রবার্ট আর্থার জুনিয়র, জন্মেছিলেন ফিলিপাইনে। পেশায় ছিলেন লেখক, সাধারণত রেডিও ক্রাইম ড্রামা লিখতেন। ১৯৬৪ সালে জুপিটার জোনস, পিটার ক্রেনশো আর বব এন্ড্রিউস নামের তিনটি চরিত্র সৃষ্টি করেন তিনি। সারা বিশ্বে এরা ‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ নামে পরিচিত। এই থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের আদলেই সেবা প্রকাশনী থেকে তৈরি হয় রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’। বাংলাদেশের হাজারো কিশোর-কিশোরীর ভালো লাগার সেই মধুর তিনটি নাম—কিশোর পাশা, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ড।
সেবা প্রকাশনীর মলাটে কিংবা কিশোর আলোর পাতায় তোমরা নিশ্চয় পড়েছ এই তিন কিশোরের গল্প। পড়ে শিউরে উঠেছ, মুগ্ধ হয়েছ আর হতে চেয়েছ তাদেরই মতো কেউ একজন। বইয়ের পাতায় তাদের গল্প তো অনেকই পড়েছ, কিন্তু রুপালি পর্দায়ও যে তাদের ঝলমলে উপস্থিতি, সে কথা কি জানো?
তিন গোয়েন্দার কঙ্কাল দ্বীপ বইটা রকিব হাসান লিখেছিলেন থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজের ষষ্ঠ বই দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটরস: দ্য সিক্রেট অব স্কেলিটন আইল্যান্ড থেকে।
এই বই থেকেই পরিচালক ফ্লোরেন বক্সমেয়ার ২০০৭ সালে বানান দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটরস: দ্য সিক্রেট অব স্কেলিটন আইল্যান্ড সিনেমাটি। যদিও বইয়ের মূল গল্পের ধার দিয়েও যাননি তিনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প নিয়েই তিনি সিনেমাটির কাহিনি সাজিয়েছেন।
সহকারী গোয়েন্দা পিটার ক্রেনশোর বাবা এল ক্রেনশোকে কাজের জন্য যেতে হচ্ছে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়। পিটারের সঙ্গে দুই গোয়েন্দাকেও দাওয়াত করলেন এই সুযোগে আফ্রিকা বেড়িয়ে আসার জন্য। এ রকম সুযোগ হাতছাড়া করার মতো অতটা দয়াবান নয় থ্রি ইনভেস্টিগেটরস। তাই পিটারের বাবার এই প্রস্তাবে তারা হাসিমুখে ছুটল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানের স্কেলিটন আইল্যান্ড নামের এক দ্বীপে ছুটি কাটানোই তাদের লক্ষ। কিন্তু থ্রি ইনভেস্টিগেটরস যেখানে যায়, রহস্যরাও যেন ছোঁক ছোঁক করতে করতে হাজির হয়ে যায় সেখানে। এখানেও তা-ই ঘটল।
তবে কী ঘটল সেটা জানতে হলে অবশ্যই দেখতে বসে যেতে হবে সিনেমাটি।
স্কেলিটন আইল্যান্ড ঘুরিয়ে আনার দুই বছর পর পরিচালক বক্সমেয়ার ২০০৯ সালে থ্রি ইনভেস্টিগেটরসকে নিয়ে যান টেরর ক্যাসেলের গোলক ধাঁধায়।
ঘটনার সূত্রপাত রকি বিচে, গোয়েন্দাপ্রধান জুপিটার জোনসের জন্মদিন। পিটার আর বব জুপিটারের চাচা-চাচির সঙ্গে মিলে একটা সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টির আয়োজন করে। সেই পার্টিতেই জোকারের ছদ্মবেশে কৌশলে ঢুকে পড়ে এক চোর। থ্রি ইনভেস্টিগেটরস কৌশলে সেই চোরকে আটকে ফেললেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় চোরটা। কিন্তু ফেলে যায় চুরি করতে আসা জিনিসটাই। পুরোনো একটা ভিডিও টেপ সেটা, যেটা কি না জুপিটারের বাবা-মা মারা যাওয়ার আগে রেখে গিয়েছিলেন।
প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া সেই ভিডিও টেপের বরাত দিয়েই থ্রি ইনভেস্টিগেটরস জানতে পারে এক অমীমাংসিত ধাঁধার কথা।
সেই ধাঁধার সূত্র ধরে রকি বিচ থেকে থ্রি ইনভেস্টিগেটরস পাড়ি জমায় উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এক বনের ভেতরের টেরর ক্যাসল নামের পোড়োবাড়ির রহস্যঘেরা দেয়ালের ভেতর। তারপর সে এক লোম খাড়া করে দেওয়া রোমহর্ষক গল্প!
এই সিনেমার কাহিনিও মূল বইয়ের কাহিনি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প নিয়েই ফেঁদেছেন পরিচালক বক্সমেয়ার। তবে এই সিনেমা দেখতে গেলে মূল থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের সেই স্বাদ সম্পূর্ণই পাওয়া যায়। সিনেমার ভেতরে ঘুরেফিরে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরের সেই রকি বিচ, পুরোনো লোহালক্কড়ের জঞ্জালের ভেতরে ঢাকা পোড়া মোবাইল হোমে তিন গোয়েন্দার সেই হেডকোয়ার্টার, সেখানে ঢোকার গোপন পথগুলো ছন্দে ছন্দে ভেসে বেড়ায় দৃশ্যে দৃশ্যে। বইয়ের পাতায় পড়ে যেগুলো কল্পনা করে আসা হয়েছে এত দিন, সেগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমার ভেতরে।
থ্রি ইনভেস্টিগেটরসকে নিয়ে বানানো জার্মানি থেকে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা দুটি ভক্তমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে আগেই। থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের ভক্ত না, এ রকম দর্শকেরাও লুফে নিয়েছিল সিনেমা দুটি। মূল বই থেকে কাহিনি ধার না করে সম্পূর্ণ নতুন গল্প নিয়ে সিনেমা দুটি বানানোর ফলে তাতে অন্য রকম একটা আগ্রহও তৈরি হয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। যারা তিন গোয়েন্দার ভক্ত, তাদের সিনেমা দুটি ভালো লাগাটাই যেমন উচিত হবে, তেমনি যারা তিন গোয়েন্দাকে চেনে না (এমন কেউ কি আর আছে?), কিন্তু গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে সিনেমা পছন্দ করে, তাদেরও যথেষ্ট ভালো লাগবে সিনেমা দুটি।
আগস্ট মাসেই রকিব হাসানের হাতে জন্ম হয়েছিল সবার প্রিয় তিন গোয়েন্দার। বছরের হিসাবে তিন গোয়েন্দার বয়স দাঁড়াচ্ছে বত্রিশে। বত্রিশে পড়া এই চিরকিশোরদের কোনো গল্প পড়ার পাশাপাশি এই সিনেমা দুটোও দেখে নিতে পারো তোমরা।