কারও সমুদ্র ভালো লাগে। কারও ভালো লাগে পাহাড়। চট্টগ্রামবাসী অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভাগ্যবান। পাহাড়-সমুদ্র দুটোই আছে চট্টগ্রামে। সুযোগ পেলেই এখানকার মানুষ ছুটে যেতে পারে পাহাড় কিংবা সমুদ্রে। বন্দরনগরীর অধিবাসী দুই বন্ধু বখতিয়ার হোসাইন আর এহতেশাম আবিদও ব্যতিক্রম নন। সমুদ্রপাড়ে ঘুরতে খুব ভালো লাগে তাদের। আর ভালো লাগে গান। অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে গানবাজনা করছিলেন তাঁরা। বন্ধুদের সঙ্গে মিলে টুকটাক কিছু গান লেখা, সুর করা এভাবেই চলছিল। কিন্তু খুব বেশি দূর এগোয়নি গানগুলো। দিনে দিনে আরও গাঢ় হলো দুজনের বোঝাপড়া। ২০১০ সালের শেষের দিকে তাঁরা ভাবলেন একটা ব্যান্ড করা দরকার। নতুুন কিছু ভাবনা, সুর আর গানের প্রকাশ ঘটবে যে ব্যান্ডে। ব্যস, কয়েক বন্ধু মিলে কাজ শুরু করলেন। নামও ঠিক হলো—‘বে অব বেঙ্গল’। বে অব বেঙ্গল কেন? ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট বখতিয়ার জানান, যখন তাঁরা ব্যান্ডের নাম নিয়ে ভাবছিলেন, তখন আরেক সদস্য তানিম প্রস্তাব করেছিলেন এই নামটি। কারণ, তাঁরা প্রায়ই সমুদ্রপারে আড্ডা দেন। সমুদ্র এমনিতেই পছন্দ। তা ছাড়া বে অব বেঙ্গল নামটিতেও একটি বিশালতা আছে। তাঁদের বিশ্বাস, সংগীতের ব্যাপকতা সমুদ্রের মতোই বিশাল।
শুরুতে প্রজেক্ট ব্যান্ড ছিল বে অব বেঙ্গল। বিভিন্ন শোতে তাদের সঙ্গে ড্রাম বাজাতেন সামি। গিটারিস্ট হিসেবে ছিলেন আরেক বন্ধু তানিম। ধীরে ধীরে নিজেদের গান গাওয়া শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের গানে যে ধরনের ভাবনা বা দর্শন, তাতে কিবোর্ডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন ব্যান্ডের সদস্যরা। সামির মাধ্যমেই পরিচয় হলো কিবোর্ডিস্ট জামিলের সঙ্গে। কিবোর্ডের সুরে মুগ্ধ হলেন বে অব বেঙ্গলের বাকি সদস্যরা। পুরোদমে শুরু হয়ে গেল ব্যান্ডের কার্যক্রম।
শুরুটা অবশ্য অত সহজ ছিল না। নিজেদের প্র্যাকটিস প্যাড না থাকলেও বাসায় বসেই চলত অনুশীলন। এর পাশাপাশি চলত গান লেখা, সুর করা, মিউজিক কম্পোজিশন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গিটার-কিবোর্ড-ড্রাম তো আছেই, এর সঙ্গে বখতিয়ার হোসাইনের বাঁশির মায়াবী সুর ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে তাঁদের গানে। সাধারণত কনটেম্পোরারি ঘরানার গান করে বে অব বেঙ্গল। চারপাশের ঘটনাগুলোই উঠে আসে তাঁদের গানে। ‘ওপারে’, ‘যে শহরে আমি নেই’ গানগুলোই তার প্রমাণ।
এখন পর্যন্ত বে অব বেঙ্গলের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। ‘নীরব দুর্ভিক্ষ’ নামের এই অ্যালবামটি নিজস্ব স্টুডিওতেই তৈরি করেছেন তাঁরা। শিগগিরই ‘ঘুম’ নামের একটি গান প্রকাশ করার কথা ভাবছেন তাঁরা। আর আগামী বছরে আসছে তাঁদের দ্বিতীয় অ্যালবাম। সঙ্গে কনসার্ট তো আছেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কনসার্ট করলেও চট্টগ্রামেই বেশি ব্যস্ত তাঁরা। যে শহরে জন্ম তাঁদের, সেখানে ব্যস্ততা বেশি থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে চট্টগ্রামের এপারে-ওপারে অসংখ্য ভক্ত ভালোবাসায় তাঁদের সিক্ত করছেন প্রতিনিয়ত। ভক্তদের আশা, তরুণদের এই ব্যান্ডটির গান একদিন বে অব বেঙ্গল ছাপিয়ে পৌঁছে যাবে বহুদূর।