বিটিএস আর কে-পপের জন্য পর্যটক বাড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়
দুই, চার, দশ লাখ নয়, প্রায় এক কোটির বেশি বিদেশি পর্যটক ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করেছেন। আর এই বিশাল ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ছিল ২৮ লাখের বেশি, যাঁদের বয়স ২১ থেকে ৩০–এর মধ্যে। খাবারদাবার, কেনাকাটা বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হতে নয়, কেবল গানের টানে কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, সাত সদস্যের গ্রুপ বিটিএসের গাওয়া কে-পপ মিউজিকের প্রতি এক দুর্নিবার ভালোবাসায় এই তরুণদের একটা বড় অংশ ছুটে গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়, যাঁদের ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশের ভাবনায় ছিল—আগামী তিন বছরের মধ্যে ‘আবার আসিব ফিরে...’।
কে-পপ বা কোরিয়ান পপুলার মিউজিকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫০–এর দশকে। এটি ছিল কোরিয়ার মূল ধারার সংগীত। এমন করে জাপানে আছে জে-পপ, থাইল্যান্ডে আছে টি-পপ। কিন্তু কী আছে ব্ল্যাকপিঙ্ক, সেভেনটিন বা বিটিএসের গাওয়া বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান পপ সংগীতের এই কোরিয়ান সংস্করণ কে-পপে, যা ২০১২ সালে প্রকাশের সময়ে শুধু ইউটিউব থেকেই আয় করেছিল প্রায় ৪০ লাখ মার্কিন ডলার? শুধু তা-ই নয়, বিটিএসের ইংরেজি গান ‘ডিনামাইট’ ১৮ সপ্তাহ ধরে বিলবোর্ড গ্লোবাল চার্টের শীর্ষে ছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে যোগ করেছিল প্রায় ১৪ লাখ ইউএস ডলার। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। কোভিড-১৯–এর সময় মানুষ যখন চাকরি হারাচ্ছিল, তখন এই বিটিএসের হাত ধরে কে-পপের কল্যাণেই সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় আট হাজার কর্মসংস্থান। এর পেছনের কারণটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় দ্য কোরিয়া রিসার্চ সেন্টার অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক জো এলফোভিং হোয়াংয়ের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘কে-পপের তরুণ শিল্পিরা ইউএস হিপ-হপের মতো বৈশ্বিক সংগীত প্রবণতার সঙ্গে ঐতিহ্যগত কোরিয়ান উপাদানগুলোকে একত্র করেছে, যা আলোড়িত করেছে আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের। এ ছাড়া তারা ডিজিটাল যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন সম্প্রদায়ের শক্তিকে কাজে লাগিয়েছে।’
গানের জগতে আমাদেরও আছে রবীন্দ্র, নজরুল, লালন, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লোকসংগীত। আমরাও কি পারব বৈশ্বিক সংগীতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশ্ববাসীকে নিয়ে আসতে এই বাংলায়? আমাদের ঐতিয্যকে ধারণ করে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে তাদের কাছে নিয়ে যেতে পারব আমাদের শাহ আবদুল করিমের গান? স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! নিশ্চয় ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’।