হেভি মেটাল—শব্দটা শুনলেই যে ব্যান্ডগুলোর কথা মাথায় আসে, তার মধ্যে আয়রন মেইডেন অন্যতম। ‘ফিয়ার অব দ্য ডার্ক’, ‘ড্যান্স অব ডেথ’, ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’, ‘বি কুইক অর বি ডেড’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে আয়রন মেইডেন। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ইংলিশ ব্যান্ড পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হেভি মেটাল ভক্তদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। সত্তর দশকের মাঝামাঝি বেজিস্ট স্টিভ হ্যারিস প্রতিষ্ঠা করেন আয়রন মেইডেন। এরপর দীর্ঘ ৪৭ বছরে একে একে সর্বমোট মোট ৪১টি অ্যালবাম বের করেছে এই হেভি মেটাল ব্যান্ড। এত বছরেও শ্রোতাদের প্লেলিস্টে জায়গা করে নেয় আয়রন মেইডেনের গান।
প্রায় অর্ধশত বছর ধরে শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছে সর্বকালের অন্যতম সেরা হেভি মেটাল ব্যান্ড আয়রন মেইডেন। লন্ডন শহরের এই ব্যান্ড শুরুতে গণমাধ্যমে সেভাবে প্রচার পায়নি, কিন্তু শ্রোতারা ঠিকই খুঁজে নিয়েছেন তাদের। অনেকে মনে করেন ৯০ দশক মেটাল ব্যান্ডদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। পপসংগীত তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ঠিক সেই সময়েই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করে আয়রন মেইডেন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত তাদের নবম স্টুডিও অ্যালবাম ‘ফিয়ার অব দ্য ডার্ক’ ব্যান্ডকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে। দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করে এই অ্যালবাম।
গানের পাশাপাশি আয়রন মেইডেনের পোশাক, মঞ্চসজ্জা, স্টাইল আর বিচিত্র কর্মকাণ্ড দারুণভাবে আকর্ষণ করে শ্রোতাদের। ‘এডি’ নামের একটি মাসকটও আছে এই ব্যান্ডের। অধিকাংশ অ্যালবামের কভারে দেখা মেলে এডির। লাইভ কনসার্টে গানের পাশাপাশি নাটকীয় মাত্রা যোগ করে এডির উপস্থিতি।
২০১৬ সালের ওয়ার্ল্ড ট্যুরের সময় একটি বিমান খুঁজছিল আয়রন মেইডেন। খুঁজতে খুঁজতে মনের মতো একটি বিমান পেয়েও যায় তারা। ব্যান্ডের সদস্যসহ প্রয়োজনীয় সব ইন্সট্রুমেন্ট বহনে সক্ষম ছিল সেই বোয়িং ৭৪৭ মডেলের সেই বিমানটি। বিমান জোগাড় করেই ব্যান্ডটি ক্ষান্ত হয়নি ব্যান্ডটি। নিজেদের পোস্টার আর লোগো দিয়ে পুরো বিমানটিকে রাঙিয়ে নেয় তারা। এখানেই শেষ নয়। বিমান চালিয়েছেন ব্যান্ডের মূল ভোকাল ব্রুস ডিকেনসন। অবশ্য তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বোয়িং ৭৪৭ চালক। সে বছর সব কনসার্টে নিজেদের বিমান নিয়ে ভ্রমণ করেছে আয়রন মেইডেন।
কিংবদন্তি এই ব্যান্ড ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে তাঁদের ১৭তম স্টুডিও অ্যালবাম ‘সেঞ্জুতসু’। অ্যালবাম প্রকাশের আনন্দ ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কনসার্ট করে বেড়াচ্ছে আয়রন মেইডেন। কদিন আগে সুইডেনে গিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয় এই ব্যান্ড। সেখানে গিয়েই ভক্তদের চমকে দিয়েছে ৪১টি অ্যালবাম প্রকাশ করা ব্যান্ডটি।
সেদিন আয়রন মেইডেনের কনসার্টটি ছিল সুইডেনের গোথেনবার্গ শহরের উল্লেভি স্টেডিয়ামে। শো শুরুর আগে ভক্তদের জন্য ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয় আয়রন মেইডেন। শুরুতেই তারা গাড়ি বাদ দিয়ে ‘ট্রেন ৬৬৬’ নামের একটি ট্রেনে করে সরাসরি স্টেডিয়ামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর পুরো ট্রেনটি সাজিয়ে ফেলে নিজেদের মতো করে। ট্রেনের বাইরে ঝোলানো হয় আয়রন মেইডেনের বিশাল এক পোস্টার। কিন্তু ভক্তদের জন্য আসল চমক ছিল ট্রেনের ভেতরে। ট্রেনের ভেতরের বিভিন্ন জায়গা সাজানো হয় আয়রন মেইডেনের বিভিন্ন কনসার্ট এবং গান তৈরিতে ব্যবহার করা সামগ্রী দিয়ে, যেগুলোকে এখন অনায়াসেই অ্যান্টিক হিসেবে গণ্য করা যাবে।
কিন্তু এটিই শেষ নয়। গ্রামোফোনের নাম তোমরা শুনেছ। অনেক অনেক বছর আগে মানুষ গান শুনত গ্রামোফোনে। বিশাল কালো গোল চাকতিতে রেকর্ড করা হতো গান। সেই রেকর্ড গ্রামোফোনে বসালেই বাজত গান। ভক্তদের চমকে দিতে সেই প্রাচীন গ্রামোফোন ফিরিয়ে আনে আয়রন মেইডেন। শুধু এই গ্রামোফোনের জন্যই বিশেষ দুটি গান তৈরি করে তারা। তারপর ৩০০ জন ভাগ্যবান ভক্ত বেছে নেয় কিংবদন্তি এই ব্যান্ড। কনসার্টের দিন এই ট্রেনে করে স্টেডিয়ামে যাবে এই ভাগ্যবান দর্শকরা। আর তাদের সঙ্গে ট্রেনে সহযাত্রী হিসেবে থাকবে স্বয়ং আয়রন মেইডেন। প্রিয় ব্যান্ডের সঙ্গে স্টেডিয়ামে ঢোকার এমন সুযোগ লুফে নিতে কে না চায়!
কনসার্টে আয়রন মেইডেনের সঙ্গে ছিল ওয়ার্নার মিউজিকের প্রতিনিধি। পুরো আয়োজন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক পণ্য ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমরা ভক্তদের দারুণ একটি অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে চেয়েছিলাম। শুধু এই আয়োজনের জন্যই অনুষ্ঠানের অনেক আগে পুরো ব্যান্ড চলে আসে সুইডেনে। এদেশে এলেই ব্যান্ডের সবাই খুব উৎফুল্ল থাকে। ওরা সবাই সুইডেনকে ভালোবাসে এবং সুইডিশ ভক্তরা ওদের কাছে খুব কাছের।’
সুইডেনের সঙ্গে আয়রন মেইডেনের সখ্য বেশ পুরোনো। প্রতিবার আয়রন মেইডেনের কোনো নতুন গান বা অ্যালবাম বের হলেই সেটি জায়গা করে নেয় সুইডেনের টপ চার্টে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় কনসার্টের সব টিকিট। স্বাভাবিক কারণেই অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সুইডিশ ভক্তরা ব্যান্ডটির বেশি আপন। প্রিয় ভক্তদের জন্য এমন পাগলাটে উপহার আয়রন মেইডেনের ছাড়া আর কারা দিতে পারে বলো!