সাইকেল চালাতে খুব ভালো লাগে পূজার। সময় পেলেই ক্যান্টনমেন্টের মানিকদির রাস্তায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আর প্রতি সপ্তাহে নাচের ক্লাসে যাওয়ার সময় সাইকেলটাই হয় তার বাহন। তখন আর সঙ্গে মা থাকেন না। পূজার আরও ভালো লাগে বই পড়তে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই বেশি পড়া হয়েছে। এর মধ্যে পূজার সবচেয়ে প্রিয় হলো আমি তপু। খুব ইচ্ছা হয় তার তপু হতে। তপুর চরিত্রে অভিনয় করতে। তাই পূজা একটা দীর্ঘশ্বাসের শেষে এসে বলল, ‘কোনো দিন যদি এই বইটা নিয়ে ছবি কিংবা নাটক বানানো হয়, তাহলে আমি অভিনয় করতে চাই। মেয়ে তপু হলে আমি সেটা করতে চাই-ই চাই।’
শুধু তপুই না, পূজার এমন আরও অনেক কিছুই হতে ইচ্ছে করে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছাগুলো চলে যায় নাগালের বাইরেও। এই যেমন সুচিত্রা সেনকে দেখার ইচ্ছা! ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে পড়া এই মেয়ে ইতিমধ্যে সুচিত্রা সেনের অনেকগুলো ছবি দেখে ফেলেছে। একটু যাচাই করার জন্য ছবিগুলোর নাম জানতে চাইলে গড়গড় করে বলতে শুরু করল—সাত পাকে বাঁধা, হারানো সুর, উত্তর ফাল্গুনী...
ব্যস, ব্যস...বোঝা গেল পূজা দেখেছে সুচিত্রা সেনের অনেক ছবি। এবার পূজার ছবিগুলোয় আসা যাক। তাকে সবাই বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে চিনলেও পূজার শুরুটা কিন্তু হয় চলচ্চিত্র দিয়ে। ভালোবাসার রঙ পূজার প্রথম ছবি। এতে নায়িকা মাহির ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিল পূজা। এরপর একে একে ১৫ থেকে ২০টি ছবি করা হয়ে গেছে তাঁর। মুক্তির অপেক্ষায় আরও দুটি—ব্ল্যাকমেল ও ভালোবাসতে মন লাগে। পূজা খুব মনে করে জানাল, সিনেমায় তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে অগ্নি ছবির চরিত্রটি। এ ছবিতেও পূজা মাহির ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিল।
এবার আসা যাক পূজার বিজ্ঞাপনগুলোয়। সিনেমা দিয়ে শুরু করলেও পূজার পরিচিতিটা বিজ্ঞাপন দিয়ে। টেলিটক থ্রিজির বাক ও শব্দপ্রতিবন্ধী মেয়েটার কথা মনে আছে? ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে ইশারায় কথা বলেছিল যে? সেই মেয়েটাই কিন্তু পূজা। এই বিজ্ঞাপনের জন্য পূজাকে শিখতে হয়েছিল মূক ও বধিরদের ইশারা ভাষা। সেই শিক্ষা বেশ ভালোভাবেই পূজা পর্দায় তুলে ধরেছিল। বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর নাকি তাকে সবাই বধির ভাবত। রাস্তায় অচেনা অনেক মানুষই নাকি তাকে দেখে ইশারায় কথা বলতে আসত। কিন্তু যখন পূজা মুখ খুলতেন, তখনই ভিরমি খেয়ে যেত অচেনা লোকগুলো।
পূজা ২০ থেকে ২৫টির মতো বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছে। ব্যস্ততা আছে নাটকেরও। বাফায় শিখছে নাচ, বাসায় সংগীতগুরুর কাছে গানের চর্চা চলে নিয়মিত। কিন্তু এত কিছুর পরও পড়াশোনা তার কাছে সবার আগে। মাঝেমধ্যে একটু ফাঁকি মারতে চাইলেও মা ঠিকই পড়া আদায় করে নেয়। পড়া শেষ করে তবেই শুটিংয়ে যেতে হয়। কখনো যদি শুটিং লম্বা সময় ধরে চলে, তাহলে সেটে বসেই শেষ করতে হয় জমানো পড়া।
বড় হয়ে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করবে সে। মা ঝর্ণা রায়, বাবা দেবপ্রসাদ রায় ও বড় ভাই আকাশের যা যা পছন্দ, সেগুলো কিনে দেবে। আর নিজের জন্য? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলে, দ্বিধাগ্রস্ত পূজা বলে, ‘তা তো ভাবিনি...!’