিকর্ষণের ফলেই পৃথিবী নির্দিষ্ট অক্ষে স্থির থাকে। এ কারণে পৃথিবীর বুকে স্থায়ী আবহাওয়া দেখা যায়। এককথায়, চাঁদ ছিল বলেই আমাদের পৃথিবীতে জীবন এতটা সহজ, স্বাভাবিক।
কিন্তু চাঁদ যদি সব ছেড়ে কখনো আমাদের পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে? তবে আমাদের আগেই চাঁদ খণ্ড–বিখণ্ড হয়ে যাবে। পৃথিবীর রোশ লিমিটের কাছাকাছি আসতেই চাঁদ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞান ডুয়ার্ড রোশ ১৮৪৮ সালে প্রথম লিমিটের বিষয়টি জানান। কোনো গ্রহের কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত দূরত্ব পর্যন্ত অন্য কোনো গ্রহ অবস্থান করতে পারে না। এই সীমানার ভেতর–বাইরে থেকে কোনো গ্রহাণু প্রবেশের চেষ্টা করলে যার ভর কম, সেটা ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে চাঁদ যদি পৃথিবীর কাছে আসার চেষ্টা করে, তাহলে পৃথিবীর রোশ লিমিটে এসেই এটি ভেঙে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর রোশ লিমিট ১৮ হাজার ৪১৭ কিলোমিটার হলে, এই সীমানার কাছাকাছি আসতেই চাঁদ ভাঙতে শুরু করবে। চাঁদের এই ভাঙা টুকরোগুলো ৩৭ হাজার কিলোমিটার উঁচুতে টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকবে। হয়তো সেগুলো মিলে পৃথিবীর জন্য আরেকটা নতুন উপগ্রহ তৈরি হবে। কিংবা আমাদের সৌরজগতের শনি গ্রহের মতো চাঁদের ভাঙা টুকরোগুলো মিলে বলয় তৈরি হবে। তবে আমাদের চাঁদের এই ভাঙা টুকরোগুলো বেশি দিন এভাবে ঘুরবে না। একটু একটু করে ভর কমতেই এগুলো পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে। এত এত ভাঙা চাঁদের টুকরো পৃথিবীর বুকে বড় বড় উল্কার মতো নেমে আসবে। যার আক্রমণে গোটা দেশ বা শহর পুড়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ ছাড়া চাঁদ পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতেই ক্রমে আমাদের ওপর এটির জোয়ার-ভাটার প্রভাব বাড়তে থাকবে। চাঁদ পৃথিবীর রোশ লিমিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে এর প্রভাবে পৃথিবীর পানির উচ্চতা পৌঁছাবে সাড়ে ছিয়াত্তর হাজার মিটারের বেশি। সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দশ গুণ বেশি শক্তিশালী হবে।
অন্যদিকে বৈশিক উষ্ণায়ন সমস্যার সমাধান হিসেবেও কাজ করতে পারে এটি। চাঁদ দ্রুতবেগে আমাদের দিকে এগিয়ে আসার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি বেড়ে যাবে। ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য কমে যাবে। এ কারণে আপনা–আপনি তাপমাত্রাও হ্রাস পাবে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে আমাদের সেভাবে চিন্তা না করলেও চলবে। আর কিছুদিন পর চাঁদের টুকরোর উল্কাপাতে মারা গেলে এসব চিন্তা করার আর প্রয়োজনই থাকবে না।
চাঁদ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার এই চিন্তা করার আগে তোমাদের জানিয়ে দিতে চাই যে আমাদের প্রিয় চাঁদ কিন্তু প্রতিবছর আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর চার ইঞ্চি করে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। তাই বাড়ির পাশের পুকুরে চাঁদ না খুঁজে মন খুলে এবার একটু উপভোগ করে নাও এই স্নিগ্ধ চাঁদের আলো।