টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ নিয়ে যত অ্যানিমে তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে স্টেইনস গেট। শুধু অ্যানিমে হিসেবে নয়, বরং যেকোনো মিডিয়ায় সময় পরিভ্রমণের কাহিনি হিসেবে স্টেইনস গেট প্রথম পাঁচটির মধ্যে চলে আসার দাবি রাখে।
স্টেইনস গেটের গল্প গড়ে উঠেছে জাপানের আকিহাবারা এলাকায়। সময়টা ২০১০ সালের গ্রীষ্মকাল। গল্পের নায়ক ১৮ বছর বয়সী ‘রেনটারু ওকাবে’। তার দাবি সে একজন ‘ম্যাড সায়েন্টিস্ট’ বা ‘উন্মাদ বিজ্ঞানী’। আকিহাবারার একটা ছোট বাসার দোতলায় সে গড়ে তুলেছে ‘ফিউচার গেজেট ল্যাবরেটরি’। তার ল্যাবের অন্য দুজন সদস্যের একজন হচ্ছে ওকাবের ছোটবেলার বান্ধবী, সদা হাস্যময়ী ‘মায়ুরি সিনা’ আর দক্ষ হ্যাকার ‘ইটারু (দারু) হাসিদা’। এই ল্যাবে বসে বসে তারা নানা ধরনের ভবিষ্যতের যন্ত্র বানায় (যার অধিকাংশকেই খেলনার পর্যায়ে ফেলা যায়)। কিন্তু ঘটনা পাল্টে যায় যখন তারা আবিষ্কার করে যে তাদের যন্ত্র, যাকে তারা মোবাইল মাইক্রোওয়েভ বলে ডাকে, এর মাধ্যমে তারা অতীতে খুদে বার্তা পাঠাতে পারছে। তাদের ল্যাবের নতুন সদস্য ‘কুরিসু মাকিসা’র সাহায্যে তারা এই যন্ত্র নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা করতে থাকে এবং এর ফলাফল হিসেবে বর্তমান বদলে যেতে থাকে। কেবল ওকাবে এই পরিবর্তনগুলো মনে রাখতে পারে, কারণ অন্য সবার স্মৃতি অতীত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায়, যে ক্ষমতাকে ওকাবে নাম দেয় ‘রিডিং স্টাইনার’ পাওয়ার হিসেবে। কিন্তু অতীত পরিবর্তনের ফলাফল যে কত ভয়ানক হতে পারে সেটা ওকাবের ধারণা ছিল না। ঘটতে থাকে ভয়ংকর সব ঘটনা।
মোটা দাগে এই হচ্ছে স্টেইনস গেটের কাহিনি। নিঃসন্দেহে অ্যানিমের সবচেয়ে অসাধারণ কাহিনিগুলোর অন্যতম হচ্ছে এই সিরিজ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কাহিনি প্রথম দিকে অসমম্ভব রকমের ধীরগতির। কিন্তু একটু দেখার পরই বোঝা যায় গল্পটাকে জমজমাট করার জন্য এর দরকার ছিল। দেখতে দেখতে প্রচুর প্রশ্নের জন্ম হবে এবং শেষে দেখা যায় সব প্রশ্নের উত্তর তো পাওয়া গেছেই, যেসব প্রশ্ন তৈরি হয়নি সেগুলোর উত্তরও পাওয়া গেছে। বর্তমান সময়ের গল্প হলেও একটা খাঁটি সায়েন্স ফিকশন গল্পের সব যোগ্যতা পূরণ করেছে এই সিরিজ। সময় পরিভ্রমণ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গল্পে রহস্য, থ্রিলার, শক তো আছেই, আরও আছে অসাধারণ সব টুইস্ট। গল্পে চরিত্র খুব কম কিন্তু প্রতিটি চরিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে এবং কাহিনির সঙ্গে মানিয়ে গেছে। এই অ্যানিমে শেষ করার পর তুমি হঠাৎ করে আবিষ্কার করবে যে এই চরিত্রগুলোকে তুমি খুব মিস করছ। এ থেকেই বোঝা যায় যে চরিত্রগুলো মনে কী পরিমাণ দাগ কাটতে পারে।
কাজেই একটু সময় হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করো। এই অ্যানিমে দেখে যে তোমার সময় নষ্ট হবে না তা হলফ করে বলা যায়।