১৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তাই ছোটবেলার সব ঈদ কেটেছে দেশের বাইরে। ছোটবেলাটাই তো মজার, তাই ছোটবেলার ঈদের পুরো সময়টা আরও বেশি মজার মনে হতো। ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব, স্কুল, স্কুলের লম্বা ছুটি—সেই দিকগুলো ঈদের সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার ছিল। আমরা সারা বছর অপেক্ষা করতাম ঈদের জন্য। কবে ঈদের ছুটি আসবে। কবে ঘুরতে যাব। লম্বা ছুটি পেলে পুরো পরিবার মিলে ঘুরতে যেতাম। আমার আব্বু যেহেতু আরব আমিরাতে কাজ করতেন, আমার বেড়ে ওঠা, স্কুলিং—সব ওখানেই। ওই সময় ঈদে ঘুরতে যেতাম এক শহর থেকে আরেক শহরে। হয়তো কখনো শারজাহ, আলাইন, আবুধাবি, দুবাই—এ রকম আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়াতাম। অনেক দিন স্কুলে যেতে হতো না বলে ওই ছুটির দিনগুলো বেশি মজার ছিল। ওই বয়সে স্কুলে যেতে একটু কম পছন্দ করতাম।
ঈদের সময় তখন ঈদকার্ডের একটা প্রচলন ছিল। তবে আমার ছোটবেলায় ঈদকার্ডটা সেভাবে দেখা হয়নি। ই-কার্ড পেয়েছি। স্কুলে থাকতে বন্ধুরা ই–মেইলের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে ই-কার্ড পাঠাতাম। যেহেতু ঈদের সময় লম্বা ছুটি থাকত, স্কুলে যাওয়া হতো না, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা–সাক্ষাৎ হতো না। তাই ঈদ গ্রিটিংসটা ই–মেইলের মাধ্যমে ই-কার্ড দিয়ে পাঠাতাম। আবার যে সময় আমি স্থায়ীভাবে দেশে চলে এসেছি, তখন একে অপরকে ঈদকার্ড দেওয়ার চলটাই চলে গেছে। তাই এই ঐতিহ্যটা আমার দেখা হয়নি।
ছোটবেলা হোক আর বড়বেলাই হোক, আমার কাছে ঈদ মানে একটাই—সবাইকে নিয়ে আনন্দ শেয়ার করা, উদ্যাপন করা। ঈদের যে আয়োজনগুলো থাকে, সবাই যেন তা পালন করতে পারে। সবাই অন্তত একটা হলেও নতুন জামা এবং প্রয়োজনীয় ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে পারে—সেদিকটা আমাদের মাথায় থাকত। আমরা নিজেরা, নিজেদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, আমাদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা, মোটকথা সবার ঘরে সেই আনন্দটা যেন বজায় থাকে। আমরা নিজেরা খুশি আছি। কিন্তু আমার মতো অন্যরাও যেন সেই আনন্দটা করতে পারে, সেই দিকটায় খেয়াল করি। সাধ্যমতো করি সহযোগিতাও। এটা করলে ঈদের সময় একটা প্রশান্তি কাজ করে। সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াই ঈদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।