ক্রিস মার্টিন আর জনি বাকল্যান্ডের প্রথম দেখা হয় ১৯৯৬ সালে। তখন তাঁরা মাত্রই ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে ভর্তি হয়েছেন। দিন যায় আর তাঁরা স্বপ্ন দেখেন দারুণ একটা ব্যান্ড করে মাতিয়ে দেবেন সবাইকে। একটু একটু করে স্বপ্নের প্রথম ধাপে পৌঁছে বানিয়েই ফেললেন তাঁরা একটি ব্যান্ড। নাম দিলেন, ‘পেক্টোরালজ’। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭ সালে যখন ব্যান্ডে নতুন সদস্য গাই বেরিম্যান যুক্ত হন, তখন বেরিম্যান দলের নাম পাল্টে রাখেন ‘স্টারফিশ’। স্টারফিশ তখন স্থানীয় ক্লাব ও ছোটখাটো অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েই সন্তুষ্ট থাকত। বেরিম্যানই আবার তাঁর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বন্ধু ফিল হার্ভিকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে বলেন। তখন থেকেই ফিল একেবারে কাগজে-কলমে হয়ে যান তাঁদের ব্যান্ডের ম্যানেজার। ব্যান্ডের লাইনআপ আরও একটু শক্তিশালী হলো উইল চ্যাম্পিয়নের কারণে। তিনি আগে কখনো ড্রাম শেখেননি। কিন্তু অল্প কিছুদিনের চেষ্টায় ড্রাম বাজানো শিখে ফেলেন। ১৯৯৭ সালে মার্টিনের সঙ্গে দেখা হয় টিম রাইস অক্সলির, যাঁর পিয়ানো বাজানোর অসাধারণ কৌশল দেখে তাঁকে ব্যান্ডের কি-বোর্ডিস্ট হিসেবে কাজ করতে আহ্বান জানান তিনি। এই অক্সলিই ব্যান্ডের নাম দেন ‘কোল্ডপ্লে’। যদিও নিজের ব্যান্ড ‘কিয়্যান’-এর কারণে অক্সলি ব্যান্ডের নামকরণ করেও ব্যান্ডে থাকতে পারেননি।
২০০০ সালে প্রথম অ্যালবাম প্যারাস্যুট-এর ‘ইয়েলো’ গানটি প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে এই ব্রিটিশ রক ব্যান্ডকে চিনে নেয় সবাই। প্যারাস্যুট-এর সাফল্যের পর প্রকাশিত হয় অ্যালবাম আ রাশ অব ব্লাড টু দ্য হেড। অথচ প্রথম অ্যালবামের সাফল্য পাওয়ার সুখটা কিন্তু তখনো ম্লান হয়নি। তবু গানের ভূত মার্টিনের মাথায় এমনভাবে ঢুকেছিল, যেন গান ছাড়া জীবনে আর কিছুই নেই! এরপর প্রকাশিত হয় এক্সঅ্যান্ডওয়াই, ভিভা লা ভিদা, মাইলো জাইলোতো। সর্বশেষ গোস্ট স্টোরিজ বেস্ট সেলার তালিকায় ৩ নম্বরে স্থান পেয়েছে।
‘প্যারাডাইস’, ‘ফিক্স ইউ’, ‘সায়েন্টিস্ট’-এর মতো ভুবনমাতানো সব গানের জন্য কোল্ডপ্লের শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা আকাশছোঁয়া। প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে ব্রিট অ্যাওয়ার্ড, পাঁচবার এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, তিনবার ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, চারবার বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড এবং সাতবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড।
গোস্ট স্টোরিজ-এর মুগ্ধ করা গানগুলোর রেশ শ্রোতাদের শান্ত করতে না করতেই এই ডিসেম্বরে নতুন অ্যালবাম আ হেড ফুল অব ড্রিমস মুক্তি পাওয়ার কথা। এটা শুনে কোল্ডপ্লে-ভক্তরা যতটুকু খুশি হয়েছে, ঠিক ততটুকুই কষ্ট পাবে জেনে, ক্রিস মার্টিন বলছেন এটাই তাদের শেষ অ্যালবাম। তাঁর মতে, সব ভালোর একটা শেষ থাকে। মার্টিন তাঁদের শেষ কাজকে ‘হ্যারি পটার’-এর শেষ সিরিজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেকে অবশ্য ‘শেষ অ্যালবাম’ তকমা জুড়ে দেওয়াটাকে স্রেফ প্রচারণার কৌশলও বলছেন। শ্রোতাদের শেষবারের মতো তাদের সেরাটা উপহার দিতেই এই অ্যালবামের জন্য ট্যুরে বের হবে পৃথিবীতে এক টুকরো ‘প্যারাডাইস’ খুঁজে পাওয়া যুগান্তকারী ব্যান্ড কোল্ডপ্লে।
তথ্যসূত্র: রোলিংস্টোনস, উইকিপিডিয়া