ছোটবেলায় আমার ঈদ কেটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেটে নবাব সিরাজ উদদৌলা রোডে আমার দাদুর বাসা। নানির বাসাও সেখানেই। আমার শৈশব–কৈশোরজুড়ে এই এলাকার অনেক স্মৃতি। মাঝে হয়তো দু-একটা ঈদ আমরা ঢাকায় চাচার বাসায় গিয়ে করেছিলাম। কিন্তু ছোটবেলায় অধিকাংশ ঈদ কেটেছে আমার জন্মস্থান চট্টগ্রামে।
ছোটবেলায় ঈদের সবচেয়ে মজার দিক ছিল, নতুন পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ শেষে ঘুরতে বের হওয়া আর মজার মজার খাবার খাওয়া। অসাধারণ সব মজার খাবার রান্না করতেন আম্মু। আম্মুর হাতের সেমাই, দইবড়া আর জর্দা আমাদের সব আত্মীয়স্বজনের মধ্যে জনপ্রিয়। চট্টগ্রাম শহরজুড়ে আমার আত্মীয়স্বজন। ঈদের তিন-চার দিন ধরে দাওয়াত চলত। ঢাকা থেকে আসতেন আমার ছোট খালারা। আমার নানির বাসায় সবার একটা মিলনমেলা হতো ঈদের সময়। আমাদের বাসায় এবং আমার সেজ খালার বাসাতেও একটা বড় মিলনমেলা হতো ঈদ উপলক্ষে। এখন চট্টগ্রামে ঈদ করলে আমার মেজ আপু এবং আমার সেজ আপুর বাসায় একটা ঈদ মিলনমেলা হয়। এ ছাড়া বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হওয়া, দাওয়াত তো চলতেই থাকে। বছরজুড়ে জামাকাপড় কেনা হলেও ঈদের সময় পাঞ্জাবি কেনা এবং উপহার পাওয়াটা আমার খুব পছন্দ। আমার বড় আপুরা আমাকে পাঞ্জাবি উপহার দেয় ঈদে। একেক দিন একেকটা পাঞ্জাবি পরে বের হতাম। আম্মুর জন্য সবচেয়ে সুন্দর শাড়িটা উপহার দিই আমি। আমাদের পরিবারে ঈদ উপলক্ষে উপহার দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টা অনেক আগে থেকে প্রচলিত। ঈদ উপলক্ষে ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেওয়া এবং উপহার পাওয়া দুটোই খুব আনন্দময় ছিল। ছোটবেলায় কখন ঈদ আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। আসলে এখনো ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।
আমাদের বাসায় তো সবাই ছবি আঁকে। আমিও ছবি আঁকতাম। আঁকতাম কার্টুন। আর্টপেপার কিনে নিজেই ঈদকার্ড ডিজাইন করতাম। ছবি-কার্টুন এঁকে কার্ড বানিয়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে দিতাম। এটা খুব মনে পড়ে। ছোটবেলায় ঈদ সালামিও খুব আনন্দ দিত। আর ঈদ উপলক্ষে টিভিতে সব চ্যানেলে থাকত নানা আয়োজন। সেগুলো খুব উপভোগ করতাম আমরা।
আমার কাছে মনে হয় ঈদ পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। ঈদের সময় সবার সঙ্গে দেখা হয়। এক মাস রোজার পর সবাই সবার সঙ্গে দেখা করে। আত্মীয়স্বজন সবাই গ্রামে ঈদ করতে আসে। কোনো উৎসবে দেখা না হলেও ঈদের সময় সবাই সবার বাসায় যায়, কাছের–দূরের সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়—এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার।