তোমাদের সবার বন্ধুমহলে নিশ্চয়ই এমন একজন আছে, যার মাথায় সব সময় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে? দুষ্টুমিতে সে সবচেয়ে বেশি পটু? সে রকমই একটি চটপটে ভেড়া হচ্ছে ‘শন’। ফার্মের মালিক যখন কাজে ফার্ম থেকে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যান, তখনই শুরু হয়ে যায় শনের দুরন্তপনা। মজার মজার কাণ্ডকারখানা করে সবাইকে মাতিয়ে রাখাই যেন তার কাজ। ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি ভালোবাসে বন্ধুদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। যেকোনো সমস্যা সে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে নিমেষেই সমাধান করে ফেলতে পারে বলে পুরো ভেড়ার পালের অঘোষিত লিডার হচ্ছে শন।
‘ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রমিট’খ্যাত নিক পার্কের তৈরি শন দ্য শিপ -এর মূল কাহিনি একটি ফার্মের ভেড়াদের নিয়ে। ২০০৭ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকে শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়দেরও মন জয় করে নেয় এই অ্যানিমেশন সিরিজটি। কেবল শন নয়, ফার্মের প্রতিটি চরিত্র তোমাকে আকর্ষণ করবে, নিশ্চিত! ফার্মের ঠিকমতো তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে আছে বিটযার নামের একটি কুকুর। কিন্তু নিজ দায়িত্ব থেকে সরে এসে শন আর তার বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টু বুদ্ধিতে যোগ দিতে প্রায়ই দেখা যায় বিটযারকে। যেমন এক রাতে ফার্মের মালিক তাঁর বাসায় ছিলেন না। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো বাসায় হামলা চালায় দস্যি ভেড়ার পাল। নাচ, গান, পিৎজা পার্টি, হইহুল্লোড় করে কাটায় সারা রাত। আর এ সবই সম্ভব হয় বিটযারের সহযোগিতায়। কিন্তু বিপত্তিটা লাগে আরেক জায়গায়। শনদের উচিত শিক্ষা শেখানোর আশায় মালিকের পোষা বিড়াল অগোচরে সেই পার্টির ছবি তুলে রাখে যেন পরে তা মালিককে দেখাতে পারে। মালিকের হাতে পৌঁছানোর আগেই সেই ছবি উদ্ধারের জন্য শনের যে কত চিন্তা-পরিকল্পনা! শেষমেশ ছবিগুলো তারা ঠিকই উদ্ধার করতে পারে, কিন্তু কীভাবে করে, তা না হয় না-ই বলি! ছোট ছোট এমন অ্যাডভেঞ্চার আর মজার মজার কর্মকাণ্ড শনদের কাছে নতুন কিছু নয়। বাঁধাকপি দিয়ে ফুটবল খেলা, মানুষ সেজে ক্যাফেতে যাওয়া কিংবা ময়লার ঝুড়ি ঘেঁটে একটি ডিস্কো বল বানিয়ে ফেলা—কোনো কিছুই বাদ যায় না তাদের প্ল্যান থেকে। এই দস্যি দলের সবচেয়ে ভোজনরসিক সদস্য হচ্ছে শার্লি, যা তার মোটাতাজা দেহ দেখলেই বোঝা যায়। তার দেহের লোম এতই ঘন যে সেখানে জুতা, বল, কেক এমনকি ছোটখাটো একটি বাইকও লুকিয়ে ফেলা যায়! দলের কনিষ্ঠ সদস্য হচ্ছে টিম্মি। সবার ছোট হলেও কোনো জিনিস নষ্ট করে ফেলায় সে একেবারে ওস্তাদ! একবার মালিকের কেনা নতুন লাল টুকটুকে ট্রাক্টরটি সে অদক্ষ হাতে চালানোর চেষ্টা করে পুরো ট্রাক্টরের কী বেহাল দশাই না বানিয়ে ফেলে! কিন্তু দলের সবচেয়ে ছোট হওয়ায় আদরও পায় সে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আছে দুটি যমজ ভেড়া, যারা একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছু করে না। আছে হ্যাজেল এবং নাটস। এদের সবার মজার ও উদ্ভট কাজকর্ম যেমন তোমাকে হাসাবে, তেমনি তাদের অ্যাডভেঞ্চার তোমার মধ্যে খানিকের জন্য হলেও উত্তেজনার সৃষ্টি করবে।
এই অ্যানিমেশনটিতে কোনো সংলাপ না থাকলেও এক মুহূর্তের জন্যও তোমার একঘেয়ে মনে হবে না। কারণ, চরিত্র নির্মানের পাশাপাশি কালারফুল ব্যাকগ্রাউন্ড এবং মন ভালো করে দেওয়ার মতো আবহ সংগীত পুরো সিরিজটিকে প্রাণ দিয়েছে। এমনকি এটি দেখে যদি তোমার মনে হয়, ‘ইশ্! আমারও যদি শনের মতো কিউট একটা ভেড়া থাকত!’ আমি খুব বেশি অবাক হব না। ছয়-সাত মিনিটের প্রতিটি এপিসোডের কাহিনি খুব সাধারণ হলেও পরিপক্ব আইডিয়া ও হাস্যরসের কারণে সব বয়সের মানুষের কাছে এটি উপভোগ্য।