হ্যারির জাদুর জগতে তোমার পেট্রোনাস কেমন হতে পারে
চরম বিপদের মুখে নিজের একটি সুখস্মৃতির ওপর মনোনিবেশ করল হ্যারি পটার। তারপর বীভৎস ডিমেন্টর বাহিনীর দিকে নিজের ম্যাজিক ওয়ান্ড তাক করে বলল, এক্সপেকটো পেট্রোনাম! মন্ত্রবলে সেই ওয়ান্ডের ডগা থেকে ভূতের মতো রুপালি একটি পুরুষ হরিণ বেরিয়ে এল। হরিণটি হ্যারির পেট্রোনাস। বিশ্বস্ত রক্ষকের মতো কাজ করে এই হরিণ। তুমিও যদি হ্যারির মতো পেট্রোনাস তৈরি করতে পারো, তাহলে কেমন হয়? সবার পেট্রোনাস কিন্তু হরিণের মতো হবে না। তোমারটা যেকোনো রূপের হতে পারে।
এই পেট্রোনাস কী? আর নিজের পেট্রোনাস কীভাবে চেনা যায়? চলো, জেনে আসি!
জাদুর জগতে ডিমেন্টর-পেট্রোনাস
হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাওলিং তাঁর তৈরি জাদুর জগতে ভালো-খারাপ দুই দিকের প্রতীকই রেখেছেন। আর পটারভক্ত হলে তুমি নিশ্চয়ই ডিমেন্টর ও পেট্রোনাসের সঙ্গে পরিচিত। ডিমেন্টরের উপস্থিতিতে চারপাশ ঠান্ডা হয়ে আসে, মানুষকে জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। শুধু তা–ই নয়, মানুষের শরীর থেকে আত্মা আলাদা করে দিতে পারে এসব বীভৎস প্রাণী। বলা হয়, সে ক্ষেত্রে মানুষের শরীর আত্মাহীন খোলস হয়ে রয়ে যায়।
জে কে রাওলিং ডিমেন্টরদের বিষণ্নতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন। আর ডিমেন্টরদের বিপক্ষে আত্মরক্ষামূলক একটি জাদুমন্ত্রের নাম ‘পেট্রোনাস চার্ম’। পেট্রোনাস সুখস্মৃতির প্রতিচ্ছবি। এই পেট্রোনাস তৈরির মানসিক শক্তি রপ্ত করা অনেক কঠিন। মন্ত্র বললেই শুধু হবে না, সুখস্মৃতি থেকে বের করে আনতে হবে প্রতিচ্ছবি। সে জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড শক্তিশালী মন। সুখস্মৃতিটিও হওয়া চাই তীব্র।
হ্যারি পেট্রোনাস চার্ম চালনা করা শিখতে নিজের শিক্ষক, প্রফেসর লুপিনের সহযোগিতা নিয়েছিল। অনেক প্রচেষ্টার পর সে সফল হয়। তুমিও জাদুর জগতে পেট্রোনাস বানাতে পারবে চেষ্টা করলেই।
জাদুমন্ত্র এনে দেবে ‘গার্ডিয়ান অ্যানিমেল’
জাদুর জগতে পেট্রোনাস তৈরির জন্য প্রথমে নিজের কোনো আনন্দের স্মৃতির ওপর মনসংযোগ করতে হবে। তারপর নিজের ম্যাজিক ওয়ান্ড উঁচিয়ে বলতে হবে, ‘এক্সপেকটো পেট্রোনাম’। প্রথমে হয়তো তোমার পেট্রোনাস কোনো আকৃতি ধারণ করবে না। কিন্তু অনুশীলন চালিয়ে গেলে সময়ের সঙ্গে তোমার পেট্রোনাস একটি প্রাণীর আকৃতি নিতে শুরু করবে। এই প্রাণী কী হবে, সেটা নির্ভর করে তোমার ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাত্রার ওপর। কিন্তু জে কে রাওলিংয়ের জাদুর জগতে যেকোনো আকৃতির পেট্রোনাস তোমাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
১০টি জনপ্রিয় পেট্রোনাস
১. ডলফিন
হ্যারির জগতে ডলফিন সবচেয়ে ‘কমন’ পেট্রোনাস। মিশুক প্রাণী ডলফিনের ভেতর সামাজিক আচরণ আছে। এরা দিন পার করে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। তুমি যদি ডলফিনের মতো বহির্মুখী হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পেট্রোনাস ডলফিনের আকৃতি ধারণ করবে।
২. টনকিনিজ ক্যাট
অনেকের কাছে বিড়াল মানেই অলসতা। কিন্তু টনকিনিজ ক্যাট অলসের বিপরীত। এ প্রজাতির বিড়াল আদুরে হয় আর খেলতে খুব পছন্দ করে। তোমার যদি সবার মধ্যে মধ্যমণি হতে কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে টনকিনিজ ক্যাট।
৩. শিয়াল
হ্যারি পটারের কাছের এক বন্ধু, শিমাস ফিনিগানের পেট্রোনাস একটি শিয়াল। বিপদের সময় শিমাস নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের সাহায্য করেছিল। সবার জানা আছে, শিয়াল প্রাণী হিসেবে খুব চালাক। সব সময় যে চালাকি খারাপ, তা কিন্তু নয়। তুমি কি শিয়াল পণ্ডিতের মতো নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে চমকে দিতে পারো চারপাশের মানুষকে? এর উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে শিয়াল।
৪. সেন্ট বার্নার্ড
সেন্ট বার্নার্ড একধরনের কুকুর। বিশালদেহী হলেও মনের দিক থেকে এরা খুব নরম। একটি সেন্ট বার্নার্ড কুকুর অলস কিন্তু সাহসী হয়। নিজের পরিবারের জন্য, মনিবের জন্য জীবন দিয়ে দিতে রাজি থাকে এই প্রাণী। তুমি যদি এমন নির্ভীক ‘জেন্টল জায়ান্ট’ হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হবে সেন্ট বার্নার্ড।
৫. হেজহগ
হেজহগ একধরনের সজারু। ছোটখাটো আকৃতির হেজহগের শরীরজুড়ে থাকে কাঁটা। তাই এদের বাইরে থেকে দেখলে ভয়ানক লাগতে পারে। অনেকে আবার পোষা প্রাণী হিসেবেও হেজহগ রাখে। তোমাকে বুঝতে যদি অন্যদের কিছুটা সময় লাগে, কিন্তু তুমি একাই নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হও; তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে এই হেজহগ।
৬. ইউনিকর্ন
পেট্রোনাস হিসেবে ইউনিকর্ন পাওয়া বিরল। হ্যারি পটারের জগতে এই কাল্পনিক প্রাণী হলো এক শিংওয়ালা শুভ্র ঘোড়া। এই জাদুকরী ঘোড়া লাজুক প্রকৃতির হয় এবং সাধারণত মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। তোমার যদি অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে জড়তা কাজ করে, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে ইউনিকর্ন।
৭. তুষার পেঁচা
হ্যারির পোষা পাখি হেডউইগ ছিল একটি তুষার পেঁচা। তুষার পেঁচাদের নেকড়েদের বিরুদ্ধেও নিজের বাসা রক্ষা করতে দেখা গেছে। তুমি যদি যেকোনো মূল্যে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর দৃঢ়তা রাখো, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে তুষার পেঁচা। এমন দুঃসাহসী ব্যক্তিত্ব খুব কম দেখা যায়, তাই এই পেট্রোনাস খুব দুর্লভ।
৮. স্ট্যাগ
স্ট্যাগ হলো পুরুষ হরিণ। এই পেট্রোনাসের অধিকারী ছিল হ্যারি পটার এবং তার বাবা জেমস পটার। তোমার যদি নেতৃত্ব দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা থাকে, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে এই পুরুষ হরিণ। এই পেট্রোনাসের অধিকারীরা তাদের চারপাশের সবার খেয়াল রাখে। স্ট্যাগ পেট্রোনাস হিসেবে বিরল।
৯. উড মাউস
উড মাউস একধরনের ইঁদুর। ছোট্ট উড মাউসকে পেট্রোনাস হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, জে কে রাওলিং জানিয়েছেন, কিংবদন্তি এক জাদুকর, ইলিয়াস বিশাল এক ডিমেন্টর বাহিনীকে রুখে দিয়েছিলেন শুধু একটি উড মাউস পেট্রোনাস ব্যবহার করে। এই ছোট্ট ইঁদুর নিজের এলাকা চিহ্নিত করে রাখার জন্য মানুষের ফেলে রাখা জিনিসপত্র ব্যবহার করে। সাহসিকতার পাশাপাশি তোমার যদি উদ্যোগী মনোভাব আর বুদ্ধিমত্তা থাকে, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হতে পারে একটি ছোট্ট উড মাউস।
১০. আলবাট্রস
পেট্রোনাস হিসেবে আলবাট্রস পাখি সবচেয়ে বিরল। এরা নিজেদের ডানা প্রায় ১১ ফুট পর্যন্ত বিস্তার করতে সক্ষম। লম্বা সময় ধরে সমুদ্রের ওপর বিচরণ করতে পারে আলবাট্রস পাখি। এদের খুব একটা ডানা ঝাপটানোর প্রয়োজন পড়ে না। তুমি যদি চাপের মুখে একেবারে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারো, তাহলে তোমার পেট্রোনাস হবে আলবাট্রস পাখি।
জে কে রাওলিংয়ের তৈরি জাদুর জগতে এই জনপ্রিয় ১০টি পেট্রোনাস ছাড়া আরও প্রায় ১৩২টি পেট্রোনাস আছে। পেট্রোনাস শুভ শক্তির প্রতীক। জাদুর জগতের বাইরেও কিন্তু তুমি নিজের পেট্রোনাস খুঁজে নিতে পারো। তোমার বাসার পাশে যে চটপটে বিড়াল থাকে, সে–ও হতে পারে তোমার পেট্রোনাস!