নুহাশের ২ষ-তে শিশুশিল্পীর অডিশন দিতে এসে যেভাবে কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো মান্
‘এমন যদি হতো, আমি পাখির মতো’ গেয়ে উঠেছিল মান্। বয়স সাড়ে ৩ বছর। গিয়েছিল মায়ের অফিসের এক অনুষ্ঠানে। প্রথমবার মাইক্রোফেন হাতে নিয়েছিল ও, গান শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন মায়ের অফিসের আঙ্কেল-আন্টিরা। এর বছরখানেক পর, সাড়ে চার বছর বয়সে প্রথম মডেলিংয়ের প্রস্তাব আসে। প্রথমবার র্যাম্পে হাঁটে মান্। ব্যস এরপর থেকেই শুরু—গান, আবৃত্তির পাশাপাশি, মডেলিং, বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় অভিনয়ে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।
কিছুদিন আগেই চরকিতে মুক্তি পাওয়া নুহাশ হুমায়ূনের সিরিজ ২ষ-এর কথা শুনে থাকবে তোমরা। সেই সিরিজের শেষ পর্ব ‘বেসুরা’য় অভিনয় করেছে মান্। এবার চিনতে পারছ তো? তবে কাজটা কিন্তু সহজ ছিল না। প্রথমত, কঠিন ছিল সুযোগ পাওয়া, এরপর বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ; মান্ কিন্তু ভালোভাবেই সব উতরে গেছে। একটু একটু করে ওর গল্পটা শোনা যাক।
ত্রিধা পাল মান্। এটাই ওর পুরো নাম। ছোট্ট মান্-কে বাসায় রেখে কাজে বেরোতে হতো চাকরিজীবী মা–বাবাকে। অফিস শেষে আর সপ্তাহের ছুটির দিনের পুরোটা বরাদ্দ থাকত মেয়ের জন্য। এ সময় বিভিন্ন ছড়া, কবিতা শেখানোর চেষ্টা করা হতো অভিনয়ের মতো করে। মা-বাবাকে বেশ সুন্দর অনুকরণ করত মান্।
এভাবেই ও বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়, সে গল্প তো শুরুতেই বলেছি। ‘বেসুরা’য় অভিনয় ওর জন্য ছিল বড় সুযোগ। শিশুশিল্পী খুঁজছিলেন নির্মাতা নুহাশ হুমায়ুন। চরিত্রটির জন্য ঢাকায় তিন শর বেশি শিশুশিল্পীর অডিশন নেন নির্মাতা। এরপর চট্টগ্রামে যান তিনি। চট্টগ্রামে যেহেতু শুটিং হবে তাই ছোট একটি শিশু চরিত্রের খোঁজে সেখানে অডিশনের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সেই অডিশনে এক শ এর বেশি শিশুশিল্পী অংশ নিয়েছিল। সেখানেই অডিশন দিতে মান্-কে নিয়ে যান ওর বাবা-মা। অডিশন শেষ মান্ নুহাশকে বলেন, ‘আঙ্কেল, আমার কি এখানেই শেষ? আমি তো গান, নাচ, আবৃত্তিও পারি। এগুলো তো করতে বলছে না কেউ।’ এ কথা শুনে নুহাশ একটা গান গাইতে বললেন। এরপর ও ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গাইল মান্। এরপর নুহাশ বললেন বেসুরা গলায় গাইতে। মান্ নাছোড়বান্দা, বেসুরা গলায় কোনোভাবেই গাইবে না। প্রাথমিক পর্ব শেষে আবার মান্-এর অডিশন নিতে চট্টগ্রামে আসে নুহাশের টিম। এভাবেই ছোট চরিত্রে অডিশন দিতে গিয়ে, কেন্দ্রীয় চরিত্রে চূড়ান্ত হয় মান্।
‘বেসুরা’ গল্পে মান্-এর মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমাইয়া শিমু, আর ডাইনি চরিত্রে দেখা গেছে জয়া আহসানকে। জনপ্রিয় এই দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে শুটিংয়ে। ডাইনি চরিত্রটি যেন সে ভয় না পায়, মেকআপ নেওয়ার পুরোটা সময় মান্-কে পাশে রাখতেন জয়া। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতেন। বাড়ির বড়দের কাছে এখনো জয়া আর শিমু আন্টির অনেক গল্প শোনায় মান্।
মান্ এখন ক্লাস টুতে পড়ে। শিক্ষক থেকে সহপাঠীর অভিভাবকেরা ওর সঙ্গে ছবি তোলার আবদার করে। ‘বেসুরা’য় অভিনয়ের প্রশংসা করে সবাই। বন্ধুত্ব করতে চায় সহপাঠীরা। ও যেন স্কুলে সবচেয়ে বড় তারকা। স্কুল থেকে ফিরেই গান ও নাচের ক্লাসে চলে যায় মান্। বাবা-মা চান, একাকিত্বের সময়টাতে মোবাইল ফোন আর টিভিতে আসক্তি যেন না বাড়ে ওর, এ সময়টাতে যেন ও মেতে থাকে তার প্রিয় জিনিসে। বাড়ি ফিরেই মায়ের সঙ্গে স্কুলের গল্প করে মান্। তবে অভিভাবকেরা চান, তারকাখ্যাতির ব্যাপারটা যেন ও এখনই বুঝতে না পারে, ওর মাঝে যেন আত্মঅহমিকা না জন্মায়।
মান্ এর বয়স এখন ৮। এর মধ্যেই ওর ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে অনেক স্বীকৃতি। নাচ, গান, আবৃত্তিতে সে যেমন পেয়েছে জাতীয় পুরস্কার; আলোহা বাংলাদেশে দুবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি কারাতেতে জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছে রৌপ্যপদক, মার্শাল আর্টে মান্-এর রয়েছে ব্লু বেল্ট। গীতাপাঠে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে, আছে এসওএফ গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদকও। আরও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মান্। এ বছর সেগুলো মুক্তি পাবে। তবে সিনেমাগুলো নাম বলা বারণ।