দুর্ধর্ষ গুপ্তচরের দল

ছবি: সংগৃহীত

‘ভাইয়া, ভাইয়া!’

অনুজ রাজুর হন্তদন্ত আগমনে ঠোঁট বেঁকে গেল রাসেলের। ‘কিরে? সকাল সকাল এত উত্তেজিত কেন?’

‘কিআ!’ নতুন কিশোর আলোটা ভাইয়ের সামনে নাচিয়ে বলল রাজু।

‘ওহ! দিয়েছে তাহলে।’ উজ্জ্বল হলো রাসেলের মুখ। আবার জলদিই নিজেকে সামলে নিল সে। তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘এত লাফিয়ে কাজ নেই। দেখ, এ মাসেও নিশ্চয়ই অ্যানিমে-কথন ছাপেনি।’

‘ছেপেছে।’ উৎসাহে বিন্দুমাত্র ঘাটতি পড়ল না ছোট ভাইয়ের।

‘দে তো দেখি!’ ভাইয়ের হাত থেকে ঝট করে পত্রিকাটা টেনে নিল রাসেল। দ্রুত চোখ বুলিয়েই বলল, ‘ধ্যাত! আবার পুরোনো একটা অ্যানিমে নিয়ে লিখেছে। হাজার খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’

রাজু নাছোড়বান্দার মতো বলল, ‘যাবে নিশ্চয়ই। তুমি ভালো করে খুঁজতেই পারো না, তাই পাও না।’

‘বলেছে তোকে!’

‘পাওয়া না গেলে লেখক দেখল কীভাবে?’

‘ব্যাটা বুড়ো নিশ্চয়ই, বহুদিন আগে দেখে ফেলেছে।’

‘কিন্তু, কিন্তু…’ রাজু আমতা-আমতা করেও এর কোনো সদুত্তর খুঁজে পেল না। অগত্যা ভাইয়ের হাত থেকে কিআ কুড়িয়ে নিয়ে সরে পড়তে চাইল।

বাধা দিল রাসেল। ‘আরেকটু পড়ে দেখি, পরে নিস।’

‘তাড়াতাড়ি করো, এরপর আবার বাবা আছে লাইনে।’

‘আচ্ছা, আচ্ছা।’ জলদি কিশোর আলোর পাতায় ডুব দিল রাসেল।

*

ওপরের ঘটনাটা কাল্পনিক, কিন্তু কোনো কোনো পরিবারে হয়তো এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্রেক হয়। আমি প্রায়ই ভাবি, আগামী সংখ্যায় কী নিয়ে লেখা যায়? কোনটা তোমাদের ভালো লাগবে? কোন আঙ্গিক থেকে ভালো লাগতে পারে? যা নিয়ে লিখছি, তা একটু ব্যতিক্রম হচ্ছে কি? মাসজুড়ে একটাই লেখা লিখি, কিন্তু তার জন্য আয়োজন তো কম নয়! একগাদা অ্যানিমে দেখে তারপর একটা গুছিয়ে আনতে হয়। তাতে সময় লাগে, ধৈর্য লাগে। আরও একটা অসুবিধা হয়। একই ধরনের গল্পকথা বহু অ্যানিমেতে থাকে, ফলে কাহিনিতে নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।

অ্যানিমের কিছু বাঁধাধরা ফর্মুলা থাকে, যা নিত্যপ্রয়োগ হয়। কয়েক সংখ্যা আগে তোমাদের ই-সেকাই ধারাটি সম্পর্কে বলেছিলাম, যেখানে গল্পের মূল চরিত্র বা চরিত্ররা নিজের জগৎ থেকে কোনো উপায়ে ভিনজগতে হাজির হয়, তারপর সেখানে নানা লড়াই বা কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। নতুন মৌসুমে এ ধরনের চলতি অ্যানিমেই দেখছি গোটা ছয়েক! আরও কয়েকটা দেখব ভেবেছিলাম, কিন্তু এখনো শুরু করিনি। তাহলেই বোঝো অবস্থা!

গল্পে বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে তাইও-মুৎসুমির পারস্পরিক ভালোবাসা। দুজন দুজনের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। কেউ কারও কোনো ক্ষতি হতে দেখতে পারে না। আরেকজন বাঁচাতে নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপদের মুখে।

তোমরা হয়তো বিশদ ব্যাখ্যা শুনে ভাবছ, এত বাজে বকছি কেন? তার একটা কারণ অবশ্যই রয়েছে। আজ যে অ্যানিমেটির কথা তোমাদের জানাতে এসেছি, সেটাও কিছু সাধারণ সূত্র গুছিয়েই তৈরি। ইতিপূর্বে তোমরা যারা হিটম্যান রিবর্ন কিংবা হিস্টোরিজ স্ট্রাঙ্গেস্ট ডিসাইপল কেনিচি দেখেছ, তারা অনায়াসেই ধারাটা ধরতে পারবে। আবার কেউ কেউ কিঞ্চিৎ মিলিয়ে ফেলতে পারো স্পাই x ফ্যামিলি অ্যানিমের কিছু বিষয়ের সঙ্গেও। তবে অ্যানিমেটি ভালো, তাই সূত্রের খানিক পুনরাবৃত্তি বোধ করি অতটা আপত্তিজনক হবে না।

ছবি: সংগৃহীত

বলছিলাম মিশন: ইয়োজাকুরা ফ্যামিলি অ্যানিমেটির কথা। এই ধারাবাহিকের জাপানিজ নাম ইয়োজাকুরা-সান চি নো দাইসাকসেন। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যানিমেটি মূলত এক গুপ্তচর পরিবারকে ঘিরে। যারা প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে অপেক্ষা করে অ্যানিমে দেখতে পছন্দ করো, তারা শান্তি পাবে। কারণ, যখন অ্যানিমে-কথন লিখছি, তখন ২৭ পর্বের এই অ্যানিমের এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে মোটে ছয়-সাতটি পর্ব। তবে শুধু এই কটি পর্বের ওপর ভিত্তি করেই কাহিনির প্রশংসা করতে আসিনি। মূলত এই সিরিজের জাপানিজ কমিকস, অর্থাৎ মাঙ্গাটা বেশ অনেক দূর আমার পড়া আছে। ফলে আগামী পর্বগুলোতে কী কী ঘটতে যাচ্ছে, তার একটা স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, সিরিজটা চমৎকার।

আরও পড়ুন

ঘটনার শুরু হয় মূলত স্কুলপড়ুয়া কিশোর তাইও আসানানোকে নিয়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবার হারিয়ে তাইও ভেঙে পড়ে মানসিকভাবে। বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তা, এর পর থেকেই ভয়ের উদ্রেক করে তার মনে। তাই সে সামাজিক যোগাযোগে অভ্যস্ত হতে পারে না। স্কুলে কাউকে কাছাকাছি আসতে দেখলেই ঝিমিয়ে পড়ে সে। কারও সঙ্গে খেলতে যায় না, আড্ডা দেয় না, টিফিনেও একসঙ্গে বসে না। তবে এর ব্যতিক্রম শুধু একজনই—মুৎসুমি ইয়োজাকুরা।

মুৎসুমি তাইওর বাল্যবন্ধু। স্কুলের কিছু ঘটনাই মুৎসুমিকে আকৃষ্ট করেছিল তাইও বন্ধুত্বে। সেসব সড়ক দুর্ঘটনার অনেক আগের কথা। স্কুলের ছেলে মহলে ভীষণ জনপ্রিয় মুৎসুমি, অথচ সে একমাত্র তাইও ছাড়া আর কাউকে পাত্তা দেয় না। তাইওর সঙ্গে স্কুলের বিরতিতে টিফিন ভাগ করে খায়। তাইওর ওপর নানা সময় খবরদারিও ফলাতে দেখা যায় তাকে। দুর্ঘটনার পর তাইও যদিও সেই আগের মতো সক্রিয় নেই, তবু মুৎসুমির কথা সে ফেলতে পারে না। অনিচ্ছা হলেও সাধারণত মেনে নেয়।

এমনই একদিন মুৎসুমি তাইওকে টিফিন খাওয়াচ্ছে, এমন সময় ঘটনাস্থলে হাজির হলো এক শিক্ষক। কিছু কথার পর তাইওকে সে হুকুম দিল অফিসঘরে দেখা করার। আদেশ রক্ষা করে তাইও তার ঘরে হাজির হতেই শুরু হয়ে গেল জেরা। জানা গেল, শিক্ষকটি আসলে মুৎসুমির বড় ভাই এবং যখনই কেউ মেয়েটির কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে, তখনই সে হাজির হয়ে তাতে বাধা দেয়। তাইও বাল্যবন্ধু দেখে এত দিন সে কিছুই করেনি, কিন্তু এখন সে ব্যাপারটা আর মেনে নিতে রাজি নয়। ফলে তাইওকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে বোনের জীবন নিরাপদ করতে সে একেবারে প্রস্তুত।

ছবি: সংগৃহীত

ছুরিকাঘাতে তাইওর ভবলীলা সাঙ্গ করার আগেই যথাস্থানে হাজির হয় মুৎসুমির বড় বোন ফুতাবা। তাইওকে উদ্ধার করে সে নিয়ে আসে ইয়োজাকুরা পরিবারের বাড়িতে। চোখ খুলে ভড়কে যায় তাইও, দেখে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে মুৎসুমির আরও একগাদা ভাইবোন। তারাই জানায়, ওই শিক্ষক বড় ভাইটি মূলত একজন গুপ্তচর এবং পরিবারের প্রথম সন্তান। এমনকি ইয়োজাকুরা পরিবারটিই পেশাদার গুপ্তচরদের। মুৎসুমি ছাড়া এখানে সবাই সুদক্ষ স্পাই। আর এর মধ্যে সবচেয়ে তুখোড় পরিবারের বড় সন্তান কোওইচিরো। মুৎসুমিকে রক্ষার দায়িত্ব সে এমনভাবেই কাঁধে তুলে নিয়েছে যে কাউকে বোনের আশপাশে সহ্য করতে পারে না। তার হাত থেকে তাইওকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তবু ফুতাবা প্রতিশ্রুতি দেয়, সবাই মিলে কোওইচিরর হাত থেকে ওকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। অবশ্য, বাঁচার আরও একটি সহজ উপায় আছে, তা হচ্ছে যদি তাইও মুৎসুমিকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে বিশেষ পারিবারিক আংটি পরে, তবে ইয়োজাকুরা পরিবারের নিয়ম অনুসারে কোওইচিরো তাকে মারার পরিবর্তে রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে।

আরও পড়ুন

শুরুতে পরিবার হারানোর ভয় ও সংকোচে তাইও এ প্রস্তাবে রাজি না হলেও, একপর্যায়ে মেনে নেয় নিয়তি। মুৎসুমির দেওয়া আংটি পরে সে হয়ে ওঠে পরিবারের অংশ। শুরু হয় তাইওর মুৎসুমিকে রক্ষার লড়াই। যে লড়াই শুধু তার একার নয়, বরং পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের।

এতক্ষণ তোমাদের যা বললাম, তা কাহিনির প্রথম এক-দুই পর্বে মোটামুটি বলা হয়েছে। সুতরাং শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, খুব বেশি জানাইনি। লেখক হিৎসুজি গনদাইরার লেখা এ গল্পে চরিত্র প্রচুর, ঘটনার ঘনঘটাও বেশ। যদিও শুরুর ১০-১৫ পর্বে হয়তো খুব বেশি কিছু তোমাদের চোখে ধরা দেবে না। এই পর্বগুলো মূলত চরিত্র নির্মাণে কাজে লেগেছে। বর্ণময় ইয়োজাকুরা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য বিশেষ বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। কোওইচিরো একজাতীয় মজবুত তার দিয়ে লড়াই করতে অভ্যস্ত, কেনগো ছদ্মবেশ ধরতে পটু, শিয়ন দক্ষ হ্যাকার। অন্যদিকে ফুতাবা প্রবল শক্তিধর, নানাও বিবিধ ওষুধ, গ্যাস ইত্যাদি তৈরিতে সিদ্ধহস্ত, আর শিনজো আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় অব্যর্থ। এ ছাড়া সিরিজের নানা সময়ে নানা ক্ষমতাধর সহায়ক চরিত্র এসে যোগ দেয় ইয়োজাকুরা পরিবারের পক্ষে বা বিপক্ষে। তবে সবাই ক্ষমতাধর হলেও কোনো প্রকার বাড়তি ক্ষমতাহীন মুৎসুমিই পরিবারটির প্রধান। কেন? তা পুরো সিরিজ ধরে ক্রমে প্রকাশ্য।

তোমরা যারা নারুতো, ইয়ু ইয়ু হাকুশো, হান্টার x হান্টার—এসব ধারাবাহিকের চরিত্রগুলোর একটু একটু করে প্রশিক্ষিত হয়ে ক্ষমতা অর্জনের যাত্রাটি দেখতে পছন্দ করেছ, তাইও আসানো চরিত্রটি তাদের বিশেষ ভালো লাগবে। শুরুতে লড়াইয়ের বিন্দুবিসর্গ না জানা তাইও কেবল মুৎসুমিকে রক্ষার তাগিদে একটু একটু করে অর্জন করে চলে অতিমানবীয় দক্ষতা। যার শুরুটা হয় ইয়োজাকুরা পরিবারের বাড়িতে থাকার মাধ্যমে। সে কি আর যে সে বাড়ি? উঁহু! সেখানে পদে পদে বিপদ। বিভিন্ন ফাঁদ পাতা রয়েছে প্রতিটি ইঞ্চিতে; তাদের খাবারে মেশানো থাকে বিষ, এমনকি টয়লেটে যেতে হলেও কারসাজি করে খুলতে হয় সুরক্ষিত দরজা। তাইও শুরুতে খাবি খেলেও ধীরে ধীরে সামলে নিতে থাকে। এভাবেই সে হয়ে ওঠে পরিবারের অংশ।

ছবি: সংগৃহীত

গল্পে বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে তাইও-মুৎসুমির পারস্পরিক ভালোবাসা। দুজন দুজনের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। কেউ কারও কোনো ক্ষতি হতে দেখতে পারে না। আরেকজন বাঁচাতে নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপদের মুখে। তবে শুধু মুৎসুমিকেই নয়, বরং পরিবারের বাকিদের সহযোগিতা করতেও নানা সময় তাইওকে যোগ দিতে হয় বিপজ্জনক মিশনে। গল্পের কাহিনি যত সামনে এগোয়, তত বাড়ে বিপদের ঝুঁকি। একটু একটু করে ডানা মেলে মুৎসুমি আর তাইওর অতীতের গল্পকথা। সেখানে লুকানো আছে ভয়, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা আর লড়াইয়ের অনবদ্য সব অধ্যায়।

এত লড়াইয়ের ভিড়েও হাসিটুকু দিব্যি আছে। তোমাদের কথা জানি না, তবে আমার জন্য ওইটুকু বেশ জরুরি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবল নাকমুখ কুঁচকে অ্যানিমে দেখতে আমার বড্ড ক্লান্ত লাগে। মাঝেমধ্যে তাই হেসে হালকা হতে পারলে শান্তি বোধ করি। চরিত্রগুলো সবাই হয় নিজেদের বক্তব্যে, স্বভাবে, কিংবা কাজে আনন্দ দিয়ে গেছে নিয়মিত। আবার কখনো কখনো ঘটনাক্রম হয়ে উঠেছে মজার। পারিবারিক কুকুর গোলিয়াথও এমন বেশ কিছু দৃশ্যের সাক্ষী।

আরও পড়ুন

মিশন: ইয়োজাকুরা ফ্যামিলি ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়ে এখনো ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়ে চলেছে সাপ্তাহিক শওনেন জাম্প ম্যাগাজিনে। বকু নো হিরো একাডেমিয়া, ওয়ান পিস, সাকামোতো ডেজ–এর মতো জনপ্রিয় মাঙ্গার ভিড়ে একটু আড়ালে থেকে গেলেও এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পাঠক গল্পটি পছন্দ করেছেন। তা না হলে শওনেন জাম্প এত দিন ধরে ছাপায় রাখত না। প্রতিযোগিতার ভিড়ে অনেক মাঙ্গাই ম্যাগাজিন থেকে ২০-৩০ অধ্যায়ের পর হারিয়ে যায়।

অ্যানিমেটি পর্দায় আনার জন্য কাজ করেছে স্টুডিও সিলভার লিংক। ইতিপূর্বে এদের তৈরি বোফুরি অ্যানিমেটি আমার ভালো লেগেছিল, তা নিয়ে তোমাদের আগের এক সংখ্যায় বিস্তারিত জানিয়েছি। অ্যানিমেশন দেখে আমার খুব বড় বাজেটের নির্মাণ বলে মনে হয়নি। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো আরও ভালো করা যেতে পারত। যদিও বড় বড় লড়াই এখনো নির্মাণ করা হয়নি, সেগুলো সামনে আসছে। তাই আমি এখনই আশা ছাড়তে প্রস্তুত নই। এ ছাড়া সুর ও শব্দের কাজ মোটামুটি হয়েছে। শুরু ও শেষের গান দুটিও গড়পড়তা। তবে যারা পপ-মিউজিক পছন্দ করো, তাদের ভালো লাগতেও পারে। মিশন: ইয়োজাকুরা ফ্যামিলি নিয়মিত সম্প্রচারিত হচ্ছে ডিজনি প্লাস ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।

সাহিত্যের জগতে একটা কথা খুব প্রচলিত, পৃথিবীতে একেবারে আনকোরা নতুন গল্প লেখা আর সম্ভব নয়, সব ইতিমধ্যেই লেখা হয়ে গেছে। এ কথার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক রয়েছে। তবে যদি একটু সময় নিয়ে ভাবো, তাহলে বুঝবে এ কথা একেবারে অসত্য নয়। যারা এর বিপক্ষে তর্ক করে, তারা হয়তো সে ধরনের গল্প আগে পড়েনি, যা সে নতুন বলে ভাবছে। আমাদের আয়ুষ্কাল অত্যন্ত সীমিত, আমরা কতটুকুই পড়তে বা জানতে পারি? ঠিক এ কারণেই সূত্র ধরে তৈরি অ্যানিমে দেখতেও একেবারে মন্দ লাগে না। এই যেমন ধরো, ‘ব্ল্যাক ক্লোভার’ গল্পের লেখক একেবারে বলে বলে শওনেন অ্যানিমের অনেক প্রমাণিত আঙ্গিক কপি-পেস্ট করে পুরো সিরিজটি তৈরি করার পরও তা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তোমরা যদি আরও খতিয়ে দেখো, তাহলে প্রতিটি গল্পেই অন্য কোনো না কোনো গল্পের অনুপ্রেরণা বা ছায়া আংশিক হলেও খুঁজে পাবে। তাতে দোষের কিছু নেই। মূল বিষয়টা হচ্ছে, যে গল্পটা বলছে সে নিজেকে আর নিজের অভিজ্ঞতাকে কতটা মিশিয়ে দিতে পারছে গল্পের সঙ্গে। সে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারছে গল্পের গতি-প্রকৃতি। আর তার লেখা দিয়ে কতটুকু সংযোগ স্থাপন করতে পারছে পাঠকের সঙ্গে, দর্শকের সঙ্গে। সেই অর্থে মিশন: ইয়োজাকুরা ফ্যামিলির কাহিনি আমাকে অনেকটাই আকর্ষণ করতে পেরেছে। আশা করি তোমাদেরও এই গল্প হতাশ করবে না। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে দেখার সময়, শুরুর দিকের কিছু পর্ব কেবল চরিত্রগুলোর জন্য দেখতে হবে। কাহিনির গতিপথ রোমাঞ্চকর হতে একটু দেরি হবে। তবে একবার সেই গন্ধ তোমাদের নাকে পৌঁছালে আর থামতে পারবে না। তখন সূত্র পরিচিত না অপরিচিত, তাতে আর বিশেষ কিছুই যাবে আসবে না। কেবল অ্যানিমে দেখার আনন্দ, গল্প জানার আগ্রহ, এগুলোই বিশেষ হয়ে থাকবে। তাই আমার পক্ষ থেকে তোমাদের আমন্ত্রণ, তোমরাও অংশ হয়ে যাও এই পরিবারের। কি, হবে তো?

আরও পড়ুন