আচ্ছা, তোমরা কি কখনো জম্বি হয়েছ? এমন কি মনে হয়েছ, বেঁচে আছ, অথচ বেঁচে নেই? তা অবশ্য মনে না-ই হতে পারে। পড়ালেখা করতে করতে শৈশবে আমার নিজেকে জম্বি মনে হলেও তোমাদেরও তা মনে হবে, এমনটা জরুরি নয়। তা ছাড়া তোমাদের অনেকেই এখনো দেশের চাকরির বাজারের উন্নত সংস্কৃতিতে মাথা গলাওনি। ফলে জীবিতকালেই মৃত হতে কেমন বোধ হয়, তার স্বাদও হয়তো পাওনি! তবে আমাদের আজকের অ্যানিমের নায়ক সেই স্বাদ হাড়ে হাড়ে পেয়েছিল নিজের চাকরিজীবনে।
আজ বলছি জম ১০০ বাকেট লিস্ট অব দ্য ডেড অ্যানিমেটির কথা। এর মূল জাপানিজ নামটা বিরাট, তাই সেটা বলে দাঁত ভাঙার ঝঞ্ঝাটে আর গেলাম না। ইদানীং মাঙ্গা বা অ্যানিমের বিরাট বিরাট নাম রাখার একটা চল শুরু হয়েছে। এটা তো তা-ও সেই তুলনায় কিঞ্চিৎ ছোটর কাতারে রয়েছে! এই যেমন কিছুদিন আগেই তোমাদের বলেছিলাম বোফুরি অ্যানিমেটির কথা, ওটার মূল নামটাও বিরাট।
ফেরা যাক গল্পের প্রসঙ্গে। ওপরের ঘটনা তোমাদের যেটুকু বলেছি, তা একেবারে শুরুর কথা। গল্প ডালপালা ছড়িয়ে আরও বহুদূর গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য! তোমরা যে সময়ে বেড়ে উঠছ, তার প্রায় দুই দশক আগেই জম্বি গল্পধারাটি হয়ে উঠেছে চর্বিতচর্বণ; অর্থাৎ অতিশয় ব্যবহৃত একটি গল্পধারা। এ ধারায় কিছু নতুনত্ব বোধ করি এনেছিল রবার্ট কার্কম্যান তাঁর দ্য ওয়াকিং ডেড গল্পের মাধ্যমে।
জম ১০০-এর নামকরণের সার্থকতা বোঝাতে হলে আরও কিছুটা বকবক করতেই হবে এবং তা একেবারে শুরু থেকেই। গল্পের প্রথম পর্বেই দেখা যায়, প্রধান চরিত্র আকিরা তেন্দো এক করপোরেট অফিসে সাদামাটা চাকরিতে যোগ দিয়েছে। অফিসের কর্মীর সংখ্যা একেবারে কমও নয়, আবার বেশিও নয়। সবাই কাজ করছে মন দিয়ে। এর মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে ওর খানিক ভালোও লেগে গেল। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে বেশ খুশি হয় আকিরা। প্রাণপণ কাজ করার ব্যাপারে মনস্থির করে সে। কিন্তু সেই মনোভাব টিকল না বেশিক্ষণ। যতই সময় গেল, আকিরা বুঝতে পারল, এখানে কাজের কেবল শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই।
চোখের সামনে চলে যেতে লাগল ধূসর দিনগুলো। নিহত নক্ষত্রের মতো খসে পড়তে লাগল একেকজন সহকর্মী। কাজের চাপে হতাশ হয়ে চাকরি ছেড়ে দিল। ওদিকে দলপতির অন্যায্য হুংকারে জীবন জেরবার, কিছু হলেই ধমক। ভদ্রলোকের ভয়ে দলের বাকিরা সর্বদা তটস্থ থাকে। অফিসের ম্যানেজার এসবে উদাসীন; বন্ধ দরজার পেছনে সে ব্যস্ত থাকছে আকিরার পছন্দের সেই মেয়ের সঙ্গে গোপন ভালোবাসার খেলায়। কোনো কোনো দিন রাতে বাড়িও ফিরতে পারে না আকিরা। কাজের তোড়ে ভোর হয়ে যায় রাত, রাত হয়ে যায় দিন। বাড়ি ফিরলেও থাকে না ঘুমানোর পর্যাপ্ত সুযোগ; আধঘুম থেকে উঠেই আবার ব্যাগ কাঁধে ছুটতে হয় অফিসে।
এভাবেই কেটে গেল প্রায় বছর তিনেক। জীবন থেকে হারিয়ে গেছে বন্ধুত্ব আর সময় দুটিই। এক কাজ ছাড়া আর কিছুই যেন নেই আকিরার ভুবনে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হয় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার, কিন্তু ছাড়া হয়ে ওঠে না। কোনো এক অদৃশ্য তাগিদ তাকে চলতে বাধ্য করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। জীবিত এই দশাও অনেকটা মৃত্যুর মতোই।
এরপর যা হলো, ইতিপূর্বে আরও অগণিত জম্বি চলচ্চিত্র, ভিডিও গেমস, কিংবা ধারাবাহিকে তোমরা সেই দৃশ্য দেখেছ। কোনো এক ভাইরাসের আচমকা আক্রমণে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আক্ষরিকভাবেই বদলে গেল জম্বিতে। এরা উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে-চলে বেড়ায় পথেঘাটে। কেবল জীবিত মানুষ সামনে পড়লেই ছুটে আসে কামড়ে দিতে। আর একবার কামড় বসাতে পারলেই সুস্থ মানুষটিও সংক্রমিত হয়ে যায় এবং সে-ও হয়ে ওঠে জম্বি।
বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়েই আকিরা পড়ল এমন একটি জম্বি দলের সামনে। এখন উপায়? কোনোভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে সে ফিরে এল ঘরে। চতুর্দিকে ভয় আর ধ্বংসের উৎসব, কিন্তু তার মধ্যেও আছে একটুখানি আশার আলো, যা দারুণ উৎসাহের জোগান দিল ওর মনে। আকিরা হঠাৎই বুঝতে পারল, ওর আর মন খারাপ করা চাকরিটাতে যেতে হবে না। বিশ্বের এই বিরাট দুর্যোগ ওকে একপ্রকার স্বাধীন করে দিয়েছে, মুক্তি দিয়েছে। ওর মনে পড়ল, জীবনে এমন সব কাজ ও করতে চেয়েছিল, কিংবা চায়, যা করার উপলক্ষ কিংবা সাহস কোনোটাই ইতিপূর্বে জোগাড় করা যায়নি। সেইগুলো করার ব্যাপারে আগ্রহী হলো ও। ডায়েরি নিয়ে বসল একটা তালিকা বানাতে। জম্বি যদি হতেই হয়, তবে অন্তত ১০০ কাজ সে করে যাবে, যা আগে করা হয়ে ওঠেনি। শুরুতেই অবশ্য ১০০টা কাজের কথা ওর মনে এল না। যে কটা ভাবতে পারল, সে কটাই টুকে রাখল তখনকার মতো, বাকিটুকু সময় এলেই লিখবে, এই আশায়। তারপর নেমে পড়ল নিজের স্বপ্ন পূরণে, অবাধ ঘূর্ণিঝড়ের মতো।
আশা করি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ গল্পটির এমন নাম কেন দেওয়া হয়েছে। আকিরার সেই ১০০ কাজের তালিকাটাকেই মূলত বলা হয়েছে ‘বাকেট লিস্ট’। এ ধরনের তালিকা কিন্তু অনেকেই করে থাকে। এই ধরো, কেউ কেউ ভাবে ছাত্রজীবন ফুরানোর আগে অমুক-তমুক কাজ করতে হবে। আবার কেউবা বিয়ের আগে এটা-সেটা করার স্বপ্ন দেখে। অনেকেই ঠিক করে অবসর সময়ে কী কী করবে। লিখিত বা অলিখিত এ-জাতীয় তালিকা মানুষকে কিছুটা আশায় চঞ্চল রাখে। অনেককে আবার হতাশও করে অপূর্ণ স্বপ্নের হিসাব দেখিয়ে। আকিরা অবশ্য হতাশাবাদীদের দলে যাওয়ার একেবারেই পক্ষপাতি নয়, মৃত্যুর আগে বাঁচার অদম্য আগ্রহ তার রয়েছে।
তোমরা যারা ডেথ নোট পড়েছ, কিংবা দেখেছ, তারা জানো দুজন মাঙ্গাকা মিলে তৈরি কাজের কথা। জম ১০০ মাঙ্গাটিও তৈরি করেছেন দুজন মিলে। যেখানে লেখকের কাজ করেছেন মাঙ্গাকা আসোও হারো, আর গল্পের মূল চিত্ররূপ দেওয়ার কাজটি করেছেন মাঙ্গাকা তাকাতা কোতারো। একটু পরিণত বয়স্ক কিশোরদের কিংবা নবযুবকদের জন্য লেখার কারণে এই গল্প মাসিক সানডে জেনে-এক্স পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়। ইতিপূর্বে তোমাদের জাপানের বিখ্যাত ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক শোওনেনে জাম্প-এর কথা বলেছি, সেখানের গল্পগুলো মূলত অপেক্ষাকৃত নবীন কিশোরদের উপযোগী হয়ে থাকে। এই গল্প সেই অর্থে ‘সেইনেন’ সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। শোওনেন আর সেইনেনের পার্থক্যটা আশা করি ওপরের বর্ণনা থেকে কিঞ্চিৎ পরিষ্কার হয়েছে!
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, যাদের জম ১০০ দেখে ভালো লাগবে এবং যারা মোটামুটি কৈশোর পার করে ফেলেছ, তারা পরবর্তী সময়ে আসোও হারোর লেখা আরেকটি গল্পের ওপর তৈরি সিরিজ অ্যালিস ইন বর্ডারল্যান্ডস পড়তে পারো। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স এর ওপর ভিত্তি করে চমৎকার একটি ধারাবাহিকও তৈরি করেছে।
ফেরা যাক গল্পের প্রসঙ্গে। ওপরের ঘটনা তোমাদের যেটুকু বলেছি, তা একেবারে শুরুর কথা। গল্প ডালপালা ছড়িয়ে আরও বহুদূর গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য! তোমরা যে সময়ে বেড়ে উঠছ, তার প্রায় দুই দশক আগেই জম্বি গল্পধারাটি হয়ে উঠেছে চর্বিতচর্বণ; অর্থাৎ অতিশয় ব্যবহৃত একটি গল্পধারা। এ ধারায় কিছু নতুনত্ব বোধ করি এনেছিল রবার্ট কার্কম্যান তাঁর দ্য ওয়াকিং ডেড গল্পের মাধ্যমে। সেখানে সরলরৈখিক মানুষ বনাম জম্বি লড়াইয়ের বাইরে গিয়ে বলা হয়েছে বদলে যাওয়া সমাজের গল্প। তুলে ধরা হয়েছে বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ যেমন হয়ে উঠতে পারে ত্রাণকর্তা, আবার সেই একই মানুষই বিপদকে ছাপিয়ে খোদ হয়ে উঠতে পারে আরও বড় বিপদ। তবে সেই উপাদানও কমিকস, টেলিভিশন ধারাবাহিক, ভিডিও গেমসের হামানদিস্তায় নিয়মিত পিষে পিষে দুই দশক ধরে এমনই মণ্ড বানানো হয়েছে, যা এখন আর একেবারেই নতুন বলে মনে হয় না। সেদিক থেকে জম ১০০ ঠিক কতটা নতুনত্ব আনতে পেরেছে? শতভাগ পেরেছে বলব না। কারণ, শতভাগ নতুন বোধ করি এখন আর সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু জিনিস অবশ্যই এই সিরিজে চমৎকার, যেমন সবকিছু এক পাশে সরিয়ে রেখে জীবনকে উপভোগ করতে চাওয়ার চেষ্টাটা। সেই সঙ্গে ভিন্ন মানুষেরা তাদের ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যের কর্মতালিকা নিয়ে এখানে আছে। কারও ক্ষেত্রে জীবনের ছোট ছোট আনন্দের থেকে জরুরি হচ্ছে নিজেকে এই বিদঘুটে অবস্থায় গুছিয়ে রাখা, বিপদ থেকে বাঁচার ব্যবস্থা জোরদার করা। কেউ চায় মানুষের ওপর প্রভুত্বটুকু ধরে রাখার উদ্দেশ্য সফল করতে। কারও অতীত আবার এতটাই অন্ধকার যে জম্বি হওয়ার আগে সে সমাজের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার মতো অনেকগুলো কাজ করতে ব্যাকুল। এই ধারাবাহিকে প্রতিটি প্রধান চরিত্রের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চিনিয়েছে।
আকিরার পাশাপাশি আরও তিনটি প্রধান চরিত্র হলো কেনিচিরও, শিজুকা ও বিয়াট্রিক্স; এরা সবাই একই সময়ে আসেনি। সিরিজের পর্বগুলোতে এসেছে ধাপে ধাপে। শিজুকা সবার আগে দৃশ্যপটে এলেও আকিরার অভিযানের প্রথম নিঃশর্ত সঙ্গী হয় কেনিচিরও, যাকে আকিরা সংক্ষেপে ‘কেনচো’ নামে ডাকে। মূলত ওরা দুজন কলেজ থেকেই বন্ধু। চাকরির চাপে, আর কিছুটা ঈর্ষার ফলেও বন্ধুর থেকে দূরে সরে গিয়েছিল আকিরা। কিন্তু জম্বি আক্রান্ত সময়ে ওসবের বালাই না থাকায় তার মনে পড়ে যায় বন্ধুর কথা। কেনচোকে বাঁচাতে সে ছুটে যায় মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে। একগাদা জম্বিকে কাবু করে যখন সেই উদ্ধারকাজ শেষ হয়, কেনচো হয়ে যায় তার নিত্যসঙ্গী। একত্রে তারা শুরু করে স্বপ্নপূরণ। কখনো বিরাট ছাদে সুস্বাদু খাবার রেঁধে খায়, কখনোবা টেলিভিশন জোগাড় করতে জীবন বাজি রাখে, কিংবা বিছানায় কাত হয়ে গেম খেলে কাটিয়ে দেয় সারা দিন।
শিজুকা অবশ্য এত সহজে যোগ দেয় না আকিরার দলে। উল্টো আকিরার বেপরোয়া আর স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাব শিজুকাকে সরিয়ে দিয়েছিল দূরে। অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই একত্র হয় ওরা। অন্যদিকে বিয়াট্রিক্স দলে যোগ দেয় সব শেষে। সে জার্মান নাগরিক, জাপানে এসেছিল এখানকার সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে। এসেই গেল ফেঁসে। আকিরার দল যাত্রাপথে আবিষ্কার করে তাকে। তার পর থেকে সে-ও হয়ে যায় দলের একজন। দলের সবাই খাঁটি জাপানের নাগরিক হলেও জাপান সম্পর্কে বিয়াট্রিক্সের জ্ঞানগম্যি ওদের সবার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। যেসব জিনিস সম্পর্কে আকিরারা জানেও না, সেসবের ভূগোল-ইতিহাস গড়গড় বলে যেতে পারে মেয়েটা।
এই চারটি চরিত্রেরই অনেক খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে তোমাদের বিস্তারিত জানাতে পারলে খুশি হতাম। তবে তাতে তোমাদের আবিষ্কারের আনন্দ হারিয়ে যাবে, তাই মুখে কুলুপ আঁটলাম। এর চেয়ে বরং অন্য বিষয় জানাই। যেমন ধরো, জম ১০০-এ রঙের ব্যবহার। এমন চমৎকার রঙিন অ্যানিমে আমি বহুদিন দেখি। ঝকঝকে রং ব্যবহার করা হয়েছে নানান দৃশ্যে, আবার প্রয়োজনে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে রঙের তীক্ষ্ণতা। তবে আমি অন্তত এ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারি, তোমাদের দেখা অন্যতম ঝকঝকে রঙিন অ্যানিমে হতে যাচ্ছে এটা। তা ছাড়া সিরিজে ব্যবহৃত গানগুলোও দারুণ। শুরুর গানটি বিখ্যাত জাপানিজ রক ব্যান্ড কানা-বুনের তৈরি। তাদের তৈরি একাধিক গান ইতিপূর্বে নারুতো ও বরুতো অ্যানিমেতে স্থান পেয়েছে; বিশেষ করে নারুতোতে ব্যবহৃত তাদের ‘সিলুয়েট’ (Silhouette) গানটি আমার বিশেষ প্রিয়। এ ছাড়া জম ১০০-এর পর্ব সমাপ্তির গানটি গেয়েছেন জাপানের পপ গায়িকা শিউই। গান তো তোমরা শুনবেই, সেই সঙ্গে দেখে ফেলতে পারো গানের সঙ্গে থাকা শুরু আর শেষের ভিডিওটুকুও। এগুলো সাধারণত আমি টেনে দিই অ্যানিমে দেখার সময়, কিন্তু এই ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে পারিনি। এমন দুর্দান্ত রঙিন ইফেক্ট এতে ব্যবহার করা হয়েছে যে বারবার দেখেও মুগ্ধতা কমেনি। এ ছাড়া গল্পের হাস্যরসগুলো প্রতিটি চরিত্রের আঙ্গিকে ভিন্ন এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে তা এসেছে। সব মিলিয়ে জম ১০০ পুরো জমাটি আয়োজন।
সবশেষে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলি। আগেই তোমাদের বলেছি, শোওনেন আর সেইনেন দুটি ভিন্ন গোত্রের ধারাবাহিক। সেইনেন গল্পধারায় প্রচুর কিংবদন্তি ভালো ভালো গল্প থাকলেও সাধারণত তোমাদের সেগুলো নিয়ে বলা হয় না, একটু এড়িয়েই যাই। তার একটা কারণ হচ্ছে রিভিউটির মাধ্যমে যেন আরও বেশি পাঠক/দর্শক গল্পটি জানার সুযোগ পান। মূলত সেইনেন একেবারে প্রাপ্তবয়স্কদের উপলক্ষ করে নির্মাণ না হলেও কিছুটা বড় বয়সী দর্শকদের উপযোগী। তোমাদের অনেকেই সেই বয়সে পৌঁছে গেছ, তবু যারা এখনো যাওনি, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আরেকটু ধৈর্য ধরো; কিছুদিন বাদেই নাহয় দেখবে! তখন আরও বেশি উপভোগ করবে। তোমরা জিজ্ঞেস করতে পারো, এত দিন যখন লিখিনি, এখন কেন লিখছি? এর দুটি কারণ আছে। প্রথমত, তোমাদের মধ্যে যারা এসব ধারাবাহিক দেখার উপযুক্ত বয়সে পৌঁছে গেছ; অর্থাৎ যারা মোটামুটি ষোলোতে এসেছ, তারা দেখতে পারবে। আর দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে, তোমাদের থেকেই সাহস সঞ্চয় করেছি; সাম্প্রতিক সময়ে তোমরা কিশোর-নবীনেরা যেভাবে পথে নেমে এসেছ দেশ সংস্কারের নানা প্রকল্প নিজেদের উদ্যোগে সফল করতে, তারপর তোমাদের শিশুতোষ ভেবে কোনো কিছু থেকেই সরিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তা ছাড়া আমি না লিখলেও সেইনেন অ্যানিমে তোমরা বিস্তর দেখেছ ইতিমধ্যেই। ‘অ্যাটাক অন টাইটান’, ‘ফুল মেটাল আলকেমিস্ট ব্রাদারহুড’, ‘কাউবয় বিবপ’, ‘নিওন জেনেসিস এভাঞ্জিলিয়ন’, ‘বার্সাক’, ‘ক্লেমোর’, ‘গোস্ট ইন দ্য শেল’, ‘টোকিও ঘুল’ প্রভৃতি সেইনেন গোত্রের কিছু বিখ্যাত গল্প। তবে একটু লক্ষ করলে দেখবে, এর আগেও একটা সেইনেন গল্পের রিভিউ করেছিলাম, গল্পটা ‘ওয়ান পাঞ্চ ম্যান’, যা তোমাদের যথেষ্ট পছন্দ হয়েছিল। যদি তোমাদের উৎসাহ পাই, তবে আরও সেইনেন শ্রেণির গল্প নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। আশা করি ভালো লাগবে সেসব আয়োজন।