করোনা-পরবর্তী সময়ে স্কুল-কলেজের পড়াশোনার চাপ যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এত পড়াশোনা কি আর ভালো লাগে, বলো? ঈদের ছুটিটাও চট করে শেষ হয়ে গেল। একটু দম নেওয়ার সুযোগটাই যেন পাচ্ছ না। একটু খোঁজাখুঁজি করে কিছু একটা যে দেখবে, সে সময়টুকুই যেন হয়ে উঠছে না। তাই তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম এমন কিছু মুভি-সিরিজের খোঁজ, যা দেখতে পারো এই মে মাসে। চলো দেখে আসি—
ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস
এ লেখা পড়তে পড়তে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়ে যাবে বিশ্ববিখ্যাত মার্ভেল স্টুডিওর এই বছরের অন্যতম বিগ বাজেট ও দর্শক আগ্রহের শীর্ষে থাকা সুপার হিরো মুভি ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস। এ মাসের ৬ তারিখ বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে এ মুভি। তোমরা যারা তুখোড় ‘মার্ভেল’ ফ্যান, তাদের অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে দেখেও ফেলেছ ঈদের ছুটিতে। ২০২২ সালে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিগুলোর মধ্যে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস-এর চাহিদা একদম তুঙ্গে। হবেই-বা না কেন? স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম-এর পর ‘মার্ভেল’ভক্ত তো বটেই, যারা ‘মার্ভেল’ভক্ত না, তারাও অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে ছিল এই মুভির জন্য। কারণ নো ওয়ে হোম-এ দুর্ঘটনাক্রমে মাল্টিভার্স খুলে ফেলেছিলেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল এক বিশৃঙ্খলার। পরবর্তী সময়ে তা বন্ধ করে ফেলতে পারলেও আসলে যে শেষ রক্ষা আর হয়নি, তা কিন্তু ট্রেলারেই টের পাওয়া গেছে। তা ছাড়া শুধু গল্পের কারণেই নয়, এবারের ছবিতে রয়েছে একঝাঁক আইকনিক ক্যারেক্টার। ট্রেলারে আমরা ভিন ভেরিয়েন্টের দুজন ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, স্কারলেট উইচ, প্রফেসর এক্স, আমেরিকা শ্যাভেজ, ওংকে দেখেছি। কিন্তু একে তো মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের মুভি তার ওপর আবার মাল্টিভার্সের গোলমেলে হিসাব। তার মানে চমক হিসেবে আরও কত ক্যারেক্টার যে ‘মার্ভেল’ কমিক থেকে সিনেমার পর্দায় উঠে আসবে, তা সহজেই অনুমেয়। ছবিটির ট্রেলার মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৯৪ মিলিয়ন ভিউই বলে দেয় কতটা আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মানুষ। বাংলাদেশেও ‘মার্ভেল’–এর ফেজ ফোরের পঞ্চম ছবি হিসেবে তাই ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস-এর চাহিদা যে কতটা তুঙ্গে, তা হয়তো অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিশাল লাইন দেখেই বুঝতে পেরেছ। সে লাইনে হয়তো ছিলে তুমিও। তবে সেই বিশাল লাইনে থাকো আর না–ই থাকো, এ মাসে দেখার মতো ছবির ক্ষেত্রে টান টান উত্তেজনাময় ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস অবশ্যই থাকবে তোমাদের ওয়াচলিস্টে।
ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম: দ্য সিক্রেটস অব ডাম্বলডোর
‘হ্যারি পটার’-এর ভক্ত যদি হয়ে থাকো, তাহলে ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় মুভি দ্য সিক্রেটস অব ডাম্বলডোর অবশ্যই দেখতে পারো। আট পর্বের হ্যারি পটার মুভি শেষ হওয়ার পর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও জে কে রাওলিং মিলে ম্যাজিক্যাল ফ্যান্টাসি ঘরানার দর্শকদের জন্য চমক হিসেবে নিয়ে আসেন ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ সিরিজটি। হ্যারি পটার-এর গল্প যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, ঠিক তার প্রায় ৭০ বছর আগে নিউইয়র্কের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস’ সিরিজের কাহিনি। যারা হ্যারি পটার-এর মতো কিছু একটা দেখার খোঁজ করছ অনেক দিন ধরে, তাদের জন্য এই ব্রিটিশ ফ্যান্টাসি মুভি সিরিজ অবশ্যই দেখার মতো। আবার যারা আগে কোনো দিন ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের কোনো কিছু দেখোনি, তারাও কিন্তু এ ছবি দিব্যি উপভোগ করতে পারবে। গত ৮ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া এ মুভির এবারের কাহিনি গড়ে উঠেছে উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। আগের দুই পর্বের মতো এবার প্রধান চরিত্র হিসেবে শুধু নিউট স্ক্যামান্ডারই নয়, বরং তার পাশাপাশি অ্যালবাস ডাম্বলডোরকেও আনা হয়েছে পুরো গল্পেই। তবে যারা আগের দুই কিস্তিতে নিউটের অসংখ্য ম্যাজিক্যাল জীবজন্তুর সংগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছ, তারা এবারের কিস্তিতে পর্দায় তাদের উপস্থিতি একটু কমই দেখতে পাবে। তবে আগের দুই কিস্তির চেয়ে এবার কিন্তু ৭০ বছরের আগের হগওয়ার্টসের দৃশ্যাবলি একটু বেশিই দেখতে পাবে তোমরা। তুমি যদি এই ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের দুই দ্বিতীয় কিস্তি বিশেষ করে ক্রাইমস অব গ্রিন্ডেলওয়ার্ড দেখে থাকো, তবে অবশ্যই জানার কথা যে সেই মুভির শেষ দৃশ্য বিশাল এক টুইস্টের মাধ্যমে সবার মনে এক প্রশ্ন রেখেই শেষ হয়েছিল। এবারের কিস্তিতে সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও ডাম্বলডোর ও গ্রিন্ডেলওয়ার্ডের দ্বৈরথ যে এখনো শেষ হয়নি, তার প্রমাণ রেখেই শেষ হয়েছে। এ ছবির গল্প এগিয়েছে উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডের ভালো ও মন্দের সেই আদিম যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার এ মুভি তোমাকে আটকে রাখবে এর নিখুঁত সিনেমাটোগ্রাফি, চমৎকার স্পেশাল ইফেক্টস আর মনোমুগ্ধকর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে।
টার্নিং রেড
বিখ্যাত দুই অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার আর ডিজনি যখন একসঙ্গে কাজ করে, তখন তার ফলাফল সব সময়ই হয় বেশ চমৎকার। সেই পিক্সার আর ডিজনি মিলেই নিয়ে এসেছে এক ভিন্ন রকমের গল্পের অ্যানিমেশন মুভি টার্নিং রেড। মুভিটি ১৩ বছর বয়সী মেইলিন লির জীবনের গল্প। অতিরক্ষণশীল মায়ের নজরদারিতে নিজের সব ভালো লাগা-শখ-স্বপ্ন, সবকিছুই লুকিয়ে রাখে লি। কিন্তু সেটাই শেষ না, বংশানুক্রমে পাওয়া অদ্ভুত এক কারণে যখনই সে প্রচণ্ড লজ্জিত হয় কিংবা নিজের রাগকে সামলাতে পারে না অথবা অন্য কোনো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখনই সে বিরাট এক লালরঙা পান্ডায় পরিণত হয়। বিষয়টা তাকে আরও বেশি চিন্তায় ফেলে দেয়। নিজের হুটহাট পরিবর্তন নিয়ে আরও বেশি লজ্জিত হয়ে পড়ে সে। এই মুভিতে প্রাধান্য পেয়েছে ১৩ বছর বয়সী কিশোরী ও তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা বাধাবিপত্তি। তা ছাড়া এ বয়সে মা-বাবার শাসনগুলো অনেক সময় যে একটু বেশি বেশিই মনে হয়, তা-ও খুব সুন্দর করে দেখানো হয়েছে।। আবার বাবা-মায়েদের শৈশবও এ ধরনের আচরণের জন্য কতটা ভূমিকা পালন করে, ফুটে উঠেছে সেটাও। কিশোর বয়সের শারীরিক পরিবর্তনের ব্যাপারগুলোও উঠে এসেছে সহজাতভাবেই। যেখানে সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে, এই ব্যাপারগুলো মোটেও ভয় কিংবা লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু না। চমৎকার এ মুভিটি দেখে ফেলতে পারো দ্রুত।
সনিক দ্য হেজহগ ২
ম্যাজিক্যাল ফ্যান্টাসি, সুপারহিরো মুভির কথা নাহয় হলো, কমেডি-অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার টাইপ কিছু দেখতে পারলে ভালোই লাগত, কী বলো? সেটা যদি হয় অ্যানিমেশন ঘরানার, তাহলে তো কথাই নেই। ‘সনিক দ্য হেজহগ’ নামের নীলরঙা হেজহগের কথা মনে আছে? কিংবা পাগলাটে ডক্টর রোবোটনিককে? যারা অবশ্য জাপানি ভিডিও গেম নির্মাতা সেগার তৈরি সনিক দ্য হেজহগ ভিডিও গেম খেলেছ, তাদের কাছে অবশ্য নীলরঙা দ্রুতগতির সনিক খুব প্রিয় একটা চরিত্র। সেই দ্রুতগতির সনিককে নিয়ে ২০২০ সালে এসেছিল সনিক দ্য হেজহগ। সে গল্পে দেখা যায় অন্য পৃথিবী থেকে আমাদের পৃথিবীতে আসে সনিক। গ্রিন হিলসে আশ্রয় নেওয়া সনিক আবার ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে এক বিশাল বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটিয়ে। যার ফলে সে সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। অবশ্য প্রথম কিস্তিতে ভিলেন হওয়া সত্ত্বেও ড. রোবোটনিক চরিত্রে বিখ্যাত কমেডিয়ান জিম ক্যারির অসামান্য অভিনয় ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতোই। যা-ই হোক, সে যাত্রায় সুপারসনিক গতিসম্পন্ন সনিক আর তার বন্ধু শেরিফ ওয়াচভস্কি মিলে পাগলাটে বিজ্ঞানী ড. রোবোটনিককে থামাতে পারলেও এবার এসেছে সনিক দ্য হেজহগ ২। এবারের কিস্তিতে তাদের যে কত কাণ্ডকারখানা দেখা যাবে, তা তুমি আন্দাজ করতে পারবে ট্রেলার দেখেই। সনিকের সঙ্গে এবার দেখা গেছে মাইলস নামের এক কমলারঙা শিয়ালকে, যে আবার সনিকের বিশাল ভক্তও। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত পাগলাটে ভিলেন ড. রোবোটনিক এবার নাকলস দ্য এচিদনার সঙ্গে মিলে আরও কী সব ভয়ংকর আবিষ্কার নিয়ে সনিককে হারানোর পরিকল্পনা করছে, তা জানতেই দেখতে হবে সনিক দ্য হেজহগ ২। ছবিটি জিম ক্যারিভক্তদের জন্য দেখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই হতে যাচ্ছে আমাদের হাসাতে হাসাতে পেটে খিল ধরিয়ে দেওয়া বিশ্ববিখ্যাত কমেডিয়ান জিম ক্যারির শেষ মুভি।