‘হ্যারি পটার তো খেতে পারলে বাঁচি। ব্যাগে হ্যারি পটার, পেনসিল বক্সে হ্যারি পটার, পানির ফ্লাস্কে হ্যারি পটার। এখন খেতে পারলে বাঁচি।’
দুই হাজার তিন কি চার সাল। টেনেটুনে তখন ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের দুটি কি তিনটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। পুরো পৃথিবীই তখন ‘হ্যারি পটার’ জ্বরে আক্রান্ত। তখনই একদিন হলিক্রস কলেজের সেই সময়কার ইংরেজির শিক্ষক সেলিনা মিস কথাগুলো বলেছিলেন। খটমটে ক্লাসে ছাত্রীদের মনোযোগ ধরে রাখতে এর চেয়ে মজার বিষয়বস্তু আর কীই–বা হতে পারত তখন? সত্যিই তো! ছোটবেলায় কতজন আমরা নিজেদের হ্যারি পটারের জায়গায় কল্পনা করতাম, তার কি কোনো হিসাব আছে?
কিছু না করার জন্য যথেষ্ট সময় কখনোই পাওয়া যায় না।
‘হ্যারি পটার’ মুভি সিরিজের কথা এলে প্রথমেই মনে পড়ে অভিনেতা ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফের কথা। হ্যারি পটার চরিত্রটি এত সুন্দরভাবে আর কেউ কি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন? নাকের ওপর গোল গোল চশমা, দুচোখে রাজ্যের কৌতূহল আর সদ্য ঘুম থেকে ওঠা নিষ্পাপ শিশুর মতো মুখশ্রী; হ্যারি পটারের চরিত্রে আর কাউকে কি এতটা মানাত? এ দেশে ড্যানিয়েলের অসংখ্য ভক্তের মধ্যে একজন, শিল্পী মোরসালিন। আজও হাতড়ে ফেরেন ড্যানিয়েলকে নিয়ে তাঁর স্কুলজীবনের স্মৃতি, ‘আমি ছোটবেলায় চিঠি লিখেছিলাম তাঁকে। ইংল্যান্ডের রয়েল মেইলের ছাপ্পড় লাগানো সেই চিঠি তাঁর বাসা থেকে ঘুরে ফেরত এসেছিল। কারণ, তত দিনে তাঁর বাসা পরিবর্তন হয়ে গেছিল। সেই চিঠি খামসহ রেখে দিয়েছি।’
ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফের জন্ম ১৯৮৯ সালের ২৩ জুলাই, যুক্তরাজ্যে। তাঁর অভিনয়জীবনের শুরু ১৯৯৯ সালে। মাত্র ১০ বছর বয়সে; বিবিসি ওয়ানের ডেভিড কপারফিল্ড টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। সেই সিরিজই তাঁকে হ্যারি পটারের চরিত্র পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিল।
তুমি যা নও, তা হওয়ার জন্য খুব বেশি চেষ্টা কোরো না।
২০০০ সালে প্রযোজক ডেভিড হেম্যান র্যাডক্লিফকে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোন চলচ্চিত্রের জন্য অডিশন দিতে বলেন। চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জে কে রাউলিংয়ের উপন্যাস অবলম্বনে। রাউলিং হ্যারি পটারের চরিত্রের জন্য একটি নতুন মুখ চাইছিলেন। চলচ্চিত্রটির পরিচালক ক্রিস কলম্বাস সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন, ‘আমি ওর “ডেভিড কপারফিল্ড” সিরিজের ভিডিও দেখলাম। তারপর বলে উঠলাম, এটাই আমি চাইছিলাম। এই ছেলেই হবে হ্যারি পটার।’ এরপর বেশ কয়েকটি অডিশন দিয়ে চূড়ান্তভাবে হ্যারি পটার চরিত্রটি হাতে পান ড্যানিয়েল।
নিজের সমালোচনা করা ভালো; নিজেকে ঘৃণা করা শুধু ধ্বংসই ডেকে আনে। দুটোর মধ্যে খুব সূক্ষ্ণ পার্থক্য আছে। আমি সেটা খুব দেখেশুনেই চলি।
১১ বছর বয়সে ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ ‘হ্যারি পটার’ ধারাবাহিকের প্রথম ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপর ১০ বছর ধরে সেই ধারাবাহিকে হ্যারি পটারের ভূমিকায় অভিনয় করে যান এবং বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন। এই সিরিজের অষ্টম ও সর্বশেষ ছবি হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোউজ মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে।
২০০৭ সালের দিকে র্যাডক্লিফ নাটকে অভিনয় করা শুরু করেন। সে বছর লন্ডন ও নিউইয়র্কের প্রযোজনায় তিনি ইকুয়াস নাটকে এবং ২০১১ সালে ‘হাউ টু সাকসিড ইন বিজনেস উইদাউট রিয়েলি ট্রাইং’ মিউজিক্যালে অভিনয় করেন। তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরর চলচ্চিত্র দ্য ওম্যান ইন ব্ল্যাক (২০১২), কিল ইয়োর ডার্লিং (২০১৩) (এই ছবিতে তিনি কবি অ্যালেন গিনসবার্গের ভূমিকায় অভিনয় করেন), কল্পবিজ্ঞান ফ্যান্টাসি ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন (২০১৫) এবং কমেডি-ড্রামা সুইস আর্মি ম্যান, থ্রিলার চলচ্চিত্র নাউ ইউ সি মি ২ ও থ্রিলার ইম্পেরিয়াম (সব কটিই ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত)।
আমি গোসল করছিলাম। আমার বাবা দৌড়ে এসে বললেন, ‘বল তো, হ্যারি পটারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ওরা কাকে চাইছে?’ আর আমি কাঁদতে শুরু করলাম। সম্ভবত এটাই ছিল আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত।
র্যাডক্লিফ বেশ কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেমেলজা হসপাইস কেয়ার ফর চিলড্রেন এবং দ্য ট্রেভর প্রজেক্ট। শেষোক্ত সংস্থাটি ২০১১ সালে তাঁকে সংস্থার ‘হিরো’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছিল।
ভক্তরা আমার কাছে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাঁরা যদি কষ্ট করে আমার কাছে লিখতে পারেন, আমি অন্তত নিজ থেকে তাঁদের উত্তরটুকু দিতেই পারি।
শখের বশে বেজ গিটারও বাজান ড্যানিয়েল। এ ছাড়া তিনি ছোটগল্প এবং কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। জ্যাকব গার্শন ছদ্মনামে তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সুপারহিরোদের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ‘স্পাইডারম্যান’। ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন এই তারকা।