স্কুল থেকে মাত্র বাসায় ফিরেছে নোয়াহ। ব্যাগটা রাখতে রাখতে ডাক পড়ল বাসার ড্রয়িংরুমে। পুরো পরিবার থমথমে চেহারা নিয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল সে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। নিশ্চয় বিশাল কিছু ঘটেছে, সে জন্যই সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কী, সেটা বুঝে উঠতে উঠতেই বোমাটা ফাটালেন আম্মু। ‘নেটফ্লিক্সের একটি হরর সিরিজে অডিশনের জন্য তোমাকে ডাকা হয়েছে।’ কথাটা ঠিক বুঝে উঠার আগেই সবাই চারদিক থেকে ছুটে এল। নেটফ্লিক্সের কোনো সিরিজে অভিনয় করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!
২০১৬ সালে পাঁচ পিচ্চির জীবনে হয়তো এভাবেই এসেছিল খবরটি। নোয়াহ শ্ন্যাপ (Noah Schnapp), ফিন উল্ফহার্ড (Finn Wolfhard), গ্যাটেন ম্যাটার্যাজো (Gaten Matarazzo), ক্যালেব ম্যাকলগলিন (Caleb McLaughlin) এবং মিলি ববি ব্রাউন। তখন প্রত্যেকের বয়সই ১২–এর আশপাশে।
নেটফ্লিক্সের সায়েন্স ফিকশন হরর সিরিজ স্ট্রেঞ্জার থিংস, যার তিনটি সিজন মুক্তি পেয়েছে এখন পর্যন্ত। চার বন্ধু উইল, মাইক, ডাস্টিন আর লুকাসকে নিয়েই কাহিনির সূত্রপাত। আর চারটা স্কুলবন্ধুদের মতোই ওদের জীবন। সাইকেল নিয়ে স্কুলে যায়-আসে, অবসরে আড্ডা দেয়, গেম খেলে। তোমাদের মতোই। কিন্তু এদের জীবনের এক ব্যাপক পরিবর্তন আসে, যখন বন্ধু উইল হারিয়ে যায়। তা–ও আবার সাধারণ কোথাও নয়, ‘আপসাইড ডাউন’ নামক আরেক ডাইমেনশনে। বলতে পারো আরেক পৃথিবীতে চলে যায় সে। সেখান থেকে হিংস্র এক প্রাণি প্রবেশ করে পৃথিবীতে। এই হচ্ছে ঘটনা। তবে একই সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় অদ্ভুত এক মেয়ের সঙ্গে, নাম ইলেভেন/এল, যে কিনা ইশারাতেই বিভিন্ন জিনিসপত্র সরাতে পারে। সিজন দুই-এ ওদের সঙ্গে যোগ দেয় আরেক বন্ধু, ম্যাক্স। সিরিজে ঘটনার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বুঝতেই পারছ। তবে সিরিজে অভিনয় করে সেলিব্রিটি বনে যাওয়ার পর ওদের বাস্তব জীবনে কী পরিবর্তন হলো, সেটাই বলি।
টেলিভিশনে দ্য 100 ও সুপারন্যাচারাল-এ অভিনয় করেছে ফিন। এ ছাড়া ঘোস্টবাস্টারস ও আইটি: চ্যাপ্টার টু মুভিতে দেখা যাবে তাকে। শুধু এ–ই নয়, অভিনয়ের বাইরের সময়টা ফিন একটি ব্যান্ডের সঙ্গে কাটায়। গিটারিস্ট ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই তাকে দেখা যায়। আবার মিলির তো হলিউড পাড়ায় আধিপত্য প্রথম থেকেই। এমি অ্যাওয়ার্ড ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পায় সে। গডজিলা: কিং অব দ্য মনস্টারস-এ অভিনয় করেও বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে ইতিমধ্যে। এ ছাড়া টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ কনিষ্ঠ অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের তালিকায় জায়গা করে নেয় সে।
এদের মধ্যে সর্বপ্রথম বাছাই করা হয় ডাস্টিন চরিত্রের গেটন ম্যাটার্যাজোকেই। হাজারখানেক অডিশনের টেপের মধ্যে মাত্র একটা ভিডিও দেখেই পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক ভাতৃদ্বয়। গ্যাটেনের অভিজ্ঞতার ঝুলি কিন্ত অন্যদের তুলনায় বেশ ভারী। ব্রডওয়ে প্রোডাকশন যেমন কুইন অব দ্য ডেজার্ট, লা মিজারেবল–এ কাজ তাকে বেশ এগিয়েই রেখেছে। এক সাক্ষাৎকারে সে জানায়, সিরিজের ডাস্টিন আর বাস্তব জীবনের গ্যাটেনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অন্যদিকে ক্যালেবের বয়স ১৭, স্ট্রেঞ্জার থিংস–এর গ্যাংয়ের থেকে একটু বেশি। তবে সে অভিনয় করছে স্কুলপড়ুয়া হিসেবেই। গ্যাটেনের মতো তারও অভিনয়ের দক্ষতা বেশ ভালো। ব্যক্তিগত জীবনে পছন্দের তালিকায় ফুটবল প্রথমেই। একইভাবে নোয়াহ ও সেইডি সিংক, দুজনই একইভাবে কাজ করেছে বেশ কিছু মুভি ও সিরিজে।
বয়স যে কাজের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়, তা ওদের দেখলেই বোঝা যায়। আগ্রহ, ইচ্ছাশক্তিই তোমাকে পৌঁছে দিতে পারে সফলতার চূড়ায়।